মানুষের প্রিয় পাখিদের মধ্যে পায়রা অন্যতম, প্রাচীনকাল থেকেই এ পাখিটিকে মানুষ অতি আপন করে নিয়েছে। আগেকার দিনের নবাব-জমিদাররা পায়রা উড়িয়ে দিনের কিছুটা সময় অতিবাহিত করতেন। সেকালে যখন ডাকব্যবস্থার প্রচলন হয়নি, তখন চিঠি আদান-প্রদানেও পায়রা এক অনবদ্য ভূমিকা গ্রহণ করত। মানুষের দিকে এরা এমন করে চেয়ে থাকে যে, দেখলে মনে হয় কিছু বলতে চায়। তাই এরা সব মানুষের কাছেই প্রিয়। সারা বিশ্বে মোট ১৩০টি প্রজাতির পায়রা আছে। এর মধ্যে আমাদের দেশি জাতের গোলা পায়রা, কাগজি লক্কা, গেরোবাজি যেমন আছে, তেমনি ইউরোপের রেড-পটার ব্লু-পটার ইত্যাদি উল্লেখ্যযোগ্য। সবচেয়ে শৌখিন জাতের পায়রা হলো জ্যাকোভিচ। এদের মাথায় সিংহের মতো কেশর থাকে। হাঁটাচলায় রাজকীয় ভাব। এরা তিন থেকে সাড়ে তিন ফুট লম্বা হয় ও এদের উচ্চতা দুই থেকে আড়াই ফুটের মতো হয়। এদের ওজন প্রায় চার-পাঁচ কেজি। এসব বিদেশি পায়রার আকৃতি কোনোটা মুরগির মতো, কোনোটা আবার কাকাতুয়ার মতো।
পায়রার বংশবৃদ্ধি এদেশেই বেশি হয়। ইউরোপের দেশগুলো শীতপ্রধান হওয়ায় সেখানে পায়রার ডিম পাড়ে বছরে মাত্র একবার। তাও সংখ্যায় কম। এমনকি কোনো কোনো পাখি বছরে মাত্র একটি ডিমও পাড়ে। এদেশের চিত্রটা কিন্তু অন্যরকম। গরমের দেশ হওয়ায় এখানে ওরা বছরে একাধিকবার ডিম দেয়। ফলে বেশি সংখ্যায় বংশবৃদ্ধি ঘটে। এদের খাদ্য মূলত গম জাতীয় দানাশস্য, ভাঙা ভুট্টা, ছোলা, মটর ইত্যাদি। কাঠের বাক্সে খোঁপ করে পায়রা পোষা যায়। অনেক পোলট্টি ফার্ম বানিয়েও পায়রা পোষেণ। পৃথিবীর সবচেয়ে দামি পায়রা ইংল্যান্ডের ভিক্টোরিয়া ক্রাউন। বিশ্ব প্রকৃতির বুকে বিরাজমান দৃষ্টিনন্দন এই পাখিটি প্রকৃতির এক অনন্য সম্পদ।
আফতাব চৌধুরী।