সোমবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

দেশবাসী সঠিক সিদ্ধান্তই নেবে

এ এইচ খান রতন

দেশবাসী সঠিক সিদ্ধান্তই নেবে

সাম্প্রতিককালে কিছু ব্যর্থ, জনবিচ্ছিন্ন, বর্ণচোরা রাজনীতিবিদ দেশ গেল, গণতন্ত্র গেল, ইত্যাদি স্লোগান তুলে দেশ ও জনগণের প্রতি অতিদরদি হয়ে উঠছে। কিন্তু, তথাকথিত এই দরদিদের আসল উদ্দেশ্য নিয়ে জনমনে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এর সঙ্গত কারণও রয়েছে; কেননা, কেবল নির্বাচন এলেই নীতিবাক্যের ফুলঝুরি নিয়ে তারা জনগণের দুয়ারে হাজির হন। তথাপি এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন, বলা যায় ঘরের ছেলেরা ঘরে ফিরে গেছে সব। কাজেই জাতীয়তাবাদ আর মুজিব কোটের অন্তরালে ষড়যন্ত্রের কী ছক আঁকা হচ্ছে তা বলা মুশকিল। ইতিহাস থেকে গ্রহণ করা শিক্ষা মানবজাতিকে বাস্তবজীবন ও কর্ম সম্পর্কে যতটা জ্ঞানসমৃদ্ধ করে, একাডেমিক আর কোনো শিক্ষা এর সমতুল্য নয়। রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, সব ক্ষেত্রে ইতিহাস সব্যসাচীর মতো অগ্রসরমাণ। কিন্তু এ অফুরন্ত জ্ঞানভাণ্ডার থেকে মানুষ জ্ঞান আহরণে বিমুখ।

উপরের কথাগুলো, যাদের উদ্দেশ্য করে বলা, তারা আমাদের দেশের একশ্রেণির রাজনীতিবিদ। ঐতিহাসিক বহু রাজনৈতিক ঘটনার সাক্ষী ও অভিজ্ঞতা রাজনৈতিক জীবনে প্রত্যক্ষ করার পরও বাস্তবতা থেকে শিক্ষা গ্রহণে তারা অনিচ্ছুক। নিষ্ফল, হীন রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করার জন্য ভ্রান্ত ও কল্পনাবিলাসী রাজনৈতিক যুক্তির ওপর তারা স্বচেষ্ট। কারণ, ক্ষমতায় যাওয়ার আকাক্সক্ষা; ক্ষমতা গ্রহণের পর তা ত্যাগ করার কষ্ট এবং ক্ষমতাবান না হওয়ার যন্ত্রণা ইত্যাদিই মূলত তাদের মানসিক অবস্থাকে যুক্তিহীনভাবে স্বার্থপর করে তুলছে। ক্ষমতা এমনই এক শক্তি যা মানুষকে তার কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত করে, অনেক সময় কণ্টকাকীর্ণ জটিল পথে আবর্তিত করে এবং ওই ভুল পথ এতটাই আকর্ষণীয়, যা এক অদৃশ্য মেগনেটিক শক্তি ক্রমাগত মোহাবিষ্ট করে রাখে। ক্রমান্বয়ে সে আবর্তিত থেকে থাকে, কিন্তু, ত্যাগ করতে পারে না ওই পথ। যা তাদের রাজনৈতিক জীবনে এক সময়, কাল হয়ে দাঁড়ায়,- কিন্তু, বিবেক যখন জাগ্রত হয়, সময় তখন ফুরিয়ে যায়।

আর কদিন পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। গোটা দেশ নির্বাচনী জ্বরে কাঁপছে। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা জনগণের রায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করলে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে জাতি তাদের করণীয় ঠিক করতে খুব বেশি সময় নেয়নি। রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঠিক দিক নির্দেশনায় মাত্র নয় মাসের যুদ্ধে একটি স্বাধীন দেশের জন্ম হয়। ৭০-এর নির্বাচনের পর ৭১-এর সফল স্বাধীনতা-সংগ্রামে বাংলাদেশের জনগণ স্বজাতির অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা স্বাধীনতা বিরোধীদের আলাদা প্লাটফর্মে চিহ্নিত করতে পেরেছে ঠিকই, কিন্তু, স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর দেখা গেল বর্ণচোরা গিরগিটির দল ক্রমান্বয়ে আত্মপ্রকাশ করছে। অর্থাৎ হিসাবের অঙ্কে বেজায় ভুল ছিল। কথায় বলে, প্রত্যেক অপরাধী অপরাধ করে পালানোর সময়, সাক্ষী রেখে যায় এবং বিচারিক আদালতে নিজের রেখে যাওয়া আলামতেই সে অপরাধী সাব্যস্ত হয়। বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে ওই বর্ণচোরারা জীবনসায়াহ্নে এসে আবারও তা প্রমাণ করল। প্রযুক্তির কল্যাণে মুহূর্তেই বিশ্ববাসী তা প্রত্যক্ষ করল। তাদের বক্তব্য বিবৃতি শুনে দেশবাসী হতবাক। তাহলে মুজিব কোট গায়ে এরা কারা, যারা জয়বাংলার লোক জিন্দাবাদের মঞ্চে তাদের আবির্ভাব কেন? কিন্তু, ১৯৭১ আর ২০১৮ সাল এক কথা নয়। দেশের জনগণকে বোকা বানিয়ে নির্বাচনী নেতা সেজে সম্ভবত জনগণকে প্রতারিত করার দিন শেষ। আশা করা যায়, ৪৭ বছরে যতটা সময় তাদের চিহ্নিত করতে নষ্ট হয়েছে, এবার তার পরিসমাপ্তি ঘটছে। কারণ, বর্ণচোরাদের সর্বশেষ চালানটি স্বইচ্ছায় স্বাধীনতাবিরোধী মঞ্চে একত্রিত হয়ে নিজেদের জানান দিয়েছে। দেশবাসীও স্বাগতচিত্তে তাদের চিহ্নিত করতে পেরেছে। এখন গোটা জাতিকে শুধু বুঝতে হবে ৭০-এর নির্বাচনের চেয়ে ২০১৮ সালের এই নির্বাচনটির গুরুত্ব কোনো অংশেই কম নয়। কারণ, এ নির্বাচনে যদি তারা জয় লাভ করে, বাঙালি জাতিসত্তার অস্তিত্ব আবার নির্বাসনে যাবে। তারপর যা ঘটবে, লেখার অবকাশ আছে বলে মনে করি না। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১০ বছরে উন্নয়নের যে অগ্রযাত্রা দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে তা অব্যাহত রাখার কোনো বিকল্প আছে বলে মানুষ মনে করছে না। দেশবাসী ভাবছে সরকারবিরোধী যে ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছে, একদিকে এ মঞ্চটি স্বাধীনতা বিরোধীদের মিলনমেলা, অন্যদিকে আদালতের রায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের একজন বিদেশে পলাতক অন্যজন কারাবন্দী। তাহলে সরকারবিরোধী এ ঐক্যের নেতা কে? জনগণ কার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের চাইতেও ভালো সরকারে আশান্বিত হবে? উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বাদ দিয়ে দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত কারোর মুক্তির পক্ষে মূল্যবান ভোট প্রদান করা দেশবাসীর কাম্য নয়। গত ১০ বছরে জননেত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। তিনি মনে-প্রাণে যা বিশ্বাস করেন, বক্তৃতা-বিবৃতিতে তাই বলেন। তিনি দেশকে যেভাবে ভালোবাসেন, তার বিশ্বাস, স্বাধীনতাকামী প্রতিটি মানুষের অন্তরে দেশের প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ, তার মতোই। এ নিষ্কলুষ আত্মবিশ্বাস, আর ভরসার জন্ম সেখানেই। তাই বলতে হয় যারা মুখোশ পরে দেশসেবায় এগিয়ে আসে তারা সবচেয়ে বড় দেশদ্রোহী। সেদিন হয়তো বেশি দূরে নয়, মুজিব কোট গায়ে জড়িয়ে স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে যারা মঞ্চে উঠেছে, এ দেশের জনগণই তা টেনে খুলবে। হয়তো, গণতন্ত্র রক্ষায় আগামী ৩০ তারিখেই তার প্রমাণ হবে। জনগণ নিজেদের স্বার্থেই সঠিক সিদ্ধান্তই নেবে।    লেখক : কলাম লেখক।

 

 

সর্বশেষ খবর