বাংলাদেশে স্বাধীনতার আগে কাগজকল ছিল সাকল্যে দুটি। এর একটি কর্ণফুলী কাগজকল, আরেকটি খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল। স্বাধীনতার পর আরও একটি কাগজকল প্রতিষ্ঠিত হয় পাকশীতে। তিনটি কাগজকলই ছিল সরকার পরিচালিত। দুনিয়াজুড়ে সরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে যেমনটি হয় তেমন ওই তিনটি প্রতিষ্ঠানেও ছিল ব্যবস্থাপনাগত অদক্ষতা এবং আমলাতান্ত্রিকতার অপচ্ছায়া; যার পরিণতিতে তিনটি কাগজকলের ভাগ্যে লোকসান নিয়তির লিখনে পরিণত হয়। একপর্যায়ে তিনটি কাগজকলই বন্ধ হয়ে যায়। দেশে বেসরকারি খাতে কাগজকল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ শুরু হয় নব্বইয়ের দশকে, গত তিন যুগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শতাধিক কাগজকল। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় দ্বিগুণ কাগজকল স্থাপিত হওয়ায় উৎপাদন ক্ষমতার বড় অংশই ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের কাগজ ও কাগজজাতীয় পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ২ কোটি ডলার বা ১৬৮ কোটি টাকা। এসব কাগজ রপ্তানি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ প্রায় ১৫টি দেশে। শেষ হতে যাওয়া এ অর্থবছরে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩০ শতাংশ। দেশে মানসম্মত কাগজ উৎপাদন এমনকি উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তা রপ্তানি হলেও নানা অজুহাতে বিদেশ থেকে কাগজ আমদানি বন্ধ নেই। রপ্তানিমুখী শিল্পে ব্যবহারের নামে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানিকৃত কাগজ কালোবাজারে বিক্রি করে দিয়ে দেশীয় কাগজকলগুলোকে অসম প্রতিযোগিতার মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী দেশের ১২৯টি কাগজশিল্পে ৩১টি বাণিজ্যিক ব্যাংক ৬ হাজার ১১২ কোটি টাকা অর্থায়ন করেছে। চালু কাগজকলগুলোর দেশের চাহিদার কয়েক গুণ কাগজ উৎপাদনের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও নতুন নতুন কাগজকল স্থাপন এ শিল্পের অস্তিত্বের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল- কাগজশিল্পকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষায় এ খাতে নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের আবেদন পাওয়ার পর ব্যাংকগুলো প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করে অর্থায়ন করবে। কিন্তু ব্যাংকগুলো এ ব্যাপরে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন না করায় ব্যাঙের ছাতার মতো কাগজকল প্রতিষ্ঠায় সংকট বাড়ছে। এ শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষায় কাগজ আমদানির ক্ষেত্রে রক্ষণশীল হওয়াও জরুরি।