সোমবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

জবানের হেফাজত

শাইখুল হাদিস আল্লামা আবদুল কুদ্দুছ

হজরত উকবা ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একবার রসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রসুল, আল্লাহর আজাব-গজব থেকে নাজাতের উপায় কী? রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তোমার জবান হেফাজত কর, গুনাহর জন্য আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি কর, প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হয়ো না। (জামে তিরমিজি : ২৫৬৯)। এ হাদিসে নাজাতের উপায় হিসেবে প্রথম যে আমলের কথা বলা হয়েছে তা হলো নিজের জিহ্বা নিয়ন্ত্রণ করা। জিহ্বা দ্বারা অনেক রকমের গুনাহ হয়। আশরাফ আলী থানভী (রহ.) জবানের ত্রিশেরও বেশি গুনাহের কথা উল্লেখ করেছেন। মনে রাখতে হবে এ জিহ্বা আল্লাহপাকের বিশেষ নেয়ামত। জিহ্বায় স্বাদ অনুভব করার শক্তি রয়েছে। অন্য কোনো অঙ্গ দিয়ে তা অনুধাবন করা যায় না। সারা জীবন চেষ্টা করলেও কি চোখ দিয়ে টক, মিষ্টি, ঝাল বা তিক্ততা নির্ণয় করা সম্ভব হবে। কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। আবার আল্লাহপাকের ইচ্ছা না থাকলে এই জিহ্বা দিয়েও সঠিক স্বাদ অনুধাবন করা যায় না। তাই দু-এক দিন জ্বর থাকলে দেখা যায়, মুখে যা দেয় ভালো-মন্দ সবই তিতা লাগে। জিহ্বা আছে; কিন্তু এর দ্বারা কোনো কাজ হচ্ছে না। কারণ, এর দ্বারা এখন স্বাদ অনুভব করার হুকুম নেই।

মানুষ জিহ্বা দিয়ে কথা বলে, মনের ভাব প্রকাশ করে। কিন্তু যার জিহ্বা আছে সে ইচ্ছা করলেই কথা বলতে পারে না। প্রয়োজন হয় আরেকটা শক্তির। তাও আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন, তা হলো বাকশক্তি। বাকশক্তি থাকলে আমরা জিহ্বার মাধ্যমে কথা বলতে পারি। কিন্তু জিহ্বা ও বাকশক্তি কথা বলার জন্য যথেষ্ট নয়, জিহ্বায় থাকতে হবে পানি। জিহ্বা শুকনো থাকলে কথা বলা যাবে না। আমরা লক্ষ্য করলে দেখতে পাব, আমাদের জিহ্বা সব সময়ই ভেজা থাকে। আল্লাহতায়ালা জিহ্বার গোড়া থেকে পানি সৃষ্টি করছেন। পানি আসছে তো আসছেই, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত। এ তো আল্লাহপাকের কুদরতি পানি, তাঁর হুকুমেই আসছে। কী পরিমাণ আসছে কখনো চিন্তা করিনি। যখন চুপ থাকি তখন পানি অল্প পরিমাণ আসে, যখন কথা বলি তখন বেশি আসে। আরও বেশি পানি আসে খাওয়া-দাওয়ার সময়। কারণ, এক লোকমা খাবার গলাধঃকরণের জন্য চিবানোই যথেষ্ট নয়; বরং জিহ্বার পানি দিয়ে ভিজে পিচ্ছিল হতে হয়। ভেবে দেখুন, পুরো খাবার সিক্ত হওয়ার জন্য কী পরিমাণ পানি দরকার? আল্লাহতায়ালা জিহ্বার গোড়ায় প্রতিটি লোকমার সঙ্গে পরিমিতভাবেই তা সৃষ্টি করে দিচ্ছেন। কখনো কি এই কুদরতের কথা ভেবে দেখেছি? আল্লাহপাক আমাদের জিহ্বা দিয়েছেন এবং জিহ্বাকে সবসময় সিক্ত রাখছেন তাঁর জিকির করার জন্য, তাঁর কালামে পাকের তেলাওয়াতের জন্য। এ জবান দিয়ে ভালো ও নেক কথা বলার জন্য। তাঁর দীনের প্রচার-প্রসারের জন্য। অথচ এই জবানে কতরকম গুনাহ হয়ে যাচ্ছে। আমরা জানি মিথ্যা, গিবত ও অশ্লীল কথা বলা, ঝগড়া করা সবই মস্ত বড় গুনাহ। বুখারি শরিফে বর্ণিত আছে, একবার রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথাও যাচ্ছিলেন। দুটি নতুন কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় দাঁড়িয়ে গেলেন, দোয়া করলেন। খেজুরের একটি ডাল দুই টুকরা করে কবর দুটিতে গেড়ে দিলেন। সাহাবায়ে কেরাম কিছুই বুঝতে পারলেন না। কারণ জিজ্ঞেস করলে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কবর দুটিতে এমন কোনো গুনাহের কারণে তাদের শাস্তি হচ্ছে না যা থেকে বেঁচে থাকা কঠিন ছিল। সহজেই তারা ওইসব থেকে বাঁচতে পারত কিন্তু বেঁচে থাকেনি। একজন প্রস্রাবের ফোঁটা থেকে বেঁচে থাকত না। অপরজন চোগলখোরি করে বেড়াত। আল্লাহতায়ালা দুজনকে শাস্তি দিয়েছেন।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর