রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্যতম বিবি ছিলেন হজরত জুয়াইরিয়া (রা.)। ইবাদতকারিণী হিসেবে তিনি ছিলেন তাঁর সময়ের নারীদের মধ্যে সুপরিচিত। তিনি ছিলেন মুসতালিক গোত্রের গোত্রপতির কন্যা। উল্লেখ্য, মদিনায় রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিষ্ঠা লাভ এবং ইসলামের অগ্রযাত্রার খবরে রোম সাম্রাজ্যে বিদ্বেষের আগুন জ্বলে উঠেছিল। অনেক নিষ্ঠাবান খ্রিস্টান সাধক অদূর ভবিষ্যতে একজন নবীর আবির্ভাব হবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করে অপেক্ষমাণ ছিলেন। রোম সম্রাটেরও এসব তথ্য অজানা ছিল না। তাই মদিনার প্রতি তাদের দৃষ্টি ছিল সজাগ। মাঝে মাঝে গুজব ছড়িয়ে পড়ত যে, রোম সম্রাটের পক্ষ থেকে আরবের সীমান্ত অঞ্চলের প্রশাসক ও গোত্র সর্দাররা মদিনা আক্রমণ করে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গ্রেফতার করে সম্রাটের কাছে হাজির করার পরিকল্পনা আঁটছেন। মদিনার ইহুদি ও আশপাশের বিরুদ্ধবাদী গোত্রগুলোর সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে যদি রোম সাম্রাজ্যের দিক থেকে সত্য সত্যই অভিযান পরিচালিত হয়, তবে মদিনার অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এ আশঙ্কা দূর করার লক্ষ্য নিয়েই আল্লাহর রসুল হিজরি পঞ্চম সনে আরব সীমান্তবর্তী শক্তিশালী বনি মুসতালিকের জনপদ আক্রমণ করে ইসলামী রাষ্ট্রের শক্তি-সামর্থ্য বৃদ্ধির উদ্যোগ নেন। অভিযানে সাহাবিরা সর্বশক্তি নিয়োগ করে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধে মুসতালিক গোত্রের শোচনীয় পরাজয় ঘটে, বহু লোক বন্দী হয়ে মদিনায় আনীত হয়। বন্দীদের সঙ্গেই এসেছিলেন মুসতালিক গোত্রপতি হারেসের কন্যা জুয়াইরিয়া। যুদ্ধে বিজয় অর্জিত হলেও শক্তিশালী এ গোত্রটির সঙ্গে রোম সাম্রাজ্যের সাহায্যের হাত বাড়ানোর সুযোগ ঘটলে পরবর্তী পর্যায়ে ঘোরতর কোনো বিপদের সম্ভাবনা থেকেই গিয়েছিল। এজন্য রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসতালিক গোত্রের সঙ্গে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পরিকল্পনা করলেন এবং গোত্রপতি হারেসের কন্যা জুয়াইরিয়াকে মুক্ত করে দিয়ে তাঁর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এ বিয়ের ফলেই মুসতালিক গোত্র মুসলমানদের মিত্রে পরিণত হয় এবং সীমান্তের দিক থেকে অতর্কিত আক্রমণের আশঙ্কা দূর হয়। বিয়ের সময় হজরত জুয়াইরিয়ার বয়স ছিল ২০ বছর। হিজরি পঞ্চাশ সনে তাঁর ইন্তেকাল হয়। মদিনার আমির মারওয়ান ইবনে হাকাম তাঁর জানাজার নামাজ পড়ান। হজরত জুয়াইরিয়ার কাছ থেকে কিছু হাদিসও বর্ণিত হয়েছে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে এমন একটি বিশেষ তসবিহ শিক্ষা দিয়েছিলেন, যা আবেদদের কাছে বিশেষ তাৎপর্যবহ।
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক