শিরোনাম
বুধবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

দাওয়াতি কার্যক্রম নবী-রসুলদের সুন্নত

মুহাম্মাদ ওমর ফারুক

দাওয়াতি কার্যক্রম নবী-রসুলদের সুন্নত

দাওয়াতি বা তাবলিগি কার্যক্রম নতুন কিছু নয়। পথভ্রষ্ট মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রসুলের আগমন ঘটেছে পৃথিবীতে। তারই ধারাবাহিকতায় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীতে আগমন করেন। তাঁকে পাঠানো হয় আখেরি জমানার নবী হিসেবে; যাঁর আগমনের মাধ্যমে পৃথিবীতে নবী-রসুল পাঠানোর প্রক্রিয়ার সমাপ্তি ঘটে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগে পৃথিবীতে যেসব নবী-রসুলের আগমন ঘটেছিল, তারা এসেছিলেন বিশেষ এলাকা বা বিশেষ জাতিকে হেদায়েতের উদ্দেশ্যে। পক্ষান্তরে শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আবির্ভাব ঘটেছে সমগ্র মানবজাতিকে হেদায়েতের আলোয় আলোকিত করতে। তিনি মানবজাতিকে কল্যাণের পথে আহ্বান করেছিলেন। সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের পথে মানুষ যাতে পরিচালিত হয় তা-ই ছিল তার লক্ষ্য।

নৈতিকতার ওপর ভিত্তি করে মানুষ যেমন সত্য-সুন্দর ও কল্যাণের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে পারে তেমন পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সে মহোত্তম গুণাবলিকে মূর্তমান করে তুলতে পারে। ইমাম মালেক (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি মহোত্তম নৈতিক চরিত্রের পূর্ণতাবিধানের জন্য প্রেরিত হয়েছি।’ ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়- রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহোত্তম নৈতিক ধ্যান-ধারণা ও গুণাবলির ওপর ভিত্তি করে একটি পবিত্র ও উন্নত মানবজীবন এবং সৎকর্মশীল মানবসমাজ গড়ে তুলেছিলেন। এটি এখন সব মানুষের জন্য আদর্শ হিসেবে বিবেচিত। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগে নবী-রসুলগণ এবং তাঁদের সৎ অনুসারীরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশ ও জাতির মধ্যে নৈতিক সৌন্দর্যের বিভিন্ন দিক নিজেদের শিক্ষার মাধ্যমে পরিস্ফুটিত করেছেন এবং নিজেদের বাস্তব জীবনেও এর সর্বোত্তম নমুনা পেশ করেছেন। কিন্তু মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগে এমন কোনো ব্যক্তিত্বের আবির্ভাব ঘটেনি, যিনি মানব-জীবনের সার্বিক দিক ও চরিত্র-নৈতিকতার সঠিক মূলনীতিগুলোকে পূর্ণাঙ্গরূপে তুলে ধরতে পেরেছেন এবং একদিকে নিজ জীবনে তার প্রতিফলন ঘটিয়ে দেখিয়েছেন এবং অন্যদিকে ওইসব মূলনীতির ভিত্তিতে একটি সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন করে তা পরিচালনা করে দেখিয়েছেন। এ কাজটি বাকি ছিল এবং তা করার জন্যই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রেরিত হয়েছেন। মহোত্তম চরিত্রের পূর্ণতা সাধনের অর্থও তাই। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং এ কাজটি তাঁর নবুয়তের মূল উদ্দেশ্য বলে বর্ণনা করেছেন। এ থেকে জানা যায়, নৈতিক চরিত্রের পূর্ণতাবিধান তাঁর আনুষঙ্গিক কাজ ছিল না; বরং এ কাজ করার জন্যই মূলত তাঁকে দুনিয়ায় পাঠানো হয়েছিল। জীবনের সব ক্ষেত্রে সত্য-সুন্দর ও কল্যাণের আদর্শ প্রতিষ্ঠায় তিনি কাজ করেছেন। অনুসারীদের তাঁর সদগুণে উদ্ভাসিত হতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তাঁর অবর্তমানে অনুসারীদের জন্যে দাওয়াতি কার্যক্রম অব্যাহত রাখা কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর