সোমবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ইসলামের দৃষ্টিতে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়

মাওলানা মুহাম্মদ সাহেব আলী

‘দেশকে ভালোবাসা ইমানের অংশ’ এটি একটি আরবি প্রবচন। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে অর্জিত হয় মুক্তিযুদ্ধের বিজয়। প্রতিটি বিজয় মহান আল্লাহর ইচ্ছায় অর্জিত হয়। অন্যায়কারীদের সঙ্গে ন্যায়ের পক্ষের যুদ্ধে সর্বদাই ন্যায়ের জয় হয়। অন্যায়কারীদের পরাজয় হয়। পবিত্র কোরআনে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মক্কা বিজয় সম্পর্কে ইরশাদ করা হয়েছে : ‘নিশ্চয় আমি তোমাকে সুস্পষ্ট বিজয় দান করেছি।’ ৪৮:১।

হুদায়বিয়ার সন্ধির পর উপরোক্ত আয়াতটি নাজিল হয়। মুমিনদের অনেকেই এই সন্ধির যথার্থতা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন। আল্লাহ সে সংশয় নিরসনে বিজয়ের আগাম বার্তা দেন। ওই আয়াতে স্পষ্ট করা হয়েছে আল্লাহই বিজয় দানের মালিক। বিজয় অর্জনে তার রহমতের ওপর ভরসা করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে এক পক্ষে ছিল বাংলাদেশের মজলুম জনগণ। আরেক পক্ষে ছিল জবরদখলকারী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তাদের সহযোগী হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে এ দেশীয় ঘাতক-দালালদের নিয়ে গঠিত বিভিন্ন বাহিনী, যারা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষাবলম্বনকারী মানুষের ওপর নির্যাতন চালাত। তাদের হত্যা করত। সম্পদ লুটপাট ও সম্ভ্রমহানি করত। জ্বালিয়ে দিত সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি ও সম্পদ। ধর্মের নামে তারা এ দেশের মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। পবিত্র কোরআনে ভণ্ড প্রতারকদের সম্পর্কে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘আর কিছু লোক রয়েছে যারা বলে আমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ইমান এনেছি, অথচ আদৌ তারা ইমানদার নয়।’ (সূরা বাকারা : ৮)।

ইসলামে এক মুসলমান অন্য মুসলমানের রক্ত ঝরাবে এমন সংঘাতকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। যারা সমাজ ও রাষ্ট্রে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বা অশান্তি সৃষ্টি করে তাদের ধিক্কার দিয়ে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘আর যখন তাদের (কপট বিশ্বাসীদের) বলা হয় যে দুনিয়ার বুকে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি কর না। তখন তারা বলে, আমরা তো মীমাংসার পথ অবলম্বন করছি। মনে রেখ তারাই হাঙ্গামা সৃষ্টিকারী। কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করে না।’ (সূরা বাকারা : ১১-১২)।

ইসলাম যুদ্ধবিগ্রহের সময়ও নিরপরাধ শিশু ও নারীকে হত্যা, তাদের বাড়িঘর বৃক্ষসম্পদ জ্বালিয়ে দেওয়া অনুমোদন করে না। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসেও এ সম্পর্কে নির্দেশনা রয়েছে।  পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের এ-দেশীয় সহযোগীরা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে ইসলামী বিধান লঙ্ঘন করে সাধারণ মানুষকে হত্যা, নারীর সম্ভ্রম লুট এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার অপরাধে জড়িত ছিল বলেই আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের পরাজয় এবং মজলুমদের প্রতিনিধিত্বকারী মুক্তিবাহিনীর বিজয় নিশ্চিত হয়।

লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর