সোমবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

নবীজির (সা.) আগমনে আনন্দিত হওয়া

যুবায়ের আহমাদ

নবীজির (সা.) আগমনে আনন্দিত হওয়া

হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু হওয়া নবুয়তের ধারাবাহিকতার সমাপ্তি ঘটেছে আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে। যে মানুষের জম্মে  পৃথিবী থেকে অজ্ঞতার অন্ধকার দূর হলো, পৃথিবীবাসী শান্তির সন্ধান পেল, নিশ্চয় তার আগমনই মানবতার জন্য পরম প্রাপ্তি। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জম্মে র বছর (সাল) ও বার সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে ধারণা পাওয়া যায়। ইতিহাসবিদরা বলছেন, তাঁর জম্ম  হয়েছিল হাতির ঘটনার বছর। হজরত উসমান ইবনে আফফান (রা.) কুবাস ইবন আশইয়ামকে প্রশ্ন করেন, আপনি বড় নাকি রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বড়? তিনি উত্তরে বলেন, ‘রসুলুল্ল­াহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার থেকে (মর্যাদায়) বড়। তবে আমি তাঁর আগে জম্ম  গ্রহণ করেছি। তিনি হাতির বছরে জম্ম  গ্রহণ করেন।’ তিরমিজি। যে বছর আবরাহা হাতির বাহিনী নিয়ে কাবাঘর ধ্বংসের জন্য এসেছিল সে বছরই রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জম্ম  হয়। ইতিহাসবিদদের মতে তা হয়েছিল ৫৭০ অথবা ৫৭১ খ্রিস্টাব্দে। আর নির্ভরযোগ্য হাদিসের মাধ্যমে জানা যায়, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জম্ম  হয়েছিল সোমবারে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সোমবারে জম্ম  গ্রহণ করেন, সোমবারে মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনার পথে রওনা করেন, সোমবারে মদিনায় পৌঁছান এবং সোমবারেই তিনি হাজরে আসওয়াদ উত্তোলন করেন।’ মুসনাদে আহমাদ। কোরআন-হাদিস ও ইসলামের ইতিহাস থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জম্মে র ক্ষেত্রে শুধু এ বিষয়টি নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে, তা হয়েছিল সোমবারে। এর বাইরে জম্মে র বছরের ব্যাপারে এতটুকু জানা যায় যে, তা হয়েছিল হাতির ঘটনার বছর। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পাঠিয়ে আল্লাহতায়ালা যে নিয়ামত দান করেছেন এর জন্য কি আমরা আনন্দিত হব না? অবশ্যই। আনন্দিত হব, আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করব। কিন্তু এর সবই হতে হবে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেখানো পন্থায়। তাঁকে পাঠানোর জন্য আল্ল­াহর দরবারে শুকরিয়া আদায়ের সুন্নত পদ্ধতি হলো বছরের প্রতি সোমবার রোজা রাখা। হজরত আবু কাতাদা (রা.) বলেন, রসুলুল্ল­াহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে সোমবার দিন রোজা রাখার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এই দিনে আমি জম্ম  গ্রহণ করেছি এবং এই দিনেই আমি নবুয়ত পেয়েছি।’ মুসলিম। তাই তাঁর আগমনে আনন্দ প্রকাশের ক্ষেত্রে তাঁর দেখানো পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত। তাঁর আগমনের শুকরিয়া আদায়ের সর্বোত্তম পদ্ধতি হলো জীবনের সব ক্ষেত্রে তাঁর সুন্নত (পদ্ধতি) মেনে চলা। তাঁর আদর্শ অনুযায়ী জীবন ও সমাজ পরিচালনায় সচেষ্ট হওয়া। আল কোরআনে আল্লাহতায়ালা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণ করতেই বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘(হে রসুল!) তাদের বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস তাহলে আমাকের অনুসরণ কর; তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। আল্ল­াহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু।’ সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৩১।

লেখক : জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কারি ও খতিব, বাইতুশ শফীক মসজিদ, বোর্ডবাজার, গাজীপুর।

সর্বশেষ খবর