সোমবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিস্ময়কর বাংলাদেশ

এ অর্জন যে কোনো মূল্যে ধরে রাখতে হবে

বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার বিস্ময়। এশিয়া এমনকি বিশ্ব পরিসরেও এ অভিধাটি প্রযোজ্য। মুক্তিযুদ্ধে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশে যে তাণ্ডব চালায় তার কোনো তুলনা নেই। ভিয়েতনামে মার্কিন হানাদাররা বছরের পর বছর ধরে বিমান হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালালেও মাত্র ৯ মাসে পাকিস্তানি সেনাদের তাণ্ডব তার চেয়েও ভয়াবহ। এক কোটি মানুষের দেশত্যাগ, ৩০ লাখ মানুষের প্রাণহানি, দুই থেকে তিন লাখ নারীর সম্ভ্রমহানি ছিল পাকিস্তানি বর্বরতার উদাহরণ। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের কয়েক লাখ বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায় পাকিস্তানি সেনা ও তাদের এ দেশীয় সহযোগীরা। স্বাধীনতার পর মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব হেনরি কিসিঞ্জার অবজ্ঞা করে বাংলাদেশকে অভিহিত করেন ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’। স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭২ সালে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে প্রথম যে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে সেখানে বলা হয়, ‘সবচেয়ে ভালো পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশ একটি নাজুক ও জটিল উন্নয়ন সমস্যার নাম।’ নরওয়ের অর্থনীতিবিদ জাস্ট ফ্যালান্ড এবং ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ জে আর পারকিনশন মন্তব্য করেছিলেন, ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, যদি এই দেশটি উন্নতি করতে পারে, তাহলে নিঃসন্দেহে বলা যায়, পৃথিবীর যে কোনো দেশ উন্নতি করতে পারবে।’ স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ গড়ার সংগ্রাম শুরু হয়। বঙ্গবন্ধুর আমলে ‘চারদিকের নেই নেই’র সেই কঠিন দিনগুলোতেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল সাত শতাংশেরও বেশি। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থামাতেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রত্যক্ষভাবে ক্ষমতা ছিল খুনি চক্রের নিয়ন্ত্রণে। ১৯৯১ সালে দেশে দৃশ্যত গণতান্ত্রিক শাসন চালু হলেও ১৯৯৫ পর্যন্ত তাদের প্রভাবই বজায় থাকে। ১৯৯৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ক্ষমতা লাভের মাধ্যমে শুরু হয় উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলা। যমুনায় বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মিত হয় সে আমলে। তারপর ২০০১ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত কল্পকথার ভূতের মতো পেছনে চলা। ২০০৯ সালে সে বৃত্ত থেকে মুক্তি পায় বাংলাদেশ। তার পরের ইতিহাস শুধুই এগিয়ে চলার। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, একের পর এক অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া শুধু নয়, বিশ্বের অন্যতম উচ্চ প্রবৃদ্ধির দেশে পরিণত হয়েছে। অর্থনীতির প্রায় সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে।  মানবসম্পদ উন্নয়নে ভারতও বহু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে। স্বাধীনতার এ অর্জন যে কোনো মূল্যে ধরে রাখতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর