শুক্রবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

অমুসলিমদের সঙ্গে রসুলুল্লাহ (সা.)-এর আচরণ

ড. মাওলানা মো. মোরশেদ আলম সালেহী

মহান আল্ল­াহ আল কোরআনে রসুলুল্ল­াহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চারিত্রিক সনদ দিয়ে বলেন, ‘নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।’ সূরা ক্বলম, আয়াত ৮।  হজরত সুফিয়ান ইবনে সালিম (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্ল­াহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মনে রেখো যদি কোনো মুসলমান অমুসলিম নাগরিকের ওপর নিপীড়ন চালায়, তার অধিকার খর্ব করে, তার কোনো বস্তু জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়, তাহলে কিয়ামতের দিন আমি আল্লাহর আদালতে তার বিরুদ্ধে অমুসলিম নাগরিকদের পক্ষাবলম্বন করব।’ আবু দাউদ।

‘একবার তায়ি গোত্রের লোকেরা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল, এতে তাদের কিছুসংখ্যক লোক বন্দী হয়ে এসেছিল। তার মধ্যে আরবের প্রসিদ্ধ দাতা হাতেমের এক মেয়েও ছিল। যখন তিনি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বললেন তিনি হাতেম তাইয়ের মেয়ে, তখন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত আদব ও সম্মানের সঙ্গে ব্যবহার করলেন এবং তাঁর সুপারিশক্রমে তার গোত্রের শাস্তি ক্ষমা করে দিলেন।’ সিরাতে হালবিয়া,

তৃতীয় খন্ড।  হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের কোনো বাহিনী প্রেরণ করলে বলতেন, তোমরা গির্জার অধিবাসীদের হত্যা করবে না। ইবনে আবিশাইবা, মুসান্নাফ। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন, ‘যে মুসলিম কর্তৃক নিরাপত্তাপ্রাপ্ত কোনো অমুসলিমকে হত্যা করবে, সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ তার ঘ্রাণ পাওয়া যায় ৪০ বছরের পথের দূরত্ব থেকে।’ বুখারি। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও  বলছেন, ‘যে ব্যক্তি চুক্তিতে থাকা কোনো অমুসলিমকে অসময়ে  হত্যা করবে আল্ল­াহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন।’ আবু দাউদ। একদল ইহুদি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যু কামনা করলেও তিনি তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করেছেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, একদা একদল ইহুদি রসুলুল্লাহর কাছে আগমন করল এবং বলল, আপনার ওপর মৃত্যু হোক। উত্তরে রসুলুল্লাহ বললেন, তোমাদের ওপরও। অতঃপর আয়েশা (রা.) বললেন, তোমাদের মৃত্যু হোক, আল্লাহ তোমাদের অভিশপ্ত করুন এবং তোমাদের ওপর তাঁর গজব পতিত হোক। আয়েশা (রা.)-এর কথা শুনে রসুলুল্ল­াহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আয়েশা! থামো, তোমার কোমলতা অবলম্বন করা উচিত, তুমি কঠোরতা অবলম্বন, অশোভন উক্তি করা থেকে বেঁচে থাকো। হজরত আয়েশা (রা.) বললেন, আপনি কি শোনেননি তারা কী বলেছে? রসুলুল্ল­াহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি শোনোনি আমি কী বলেছি? আমি তাদের কথাকে তাদের প্রতি ফিরিয়ে দিয়েছি। বুখারি।

শরিয়তের সীমারেখায় থেকে সুন্দর আচরণের মাধ্যমে যেমন অমুসলিমদের ইসলামের দিকে দাওয়াত দেওয়ার ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়, তেমনি এ আচরণটুকুও অনেক সময় দাওয়াতের ভূমিকা পালন করে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এমন মহানুভব আচরণে মুগ্ধ হয়ে অনেক অমুসলিম ইসলাম কবুল করেছেন এবং পরবর্তীতে সাহাবায়ে কিরামের যুগ থেকে শুরু করে যারাই ইসলামের সুন্দর আচরণগুলো নিজেদের মাঝে লালন করে গেছেন, তাদের আচরণই নীরবে অমুসলিমদের ইসলামের দিকে আহ্বান জানিয়েছে। অনেক অমুসলিম এতে যথেষ্ট প্রভাবিত হয়েছে এবং আশ্রয় নিয়েছে ইসলামের শীতল ছায়ায়। আল্লাহ আমাদের রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন।

লেখক : খতিব, শাহজাদপুর জামে মসজিদ, গুলশান, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর