সোমবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

জেনে বুঝে দেশের স্বার্থে ভোট দিন

মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.)

জেনে বুঝে দেশের স্বার্থে ভোট দিন

৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। কে কোথায় ভোট দিবেন সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার এটাই গুরুত্বপূর্ণ সময়। সব দলের নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশিত হয়েছে। প্রত্যেক প্রার্থী এখন মানুষের দ্বারে দ্বারে এবং হাটে-মাঠে ভোট প্রার্থনা করছেন। ভোট একজন নাগরিকের পবিত্রতম আমানত এবং নাগরিক অধিকার প্রকাশের অন্যতম প্রধান অস্ত্র। একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে নিজের বিশ্বাস ও বিবেচনা যেন কারও কাছে বিক্রি না হয় তার জন্য সদা অতন্ত্র প্রহরীর মতো সতর্ক থাকা প্রয়োজন। আসন্ন নির্বাচনে দুটি পক্ষের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে, এর মধ্যে একদল জয়ী হয়ে সরকার গঠন এবং দেশ পরিচালনা করবে। তাই দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে অবশ্যই আমরা সবাই স্মরণ করব সেই বিখ্যাত উক্তি, ব্যক্তির চাইতে পরিবার, পরিবারের চাইতে সমাজ এবং সমাজের চাইতে দেশ বড়। সুতরাং দেশ পরিচালনার দায়িত্ব আমরা কোন পক্ষ বা দলকে দেব সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুই পক্ষের প্রথম পক্ষে রয়েছে আওয়ামী লীগসহ মহাজোট, যার নেতৃত্বে রয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। দ্বিতীয় পক্ষে রয়েছে মূলত জামায়াত-বিএনপি এবং তার সঙ্গে যোগ হয়েছে কথিত ঐক্যফ্রন্ট। এই সম্মিলিত জোটের নেতৃত্ব এখন কে দিচ্ছেন তা স্পষ্ট নয়। ড. কামাল হোসেনকে আপাতত সামনে দেখা গেলেও তিনি নিজে নির্বাচন করছেন না এবং বলে দিয়েছেন আগামীতে তিনি কোনো পদ-পদবি নেবেন না। প্রথমপক্ষ অর্থাৎ আওয়ামী লীগ গত ১০ বছর ক্ষমতায় আছে এবং এর আগে ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আরেকবার ক্ষমতায় ছিল। আর দ্বিতীয়পক্ষ অর্থাৎ জামায়াত-বিএনপিও দুই পূর্ণ মেয়াদ এবং আরেক মেয়াদের স্বল্প কিছুদিন ক্ষমতায় ছিল। একটা স্বতঃসিদ্ধ কথা আছে, কোনো ব্যক্তি, প্রার্থী ও দল শতভাগ শুদ্ধ নয়, শতভাগ সফলও নয় এবং কেউ সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। জাতীয় নির্বাচনের ভোট প্রদানে সিদ্ধান্তে ব্যক্তি ও প্রার্থীর চেয়ে দলীয় বিবেচনাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ কথাটিও আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন। তাই আমরা যদি সঠিক দল বা পক্ষকে ভোট দিতে চাই তা হলে অবশ্যই দুই পক্ষের পারফরম্যান্স ও অবস্থানের তুলনামূলক বিচার করতে হবে। আমরা দুই পক্ষকেই রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখেছি। তাই আজকের লেখায় বড় বড় কয়েকটি খাত ও সেক্টরের তুলনামূলক একটি আলোচনা সংক্ষিপ্তভাবে আলাদা আলাদা করে তুলে ধরব।

রাষ্ট্রের মৌলিক আদর্শ : অন্য যে কোনো উপাদান বা বিবেচনার চেয়ে এ বিষয়টি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ বলা যায়, সব কিছুর মাথা। মাথা ঠিক থাকলে যেমন সব ঠিক থাকে, তেমনি রাষ্ট্রের মৌলিক আদর্শ সঠিক থাকলে এবং তার প্রয়োগ যথাযথ হলে অন্য সবকিছুও ঠিক হতে বাধ্য। কারণ, মৌলিক আদর্শ থেকে রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি, আইন ইত্যাদি সবকিছু তৈরি হয় এবং তার মধ্য দিয়েই তৈরি হয় সমগ্র জাতির মানসতন্ত্র বা মানসকাঠামো। এভাবে মানুষ এবং মানুষের মনোজগৎ যদি ঠিক হয় তাহলে তো অন্য কিছুই বেঠিক হতে পারে না। একটা জাতির পরিপূর্ণ মানসকাঠামো তৈরি হতে দীর্ঘ সময় লাগে, কয়েক জেনারেশন লেগে যায়। বাংলাদেশের মানুষের আকাক্সিক্ষত রাষ্ট্রের মৌলিক আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয় আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে, যার মূল কথা গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং বাঙালি সংস্কৃতিপ্রসূত বাঙালি জাতীয়তাবাদ। ১৯৭৫ সালের পর এই আদর্শের ধারাবাহিকতা রক্ষিত হয়নি বিধায় এর সুফল কখনো সঠিকভাবে প্রতিফলিত হতে পারেনি। এই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের ওপর ভিত্তি করে গত ১০ বছর আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে এবং তার ফল দেশের মানুষসহ সারা বিশ্ব দেখেছে। অন্যদিকে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের অন্যতম আরেকপক্ষ জামায়াত-বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের সম্পূর্ণ বিপরীত ধর্মাশ্রয়ী সাম্প্রদায়িক মৌলিক আদর্শে বিশ্বাসী, যার হুবহু সাদৃশ্য রয়েছে পাকিস্তানের সঙ্গে অর্থাৎ ’৭১-এ পরিত্যক্ত পাকিস্তানি মতাদর্শকেই জামায়াত-বিএনপি মৌলিক আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছে। এই আদর্শ বাংলাদেশে চলতে পারে না এটা জানে বলেই বিএনপিও মুখে বলতে থাকে তারাও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল। এই মুখের কথা তাদের ছদ্মবেশ। কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন কেউ রাখতে পারেন। কিন্তু তাতে ছেলে দৃষ্টি ফিরে পায় না। ১৯৭৮ সালে জন্মের পর থেকে এ পর্যন্ত এবং বিশেষ করে ২০০১-২০০৬ মেয়াদে জামায়াত-বিএনপির কর্মকাণ্ডই স্পষ্ট করে দেয় তারা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের সম্পূর্ণ বিরোধী। নামে নয়, কর্মে সব কিছুর পরিচয় মিলে। মুক্তিযোদ্ধা আর মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। কামাল হোসেন ও তার কয়েকজন সঙ্গীর পূর্বেও            দু-চারজন মুক্তিযোদ্ধা বিএনপিতে ছিল।

নেতৃত্ব বা লিডারশিপ : দল ও দেশের টপ নেতৃত্ব বা লিডারের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। রাষ্ট্রের একজন টপ নেতার ভূমিকায় একটা দেশ শেষ হয়ে যেতে পারে, আবার অর্জন ও উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরেও ওঠে যেতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নেভিল চ্যাম্বারলিন। তার দুর্বল নেতৃত্বের কারণে যুদ্ধের প্রথম ধাক্কায় ব্রিটিশ বাহিনী পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে এবং ব্রিটেনের খোদ মূল ভূখণ্ড জার্মান বাহিনীর করতলে চলে যাবে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তখন ব্রিটিশ জাতি নেতা পরিবর্তন করে এবং উইনস্টন চার্চিলকে প্রধানমন্ত্রী বানান। তারপর থেকে যুদ্ধের মোড় ঘুরে ব্রিটেনের পক্ষে চলে আসে। চূড়ান্তভাবে জার্মান বাহিনী পরাজিত হয়। গ্রেটেস্ট লিডার অব দ্য ওয়ার্ল্ড খেতাব পান চার্চিল। আজ জামায়াত-বিএনপি ঐক্যফ্রন্ট মিলে বলতে পারছে না তারা জয়ী হলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন এবং আগামী পাঁচ বছর দেশের নেতৃত্ব কে দেবেন। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি অর্থাৎ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে রয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা, যার সফলতা ও গ্রহণযোগ্যতার স্বীকৃতি এখন বিশ্বব্যাপী। একপক্ষের নেতার নাম অজানা, আরেকপক্ষের নেতা বিশ্বনন্দিত রাষ্ট্রনায়ক।

আইনশৃঙ্খলা, সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমন : জামায়াত-শিবির, বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট জোটবদ্ধ এবং তাদের প্রতীক ধানের শীষ। জামায়াত-শিবির যে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন তা এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। এরা যে যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যাকারী এবং এদেশে পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্বকারী তা এখন নতুন করে তথ্য-উপাত্ত এবং উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর প্রয়োজন নেই। ২০০১-২০০৬ মেয়াদে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়ানক অবনতি এবং জঙ্গি-সন্ত্রাসের চরম সহিংস উত্থান ও বিস্তারের কথাও সবাই জানেন। আওয়ামী লীগের চরম শত্রুও বলতে পারবে না যে, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্টে ৬৩ জেলার ৫২৫ স্থানে প্রায় একই সময়ে বোমার বিস্ফোরণ এবং অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ ও মেধাবী রাজনীতিক শামস কিবরিয়ার হত্যাকাণ্ডের মতো একটি ঘটনাও গত ১০ বছরে ঘটেছে। কানাডার একটি ফেডারেল আদালত বিএনপিকেও সন্ত্রাসী দল হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকার জঙ্গি-সন্ত্রাস দমনে রোল মডেল দৃষ্টান্ত স্থাপনের স্বীকৃতি পেয়েছে বিশ্বব্যাপী।

গণতন্ত্র ও সুশাসন : উন্নত বিশ্বের স্ট্যান্ডার্ড ও রেটিং অনুসারে এই দুটি উপাদানের ঘাটতি আগেও ছিল এবং এখনো বাংলাদেশে রয়েছে। তবে বিরাজমান বাস্তবতার নিরিখে এবং বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলের চেয়ে গণতন্ত্রের মান ভালো ছিল বলেই গত ১০ বছরে বাংলাদেশের সর্বক্ষেত্রে ও সেক্টরে পাঁচ থেকে ছয়গুণ প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। গণতন্ত্র না থাকলে তো এটা সম্ভব হতো না। জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে যখন কেউ গণতন্ত্রের কথা বলে তখন হাস্যকর ও প্রহসনমূলক মনে হয়। জামায়াতের মূল আদর্শ ওহাবিতন্ত্রের কথাই হলো গণতন্ত্র হারাম এবং কুফরি মতবাদ। ২০০১-২০০৬ মেয়াদের শাসন পর্যালোচনা করলেই বোঝা যায় জামায়াত-বিএনপি ও তাদের সঙ্গীদের গণতন্ত্রের আওয়াজ ফাঁকা বুলি ছাড়া অন্য কিছু নয়। তারপর এই ১৪ ডিসেম্বর রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ড. কামাল হোসেনের আচরণই বলে দেয় তারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও সামান্য ভিন্ন মত সহ্য করতে পারে না, বরং ভিন্ন মত পোষণকারীকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। সুশাসনের জায়গায়ও আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি পিছিয়ে আছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার বিচার নিয়ে বিএনপি যে তামাশা করেছে তা তো আর বলে শেষ করা যাবে না। একটা চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের বিচারও বিএনপি করেনি। অন্যদিকে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের মামলাসহ আরও কয়েকটি বড় চাঞ্চল্যকর মামলার বিচার অত্যন্ত দ্রুতগতিতে সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার সম্পন্ন করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করেছে।

দুর্নীতি দমন : এই ইস্যুতে দুই বড় পক্ষের কেউ-ই জনগণের অনুকূল ধারণার মধ্যে নেই। জনপ্রত্যাশা পূরণ হয়নি। এই ক্ষেত্রে জনপ্রত্যাশা পূরণের প্রধান বাধা কলুষিত রাজনীতি। টাকা যতদিন রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করবে ততদিন রাষ্ট্র থেকে দুর্নীতি দূর করা যাবে না। জিয়াউর রহমানের মানি ইজ নো প্রবলেমের সূত্র ধরে রাজনীতিতে যে লুটপাটতন্ত্রের জন্ম হয়েছে তার থেকে মুক্ত হতে হলে রাজনীতিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষের অবসান ঘটিয়ে এমন জায়গায় আনতে হবে যেখানে সরকারি দল এবং বিরোধী দল সবাই হবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের। তবে এই সময়ে ভোট প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণে তুলনামূলক চিত্রটিকে বিবেচনায় নিতে হবে। এতিমের তহবিল তছরুপের অভিযোগে দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে খালেদা জিয়া এখন জেলে আছেন। দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বিদেশে পলাতক রয়েছেন বিএনপির সুপ্রিম লিডার তারেক রহমান। ২০০৮ সালে ঢাকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত জেমস মরিয়াটি ওয়াশিংটনের স্টেট ডেপার্টমেন্টে এক গোপন বার্তা  পাঠিয়েছিলেন, এই মর্মে যে, Kleptocracy বা চৌর্যবৃত্তির চরম উদাহরণ তারেক রহমান, তাকে যেন যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় দেওয়া না হয়। তাছাড়া দেশত্যাগের পর তারেক রহমান বিদেশে ১০ বছর বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন, যা দেখে অনেকে বলছেন, এতটা বিলাসবহুল জীবন মিসরের রাজা ফারুক বা ইরানের শাহাও করতে পারেননি।

দুই পক্ষের শাসনামলের সফলতা-ব্যর্থতা : এত সময় ধরে ওপরে যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করলাম তার প্রাসঙ্গিকতা এবং সুফল-কুফল বোঝার জন্য সুনির্দিষ্টভাবে দুই পক্ষের সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা এবং অর্জন-বিসর্জনের একটা তুলনামূলক আলোচনা আবশ্যক। ইংরেজিতে একটা কথা আছে End Justify the means সবধহং, অর্থাৎ অর্জন বা ফলই বলবে আপনার পন্থা সঠিক কি সঠিক না। বিএনপির ২০০১-২০০৬ মেয়াদের শাসনামলে বিদ্যুৎ খাদ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর প্রবৃদ্ধি ছিল নেতিবাচক, অর্থাৎ তার অব্যবহিত আগের আওয়ামী লীগ সরকার যেখানে রেখে যায় সেখান থেকে অবনতি ঘটে। তখন উত্তরবঙ্গের মঙ্গাকবলিত মানুষের হাহাকার ছিল নিত্য বছরের ঘটনা। গত কয়েক বছর ধরে মঙ্গা নামক শব্দটি আর শোনা যায় না। আওয়ামী লীগ সরকার নিশ্চিত করতে পেরেছে দেশের কোথাও এখন আর খাদ্যের অভাব নেই। আওয়ামী লীগের ঘোর বিরোধী পক্ষও আজ স্বীকার করছেন গত ১০ বছরে রাষ্ট্রের জনকল্যাণ সম্পর্কিত সব ক্ষেত্রে অভাবনীয় বিস্ময়কর উন্নতি ঘটেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রের প্রবৃদ্ধি পাঁচ থেকে ছয়গুণ। এ জন্যই বিশ্বব্যাংক জাতিসংঘসহ বিশ্বের বড় বড় গবেষণা প্রতিষ্ঠান বলছে, উন্নয়নের রোল মডেল এখন বাংলাদেশ। আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার পিতৃদেশ কেনিয়ার সরকারকে উপদেশ দিয়েছেন, উন্নয়নের ম্যাজিক বুঝতে হলে বাংলাদেশের কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়া যায়। ২০১৬ সালে বিশ্ব দারিদ্র্যবিমোচন দিবস পালন করার জন্য বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে এসে বলেছিলেন, দারিদ্র্যবিমোচন দিবস পালন করার জন্য তিনি ঢাকায় এসেছেন তার কারণ বাংলাদেশ দারিদ্র্যবিমোচনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

উপসংহার : অত্যন্ত সংক্ষিপ্তভাবে মোটাদাগে মৌলিক কয়েকটি খাতের তুলনামূলক একটি চিত্র ওপরে তুলে ধরলাম। তথ্য-উপাত্ত সংবলিত যুক্তির দ্বারাই কেবল আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি। গত ১০ বছরে যে সত্যটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা হলো এই সময়ে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের ওপর দেশ পরিচালিত হয়েছে বলেই এতসব বড় বড় জাতীয় অর্জন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাতে দৃষ্টান্তমূলক উন্নতি ঘটেছে। এই উন্নতির ধারা অব্যাহত রাখতে হলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি অর্থাৎ আওয়ামী লীগ ও তার নেত্রী শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প এই সময়ে নেই। তাই আপনার ভোট আপনি দেবেন এবং তার সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে নিশ্চিত করবেন মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী পরিত্যক্ত পাকিস্তানপন্থি রাজনীতির কবল থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হবে।

লেখক : রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

[email protected]

সর্বশেষ খবর