শনিবার, ২৫ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

রমজানে ইবাদতের ৭০ গুণ সওয়াব পাওয়া যায়

মুফতি ওলিউল্লাহ পাটোয়ারী

রমজানে ইবাদতের ৭০ গুণ সওয়াব পাওয়া যায়

অফুরন্ত ফজিলত ও বরকতের পরিপ্রেক্ষিতেই রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাহে রমজান যেন নসিব হয় সে দোয়া করতেন। রজব এলেই তিনি পাঠ করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসে বরকত দান করুন এবং আমাদের রমজানে পৌঁছে দিন।’ তাঁর সুন্নত অনুকরণে আমরাও তা পাঠ করেছি এবং মহান আল্লাহ আমাদের এই রমজান পর্যন্ত জীবিত রেখেছেন। তাঁর দয়া ও অসংখ্য নিয়ামতের মধ্যে অন্যতম হলো কোরআন মাজিদ। কোরআন মাজিদ নাজিল হয়েছে রমজান মাসে। রমজানের নিজস্ব ফজিলতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কোরআন মাজিদের ফজিলত। আল্লাহ বলেন, ‘রমজানে নাজিল হয়েছে কোরআন। এটি সমগ্র মানবজাতির জন্য পথনির্দেশনা ও সুস্পষ্ট হেদায়েত এবং সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী। রমজানে রয়েছে লাইলাতুল কদর; যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’

মাহে রমজান উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘এ মাসে একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ রমজানের ফজিলত, এ মাসের নফল ইবাদত অন্য সময়ের ফরজ ইবাদতের সমান সওয়াব পাওয়া যায় এবং এ মাসে একটি ফরজ ইবাদত অন্য সময়ের করা ৭০টি ফরজ ইবাদতের সওয়াব পাওয়া যায়। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ভাষণে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এ মাসে একটি কল্যাণময় কাজের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করবে, সে অন্য সময়ের ফরজ ইবাদতের সমান সওয়াব পাবে এবং যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ ইবাদত আদায় করবে সে অন্য সময়ের ৭০টি ফরজ আমলের সওয়াব পাবে।’ মাহে রমজানের ফজিলত সম্মানের মাস, এ মাসের সম্মানে এবং এ মাসে আল্লাহর জন্য সিয়াম পালনকারীদের সম্মানে আল্লাহ জান্নাতকে বিশেষভাবে সজ্জিত করেন। জান্নাতি হুর ও গিলমান মাহে রমজানের আগমনের অপেক্ষায় থাকে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মাহে রমজানের সম্মানে বছরের শুরু থেকে পরবর্তী বছর পর্যন্ত জান্নাতকে সজ্জিত করা হয়, অতঃপর রমজানের প্রথম দিনের আগমনে আরশের তলদেশ থেকে জান্নাতি পত্রপল্লব আন্দোলিত করে বায়ু প্রবাহিত হতে থাকে। এ বায়ু যখন হুর ও গিলমানকে স্পর্শ করে, তখন তারা বলতে থাকে, হে প্রতিপালক! আপনার যেসব বান্দার সম্মানে এর আয়োজন তাদের আপনি আমাদের সঙ্গী করে দেবেন, তাদের দেখে আমাদের নয়ন জুড়াব, চক্ষু শীতল করব এবং আমাদের পেয়ে তারা খুশি হবে।’ গুনাহগার বান্দার গুনাহ মাফ ও ক্ষমা লাভের মহাসুযোগ রয়েছে রমজানে। একান্ত নিষ্ঠার সঙ্গে ইবাদত-বন্দেগি ও তওবা-ইসতেগফারের মাধ্যমে বান্দার পাপ-পঙ্কিলতা থেকে পাকসাফ হয়ে পরিচ্ছন্ন জীবনের অধিকারী হওয়ার মহাসুযোগ রয়েছে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পূর্ণ ইমানের সঙ্গে আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের আশায় রমজানে রোজা পালন করবে, তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় মাহে রমজানের ইবাদত-বন্দেগি করবে তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে এবং যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ইবাদত-বন্দেগি করবে ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। মানবসেবা ও সৃষ্টির সেবার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করে জীবনের সফলতা অর্জনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায় রমজান। মানবসেবা ও সৃষ্টির সেবার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয় রমজান। রোজা রাখার মাধ্যমে সচ্ছল মানুষ গরিব-দুঃখী-অভাবী ও অনাহারী মানুষের দুঃখ-বেদনা উপলব্ধি করতে পারে এবং তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করতে উৎসাহিত হয়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রমজান সমবেদনা জ্ঞাপন ও সহযোগিতা প্রদর্শনের মাস এবং সবর ও ধৈর্যের পুরস্কার হলো জান্নাত। রমজান সব ধরনের অন্যায়-অনাচার, জুলুম-নির্যাতন, সংঘাত-সহিংসতা বন্ধ করে সত্য-ন্যায় ও শান্তিময় পরিবেশ সৃষ্টির সুযোগ এনে দেয়। মাহে রমজান সম্পর্কে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘রোজা হলো ঢালস্বরূপ।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘যদি কেউ গায়ে পড়ে রোজাদারের সঙ্গে সংঘাত সৃষ্টি করতে চায় কিংবা তাকে গালি দেয় তাহলে সে যেন বলে আমি রোজাদার।’ ‘যে ব্যক্তি মিথ্যাচার ও অন্যায় কাজ পরিহার করতে পারল না তার পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ রমজানে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। শয়তানকে শিকলে আবদ্ধ করা হয়। আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা আসতে থাকে, প্রতি রাতে কল্যাণপ্রত্যাশী তুমি এগিয়ে যাও, অকল্যাণপ্রত্যাশী তুমি থেমে যাও। বান্দার আশা-আকাক্সক্ষা পূরণে দোয়া কবুলের সুবর্ণ সুযোগ থাকে ইফতারের সময়।

লেখক : খতিব, বাইতুন নূর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ

দক্ষিণ পীরের বাগ, ওলি মার্কেট, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর