বৃহস্পতিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

অটোমান সুলতানদের ‘গডমাদার’

কোসেম সুলতান ছিলেন তুরস্কের অটোমান সুলতানদের ‘গডমাদার’। জীবিতকালে অটোমান সাম্রাজ্যে ছয়জন সুলতান সিংহাসনে বসেন। কিন্তু তার ক্ষমতা ছিল সুলতানের আয়ত্তের বাইরে।

আনুমানিক ১৫৮৯ সালে তিনোস দ্বীপে কোসেম সুলতান জম্ম গ্রহণ করেন।

কিছু ইতিহাসবিদ মনে করেন, কোসেম ছিলেন গ্রিক বংশোদ্ভূত তিনোস দ্বীপের (পূর্বনাম আনাসতাসিয়া) একজন ধর্মযাজকের মেয়ে। কিন্তু এ সূত্রটিকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করেন না অনেক ইতিহাসবিদ।

কাভিদ বাইসুন নামক একজন ইতিহাসবিদ বলেন, মাত্র ১৫ বছর বয়সে তাকে বসনিয়ার কর্তৃপক্ষ দাসী হিসবে ইস্তাম্বুলে এনে সুলতান প্রথম আহমদের হারেমে পাঠান। পরে মুসলিম হওয়ার পর তার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় মাহপেয়কার যার অর্থ চাদের মতো মুখ যার এবং তারপর সুলতান প্রথম আহমদ তার নাম রাখেন কোসেম।

অটোমান সুলতানদের হারেম পরিচালনার দায়িত্ব থাকত সুলতানাদের হাতে এবং হারেম পরিচালনার দায়িত্ব বংশানুক্রমে পরিবর্তিত হতো। কোসেম সুলতান আহমদের খাস বাঁদি হওয়ার পর থেকে তার জীবন রাতারাতি বদলে যেতে থাকে। কোসেম খাস বাঁদি থাকার সময় হারেমের কর্তৃত্ব ছিল সুলতানের দাদি সাফিয়ে সুলতানার হাতে। কিন্তু সাফিয়ে সুলতানা ১৬০৪ সালে তার কর্তৃত্ব হারান এবং তিনি তার বাকি জীবন অন্য একটি প্রাসাদে কাটান। একই বছর সুলতান আহমদের মা ও ভ্যালিদে হান্দান সুলতানার মৃত্যুর পর কোসেমের সুযোগ আসে হারেমের কর্তৃত্ব পাওয়ার। সুলতান আহমদ তাকে বিয়ে করলে তিনি হাসেকি সুলতানা হিসেবে আখ্যা পান। কোসেম সুলতানা অনেক সন্তান জম্ম  দেন এবং হারেমের কর্তৃত্বও ছিল তার হাতে। সুলতান প্রথম আহমদ মাত্র ২৭ বছর বয়সে মারা যাওয়ার কারণে কোসেম সুলতানা তোপকাপি প্রাসাদে তার অবস্থান হারিয়ে ফেলেন এবং তাকে তোপকাপি প্রাসাদ থেকে ইস্কি সারাহ প্রাসাদে থাকতে দেওয়া হয়। সুলতান প্রথম আহমদ মারা যাওয়ার পর সিংহাসনে প্রথমবারের মতো সুলতানের ছেলে না বসে তার ভাই প্রথম মুস্তফা বসেন যিনি ছিলেন একজন পাগল প্রকৃতির মানুষ। খুব দ্রুত মুস্তফাকে সরিয়ে সুলতান বানানো হয় কোসেম সুলতানার সৎ ছেলে দ্বিতীয় ওসমানকে। যেহেতু কোসেম সুলতানার ছেলে সিংহাসনে বসতে পারেননি, তাই অটোমান রাজবংশের রীতি অনুযায়ী তাকে অন্য কোনো জৌলুসহীন প্রাসাদে থাকতে হবে। কিন্তু কোসেম সুলতানাকে খুব বেশিদিন পুরাতন বা ইস্কি প্রাসাদে থাকতে হয়নি। তার ছেলে চতুর্থ মুরাদ সিংহাসনে আরোহণ করার পর তিনি পুনরায় হাসেকি সুলতানা পদবি ব্যবহার করতেন এবং তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাকে ১০০০ আর্চে করে খরচ দেওয়া হতো। কোসেম সুলতানার মৃত্যুর পর হাসেকি সুলতানা পদবিটি বিলুপ্ত হয়ে যায়।

            জাফর খান

সর্বশেষ খবর