সোমবার, ১ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা
ইতিহাস

ক্রুসেডারদের সঙ্গে যুদ্ধ

সালাউদ্দীনের সঙ্গে ক্রুসেডারদের যুদ্ধ হয় ১১৮৭ সালে। এর কয়েক দশক আগে অপর এক ক্রুসেড যুদ্ধে এই মর্মে বিরতি আসে যে খ্রিস্টানরা মুসলমানদের হজে যাতায়াতে বাধা দেবে না, ব্যবসায় কাফেলাদের এবং ধর্মীয় কাজে বিঘœতা সৃষ্টি করবে না। এটাই প্রায় চার যুগ ধরে চলছিল। কিন্তু ১১৮৭ সালের জানুয়ারি মাসে একটি হজযাত্রী কাফেলাকে রেনোল্ড আক্রমণ করেন, মালামাল লুট করেন এবং তাদের মারধর করে জেলে নিক্ষেপ করেন। রেনোল্ডের উদ্দেশ্য ছিল সালাহউদ্দীনকে যুদ্ধে নামানো। অবস্থা ছিল যে জেরুজালেমের বাদশাহ বল্ডউইন কোষ্ঠরোগে আক্রান্ত হয়ে তার ভায়রা গী অব লুসিগনান রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দেন। কিন্তু গীর সে ধরনের তেমন কোনো দক্ষতা ছিল না। তাই তার এক প্রাক্তন-মৈত্রী রেনোল্ড তার কাজে সহায়তা করতেন এবং ‘সুযোগও গ্রহণ করতেন’। রেনোল্ড একজন রক্ত-লিপ্সু ব্যক্তি ছিলেন। তবে রেনোল্ড কর্তৃক ব্যবসায় কাফেলাকে ইতিপূর্বে হয়রানি করার অভিযোগও আছে। পার্শ্ববর্তী এলাকায় মুসলমানদের ঐক্য ও শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছিল তাই রেনোল্ড ইচ্ছে করেই সালাহউদ্দীনকে যুদ্ধে নামিয়ে চূর্ণ করার পরিকল্পনা করেন। এ উদ্দেশেই একটি নিরপরাধ, নিরস্ত্র, হজগামী কাফেলাকে আক্রমণ। এরই জওয়াব দিতে আসেন সালাহউদ্দীন আইয়ুবী। ১১৮৭ সালে তিনি ক্রুসেডদের দারুণভাবে পরাজিত করেন এবং জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করেন। তার জেরুজালেমে প্রবেশ ও বিজয় ছিল রক্তহীন। তৃতীয় ক্রুসডে মুসলিম বাহিনীর উদ্দেশ্যে আইয়ুবীর নির্দেশনা (আইয়ুবীকে নিয়ে নির্মিত মুভি থেকে)।

সালাহউদ্দীনের বিজয় ইউরোপে তুমুল ক্ষোভ ও বিকম্পন সৃষ্টি করে। পোপ ৩য় আর্বান হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান। ক্রুসেডাররা তখনো ধারণা করতে পারেনি সালাহউদ্দীন ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দিতে আগমন করেছেন।

বাইতুল মুকাদ্দাসে খ্রিস্টানদের মহাবিপর্যয়ের পর মুসলিম শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। পোপ ২য় আরবানুসের আহ্বানে সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হলো সমগ্র খ্রিস্টান শক্তি। ইংল্যান্ডের রিচার্ড দি লায়নহার্ট, ফ্রান্সের ফিলিপ অগাস্টাস আর জার্মানির ফ্রেডরিকের নেতৃত্বে প্রায় ৬ লাখ সৈন্যের বিশাল বাহিনী নিয়ে খ্রিস্টানদের পবিত্র স্থান আক্রায় মুসলমানদের অবরোধ করা হয়। ১১৮৯ খ্রিস্টিাব্দের ১৩ আগস্ট থেকে ১১৯২ খ্রিস্টাব্দের ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় তিন বছর মেয়াদি ৬ লাখ সৈন্যের এ বিশাল অবরোধ সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবী মাত্র ২০ হাজার মতান্তরে ৩০ হাজার সৈন্য দিয়ে প্রতিরোধ করেন। অবশেষে খ্রিস্টান বাহিনী ১১৯২ খ্রিস্টাব্দের ৯ অক্টোবর অবরোধ তুলে নিয়ে নিজদেশে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। এরপর থেকে শতশত বছর কোনো খ্রিস্টান সম্রাট শত চেষ্টা করেও বাইতুল মুকাদ্দাস আর দখল করতে পারেনি। ১০৯৯ সালের ১৫ জুলাই খ্রিস্টান ক্রুসেডাররা নামধারী মুসলিম শাসকদের সহায়তায় সমগ্র সিরিয়া ও ফিলিস্তিন দখল করে। এরপর তারা ১০৯৯ সালের ৭ জুন বাইতুল মুকাদ্দাস অবরোধ করে এবং ১৫ জুলাই মসজিদের ভিতর প্রবেশ করে ব্যাপক পরিবর্তন করে একে গির্জায় পরিণত করে।

            জাফর খান।

সর্বশেষ খবর