সোমবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতির মন্তব্য

মুখোশ ছিঁড়ে বেরিয়ে এসেছে আসল চেহারা

কয়লা ধুলে ময়লা যায় না প্রবচনের সার্থক প্রতিবিম্ব হয়ে উঠেছে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার। সে দেশের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ত রাখাইন রাজ্যের ৪৪তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে সংবাদ মাধ্যমে লেখা এক নিবন্ধে দাবি করেছেন, রাখাইনের মানুষের জন্য ২০১৮ সালটি ছিল সবচেয়ে মঙ্গলজনক। যে কোনো দেশের রাষ্ট্রীয় নেতা তার দেশের কোনো রাজ্যের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ভালো ভালো কথা বলবেন, এতে দৃশ্যত আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু রাখাইন সম্পর্কে এমন এক সময় প্রশস্তিমূলক কথা বলা হলো যখন সে রাজ্যের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায় জাতিগত নিধনের শিকার। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও রাখাইন দুর্বৃত্তদের যৌথ অভিযানে অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে রাজ্যটি ছেড়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম প্রতিবেশী রাষ্ট্রে আশ্রয় নিয়েছে। ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ‘জাতিগত নিধন’ অভিযান শুরু করে। পরিণতিতে প্রাণ বাঁচাতে ৭ লাখ ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। সেনা সদস্যদের ধর্ষণের শিকার হয় রোহিঙ্গা নারী। জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা নির্যাতনকে ‘গণহত্যার’ সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। দেশ ছেড়ে পালাতে না পারা এক লাখের বেশি রোহিঙ্গা রাখাইনের বিভিন্ন অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। রাজ্যের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে লেখা নিবন্ধে উইন মিন্ত বলেন, কোনো রকমের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই ‘২০১৮ সাল রাখাইনের জন্য মঙ্গলজনক একটি সময় বয়ে এনেছে।’ মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটায় ২০১৮ সালকে মঙ্গলজনক সময় বলে অভিহিত করলেও তার বক্তব্যকে বড় ধরনের তামাশা বললে কম বলা হবে। কারণ রোহিঙ্গারা রাখাইন রাজ্যের অবিভাজ্য অংশ। শত শত বছর ধরে তারা সেখানে বসবাস করে আসছে। রাখাইনে মিয়ানমার বা বর্মীদের আগমন ঘটেছিল আগ্রাসনকারী হিসেবে, পক্ষান্তরে রোহিঙ্গাদের পূর্ব পুরুষরা রাখাইনে গিয়েছিল বর্মী আগ্রাসনের হাত থেকে রাখাইনের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য।  রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধনের সময়কে মঙ্গলজনক বলে অভিহিত করে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট নিজেদের মুখ থেকে ভদ্রতার মুখোশ ছিঁড়ে যেভাবে স্বরূপে আবির্ভাব হয়েছে  তা এক কথায় দুর্ভাগ্যজনক।

সর্বশেষ খবর