শুক্রবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

তরুণরাই মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে বিজয়ী করবে

ড. আতিউর রহমান

তরুণরাই মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে বিজয়ী করবে

রবীন্দ্রনাথের কথা দিয়েই শুরু করি। ‘এসো এসো দলে দলে বাহির হয়ে পড়ো’। হ্যাঁ, আমি তরুণ প্রজন্মকে উদ্দেশ্য করেই কথাগুলো বলছি। আগামী ৩০ ডিসেম্বর তারা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে বিজয়ী করার এক মহোৎসবে দলে দলে যোগদান করবে বলেই আমার প্রত্যাশা। এবারে দুই কোটি একত্রিশ লাখ ভোটারের বয়স ১৪ থেকে ২৪ বছর। এই তরুণরাই ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারের ভোটযুদ্ধেও একই রকমের আশা জাগানিয়া ভূমিকা পালন করবে বলে আমার বিশ্বাস। আমরা জানি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছাড়াও প্রতিটি ঐতিহাসিক সংগ্রামে এই তরুণরাই নিঃশঙ্কচিত্তে স্বদেশের মর্যাদা রক্ষার জন্য এগিয়ে এসেছে। ক্ষুদিরাম, সুভাষ বসু ও সূর্যসেনদের ভাবশিষ্য এই তরুণরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের ফসল ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। পাকিস্তানিরা ওই নির্বাচনের ফল মেনে বাঙালির ক্ষমতায়নের প্রক্রিয়া রুদ্ধ করার উদ্যোগ নিলে বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ মুক্তির ডাক দেন। তরুণরা ব্যাপক হারে তাঁর ডাকে সাড়া দেন। শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। এরই এক পর্যায়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শুরু করে গণহত্যা। এ প্রেক্ষাপটেই একাত্তরের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। আর তরুণরাই জীবনবাজি রেখে এই মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই যুদ্ধে বিজয় অর্জন করে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটায় তারাই। জীবন-মরণ এই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের অনুপ্রেরণার উৎসেও ছিলেন বঙ্গবন্ধু। মুক্ত স্বদেশে এসে তিনি ঘোষণা করেন ‘শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির বাংলাদেশ গড়ার। শুরু হয় দেশগড়ার এক নয়া মুক্তিযুদ্ধ। মাত্র সাড়ে তিন বছরে তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের গুণে বঙ্গবন্ধু একটি ধ্বংস স্তূূূপ থেকে মাথা উঁচু করা এক উদ্যমী বাংলাদেশকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেন। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র, প্রাকৃতিক ও মানুষের তৈরি নানা সংকট মোকাবিলা করে তিনি যখন বাংলাদেশকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে আনতে যাচ্ছিলেন ঠিক তখনই রাতের অন্ধকারে ষড়যন্ত্রকারীরা জাতির পিতাকে আমাদের কাছ থেকে শারীরিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে সক্ষম হয়। উল্লেখ্য, তাঁর আহ্বানে ওই সময় বাংলাদেশের কৃষকরা আমনে বাম্পার ফলন উপহার দেওয়ার জন্য রাত-দিন পরিশ্রম করছিলেন। কিন্তু তাঁর অনুপ্রেরণা ও চিন্তা-চেতনা তো আর নিঃশেষ হওয়ার নয়। ক্ষুব্ধ তরুণেরা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এই সংগ্রামও প্রতিরোধের এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিয়ে দিল্লি থেকে বাংলাদেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তরুণ কর্মীরা দারুণ উজ্জীবিত হয় তাঁর আগমনে। শুরু হয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এক অপ্রতিরোধ্য সংগ্রাম। এ সংগ্রামেও নূর হোসেন, বসুনিয়া ও ডা. মিলনসহ অসংখ্য অনেক তরুণের রক্ত ঝরে। তারুণ্যের শক্তির কাছে হার মানে স্বৈরাচারী শক্তি। ছিয়ানব্বইয়ের জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। শুরু হয় অন্তর্ভুক্তিমূলক সামাজিক দায়সম্পন্ন উন্নয়নের এক নয়া অভিযাত্রা। আটানব্বইয়ের বন্যা মোকাবিলা, বিপর্যস্ত বর্গাচাষিসহ কৃষকদের জন্য ঋণ, বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, মেয়ে শিশুদের শিক্ষাবৃত্তি, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, মায়েদের জন্য ভাতাসহ অসাধারণ সব কর্মসূচি দিয়ে তিনি বাংলাদেশকে ফের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরিয়ে আনেন। তরুণরা আবার বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসিক্ত বাংলাদেশে। ২০০১ সালে ফের ছন্দ পতন। দেশ চলে যায় পাকিস্তানপন্থিদের হাতে। এর পর নানা সংগ্রাম। এক্ষেত্রেও তরুণরা অগ্রগামী। প্রায় আট বছর পর এ সংগ্রামের সুফল মেলে। বঙ্গবন্ধুকন্যা ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুষ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ২০০৯ সালের শুরুতেই ফের সরকার গঠন করেন। এরপর থেকে বিগত এক দশক ধরে তিনি নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন একটি উন্নত অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ নির্মাণের অভিপ্রায় নিয়ে। এই এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে অভাবনীয় উন্নতি ঘটেছে। অর্থনীতির আকার তিনগুণ বেড়ে বর্তমানে ২৮৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। প্রবৃদ্ধির হার ৫.৪ শতাংশ থেকে বেড়ে সর্বশেষ ৭.৮৬ শতাংশ হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা আট শতাংশ পেরিয়ে যাবে। আমরা স্বপ্ন দেখছি তা অচিরেই দশ শতাংশে পৌঁছে যাবে। মাথাপিছু আয় তিনগুণ বেড়ে এখন ১৯৫১ ডলার হয়েছে। ভোগ বেড়েছে তিনগুণ। বিনিয়োগ চারগুণ। মূল্যস্ফীতি ১২% কমে ৫.৪ শতাংশে নেমেছে। প্রকৃত আয় লাগাতার বেড়েই চলেছে। দশ বছর আগে একজন খেতমজুর দৈনিক মজুরি দিয়ে তিন/চার কেজি চাল কিনতে পারতেন। এখন তিনি তা দিয়ে বারো/তেরো কেজি চাল কিনতে পারেন। আমাদের জীবনের গড় আয়ু এখন ৭৩ বছর। ভারতের ৬৯ বছর। শিশু মৃত্যুর হার গত দশ বছরে কমে হাজারে পঁয়ত্রিশে নেমে এসেছে। আর্থিক খাতে ব্যাপক ডিজিটালাইজেশন ঘটেছে। ব্যাংকের গ্রামীণ শাখার সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। ৬ কোটি মোবাইল ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে। এজেন্ট ব্যাংকিং আর্থিক অন্তর্ভুক্তির নয়া দিগন্ত উন্মোচন করছে। এই দুই ধারার ব্যাংকিং খাতে দশ লাখের মতো এজেন্ট উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেরাই গড়ে তিন চারজন তরুণের চাকরি দিচ্ছে। প্রতিদিন এক হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ শহর থেকে গ্রামে যাচ্ছে। কোটি খানিক কৃষকের দশ টাকার হিসাব রয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধাভোগীরাও দশ টাকার হিসাব খুলতে পারছেন। গ্রামীণ অর্থনীতি তাই খুবই চাঙ্গা। উদ্যোক্তার সংখ্যা দিন দিনই বাড়ছে। পনের লাখ ছাত্রছাত্রী তাদের স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমের আওতায় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা জমা করেছে। প্রযুক্তির কল্যাণে এখন একজন রিকশাওয়ালা বা ভিক্ষুকও এখন নিয়মিত মোবাইল ব্যাংকিং করছেন। রেমিট্যান্স দ্বিগুণ বেড়ে প্রায় ষোলো বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। রিজার্ভ বেড়েছে ৫ গুণের বেশি। তাই নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের সাহস দেখাতে পারেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। প্রস্তাবিত একশটি বিশেষ অর্থনৈতিক জোনে এক কোটিরও বেশি কর্মসংস্থান হবে। ইউনিয়ন পর্যায়ে সাইবার মহাসড়ক বিস্তৃত হচ্ছে। হাজার হাজার ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার ও ই-পোষ্ট অফিস স্থাপনের ফলে ৬ লাখ আউট সোর্সিং উদ্যোক্তাসহ অসংখ্য ডিজিটাল তরুণ উদ্যোক্তার বিকাশ ঘটেছে এই দশ বছরে। ঢাকাসহ বড় বড় শহরে অর্থনীতির ব্যাপক ‘উবারিকরণ’ ঘটছে। ‘উবার’, ‘পাঠাও’, ‘সহজ’, ‘ও ভাই’, ‘ও বোন’- এর মতো রাইড-শেয়ারিং কয়েক লাখ তরুণ এখন অংশীদার। ই-কমার্স ও এফ-কমার্সের সুযোগ নিয়ে নারী উদ্যোক্তাসহ তরুণ উদ্যোক্তারা এখন অন-লাইন ব্যবসা-বাণিজ্যে খুবই সক্রিয়। বিশেষ করে, ঈদ, নববর্ষ ও পূজার সময় তাদের ব্যবসার প্রসার ঘটে। ‘বিকাশ’ ও ‘রকেট’সহ ডিজিটাল লেনদেন সেবারও তখন প্রসার ঘটে। তরুণ উদ্যোক্তাদের এই অভিযাত্রাকে আরও গতিময় করার অভিপ্রায়েই বঙ্গবন্ধুকন্যা এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’ শিরোনাকে অনেকগুলো প্রস্তাব রেখেছেন। একই সঙ্গে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের মূল চেতনাকে সমুন্নত রাখা, দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিপনা ও মাদককে ‘জিরো টলারেন্স’ জানিয়ে এ ইশতেহার তরুণ প্রজন্মের মনকে দারুণভাবে আন্দোলিত করেছে। তরুণদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার আমাদের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ এই তরুণদের আস্থা অর্জনে এ ইশতেহার নিঃসন্দেহে আশাবাদী এক বার্তা দিতে পেরেছে বলে আমার মনে হয়েছে। ‘সোনার বাংলা’ ও ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার প্রধানতম শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের মানসম্মত শিক্ষা, দক্ষতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান প্রদান, তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা, রাজনৈতিক ও নাগরিক ক্ষমতায়নের অঙ্গীকার করেছে আওয়ামী লীগের এ ইশতেহার। তাছাড়া, তাদের মেধা প্রতিভা বিকাশে সুষ্পষ্ট নীতি উদ্যোগ, প্রশাসন ও বাজেটে যুবনীতির প্রতিফলন, যুববিভাগ গঠন, যুব বাজেট প্রদান, যুব গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা, কারিগরি শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিকাশ বাড়তি বিনিয়োগ, বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ও অন্যান্য সুযোগ বাড়ানো, প্রতিটি উপজেলায় যুব প্রশিক্ষণ তথা তরুণ কর্মসংস্থান কেন্দ্র স্থাপন, (‘কর্মঠ’ ও ‘সুদক্ষ’ প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া), তরুণদের সমন্বিত তথ্য ভা-ার তৈরি করা এবং ২০২৩ সালের মধ্যে দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার প্রস্তাব করেছে এ ইশতেহার। তাছাড়া সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে তরুণদের উদ্যোক্তা করার উদ্যোগ, ‘তরুণ উদ্যোক্তা নীতি’ গ্রহণ, যুব বিনোদন কেন্দ্র স্থাপন, তরুণদের স্বল্প খরচে ইন্টারনেট দেওয়ার জন্য ‘ইয়ুথ প্ল্যান’ চালু করা, প্রতিটি জেলায় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র স্থাপন, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরির সময় যুব মতামত গ্রহণ এবং যুব নারী উদ্যোক্তাদের আলাদা ব্যাংকিং সুবিধা, জয়িতা ফাউন্ডেশনের প্রসার, সরকারি প্রতিষ্ঠানে বাচ্চাদের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টারসহ অনেকগুলো সৃজনশীল প্রস্তাব রেখেছে এ ইশতেহার। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও কর্মময় শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের কথা তার ইশতেহারে বলেছে। তবে সরকারি চাকরিতে কোনো বয়সসীমা থাকবে না বলে অপরিপক্ব ও যুব-সংকোচনের প্রস্তাব করে যুব সম্প্রদায়কে বেশ খানিকটা অসন্তুষ্টই করেছে বলে মনে হয় এ ইশতেহার। তাছাড়া, একদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার, অন্যদিকে তাদের সন্তান ও সহযোগীদের হাতে একই নির্বাচনী মার্কা তুলে দিয়ে ঐক্যফ্রন্ট তরুণ প্রজন্মকে অনেকটাই বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে।

ইশতেহারে বর্ণিত যুব সম্প্রদায়ের সপক্ষে অনেকগুলো ইতিবাচক প্রস্তাব করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যথেষ্ট বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতা দেখিয়েছেন। এক অর্থে দলটি তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের পক্ষে রাখার জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছে তা খুবই সময়োপযোগী বলে মনে হয়েছে আমার কাছে। বিশেষ করে যখন দেশের অর্থনীতি বাড়ন্ত ও স্থিতিশীল তখন স্থিতাবস্থার বিপরীতে ভোটের উল্টো হাওয়া বইবার কোনো বাস্তব কারণ নেই। বিশেষ করে তরুণ সম্প্রদায় এই বিনাশী হাওয়ায় যে ‘মাতবে’ না তা আমি জোরালোভাবেই বলতে পারি। ‘কলরেডো’ নামের একটি দেশীয় প্রতিষ্ঠানের জরিপে বলা হয়েছে যে একান্ন শতাংশের মতো ভোটার এবার স্থিতাবস্থার পক্ষেই থাকবে। আর তরুণদের সমর্থন এ প্রশ্নে আরও বেশি। বিদেশি জরিপ সংস্থাগুলোর মতেও একই পূর্বাভাস মেলে। ‘দ্য ইকোনমিস্ট ইউনিট’ (ডিসেম্বর ২০১৮) জানিয়েছে :

গত এক দশক ধরে শক্তিশালী অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তি রচনা করার গুরু দায়িত্ব পালন করেছে বলে জনসমর্থন তার দিকেই থাকবে।

আগামী পাঁচ বছরও জিডিপি প্রবৃদ্ধি গড়ে ৭.৭% থাকবে। এ হার বিশ্ব প্রবৃদ্ধির দ্বিগুণেরও বেশি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের গুণেই এই অসামান্য অর্জন সম্ভব হয়েছে এবং সামনের নির্বাচনে তাই তিনি সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী হিসেবেই নির্বাচনী অভিযান পরিচালনা করবেন ।

আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ধারাবাহিক অগ্রগতি তার শক্তিশালী নেতৃত্ব এবং ভঙ্গুর বিরোধী নেতৃত্ব-সব মিলেই আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে তার সাফল্য দেখাবে।

ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (অক্টোবর ২০১৮) মনে করে যে, ‘বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের ঐতিহ্য রয়েছে এবং জনগণও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে গভীরভাবে বিশ্বাসী। তাই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ভিত্তি বিদ্যমান।’

‘ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট’ (সেপ্টেম্বর ২০১৮) এর জরিপ মতে :

৬২% মানুষ বিশ্বাস করে যে দেশ ঠিক পথেই এগোচ্ছে।

৬৯% অর্থনৈতিক অগ্রগতির বর্তমান ধারায় সন্তুষ্ট।

৬৪% উত্তরদাতা আওয়ামী লীগ জিতবে বলে বিশ্বাস করে।

৬৬% উত্তরদাতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে সমর্থন করেন।

৬৭% মানুষ সরকারের স্বাস্থ্যসেবায় সন্তুষ্ট।

৬৪% মানুষ সরকারের বিদ্যুৎ পরিস্থিতিতে সন্তুষ্ট।

৬১% সন্তুষ্ট রাস্তাঘাট, মহাসড়ক ও সেতু নির্মাণে।

৮১% আগামী নির্বাচনে ভোট দেবেন।

এ ছাড়া এশিয়া ফাউন্ডেশন, ব্রিটিশ কাউন্সিলসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের জরিপেই ধরা পড়েছে যে বাংলাদেশ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার ফলে বিশ্ববাসীর আস্থা কুড়িয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরও বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে অংশগ্রহণে আগ্রহ প্রবল। জাপানের ৭০% খুদে ও মাঝারি ব্যবসায়ী বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। এক বিদেশি জরিপ অনুযায়ী ৭৫ শতাংশ তরুণ মনে করে আগামী পনেরো বছর ধরে বাংলাদেশের সমৃদ্ধির জয়যাত্রা অব্যাহত থাকবে। এমন সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের তরুণ ভোটাররা নিশ্চয় ৩০ ডিসেম্বর সমৃদ্ধির পক্ষেই অবস্থান নেবে। দ্রুতবেগের চলন্ত ট্রেন থেকে তারা অযথা কেন লাফ দেবে? যখন দেশে কোনো মন্দার আশঙ্কা নেই, দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল, জিডিপি, ভোগ ও বিনিয়োগ বাড়ন্ত, খাদ্য ঘাটতি নেই, তখন আগামীর বাংলাদেশের মূল শক্তি নিশ্চয় তথাকথিত ‘অ্যান্টি-ইনকাম্বেসির’ খপ্পরে পড়বে না। নিশ্চয় তারা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কোনো শক্তির সরকারের আমলে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনের অযথা ঝুঁকি নেবে না।

জয় হোক মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের।

লেখক : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর এবং বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ।

ই-মেইল : [email protected]

সর্বশেষ খবর