দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ও তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা হত্যার ৪৮ বছর পর বিচার পেল তাদের পরিবার। মুক্তিযুদ্ধকালে নৃশংসভাবে নিহত হন এই দানবীর ও তার ছেলে। রণদা প্রসাদ সাহা ও তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহাকে হত্যাসহ গণহত্যার তিন ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে টাঙ্গাইলের মাহবুবুর রহমানকে ফাঁসির রায় দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বৃহস্পতিবার বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল আসামির উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করে। সত্তর বছর বয়সী মাহবুবুর একাত্তরে মির্জাপুর শান্তি কমিটির সভাপতি বৈরাটিয়াপাড়ার আবদুল ওয়াদুদের ছেলে। তিনি ও তার ভাই আবদুল মান্নান সে সময় রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়ে যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটান, তা উঠে এসেছে এ মামলার বিচারে। ২৩৫ পৃষ্ঠার রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছে, আসামির বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা তিনটি অভিযোগই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন, হত্যা-গণহত্যার তিন অভিযোগেই মাহবুবুরকে সর্বোচ্চ সাজা দিয়েছে আদালত। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে বলা হয়েছে রায়ে। রণদা প্রসাদ সাহা ও তার ছেলের হত্যাকান্ডের বিচারের মাধ্যমে প্রায় অর্ধশতাব্দী পার হলেও হত্যাকারীদের শাস্তির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। দেশের মানুষের সেবায় নিবেদিতপ্রাণ আর পি সাহাকে হত্যা করতে যাদের বিবেক বাধা দেয়নি, তারা দীর্ঘকাল ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, রণদা প্রসাদ সাহা ছিলেন মহান দানবীর ও অগ্রসর ব্যক্তি। তার কাজ তাকে দেশে ও বিদেশে স্বীকৃতি এনে দিয়েছে, যা বিতর্কের ঊর্ধ্বে। গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে তিনি অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। হিন্দুধর্মাবলম্বীদের নির্মূল করার পরিকল্পনা থেকেই রণদা প্রসাদ সাহাকে হত্যা করা হয়। আসামি তার রাজাকার দোসর ও পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর সহযোগে এসব অপরাধ করেছেন, এর সপক্ষে প্রমাণ পাওয়া গেছে। রণদা প্রসাদের বর্বর হত্যাকান্ড তার বিশ্বাস ও সৎ চিন্তার বিনাশ করতে পারেনি। তিনি নিজের জীবন ও অর্জিত সম্পদ মানবতার কল্যাণে এবং শিক্ষার প্রসারে ব্যয় করেছেন। এই অবদান ও মহৎ কাজের মাধ্যমে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। আদালতের এই পর্যবেক্ষণে প্রকারান্তরে একজন মহৎ মানুষের অবদানকেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যা অভিনন্দনযোগ্য।