মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মহাপ্রয়াণ

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মহাপ্রয়াণ

এ যেন মৃত্যুর মিছিল প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। কোনো বিরাম নেই। আমাদের সখীপুর উপজেলা সভাপতি আতোয়ার রহমান কদিন আগে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ছিলেন। তিনি গতকাল ইহজগৎ ত্যাগ করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। অন্যদিকে প্রবীণ আইনজীবী আমাদের নেতা ৭৬-৭৭ বছরের হাসান আলী রেজাকে কদিন থেকে পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই মনটা বেশ খারাপ। কোনো কিছুই ভালো লাগছে না। আমরা সবাই উৎকণ্ঠিত, উদ্বিগ্ন। তার পরিবার-পরিজন দুশ্চিন্তায় দিশাহারা। প্রশাসনের সঙ্গে আমার খুব একটা যোগাযোগ নেই। তাদের কাজ করতে অসুবিধা হবে মনে করে কোনো ব্যাপারে কিছু বলি না। তবু একজন মানুষের জীবন নিয়ে হেলাখেলা করা যায় না। সূরা আল মায়েদায় আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘সমাজে ফ্যাসাদ এবং হত্যা ব্যতিরেকে কেউ যদি কাউকে হত্যা বা খুন করে তাহলে সে যেন সারা মানবজাতিকে হত্যা করল। আবার কেউ যদি একটি প্রাণ বাঁচাতে বা রক্ষা করতে পারে তাহলে সে বিশ্বের সব প্রাণিকুলকে বাঁচাল বা রক্ষা করল।’ আল্লাহ এটা বনি ইসরাইলদের উদ্দেশে বলেছিলেন। তাই যখনই কোনো বিষয় আসে তা আবার জীবনসংক্রান্ত হলে প্রাণপণে চেষ্টা করি। টাঙ্গাইলের এসপিকে ফোন করেছিলাম। তিনি খুবই আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। নির্বাচনের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়নি। আসাদুজ্জামান খান কামালকে সব সময় ছোট ভাইয়ের মতোই দেখি। ভদ্রলোক অসম্ভব সম্মান করেন। তাই তাকে ফোন করেছিলাম। মনে হয় দুবার রিংয়ের পরই-

- হ্যালো, লিডার কেমন আছেন? কী করতে পারি? বলেছিলাম,

- বিপদে পড়ে ফোন করেছি।

- হঠাৎ আবার কী বিপদ?

- না, আমাদের এক প্রবীণ নেতা টাঙ্গাইল জজ কোর্টের আইনজীবী। ৭৬-৭৭ বছরের হাসান আলী রেজাকে তিন দিন হলো পাওয়া যাচ্ছে না। আপনার যদি কিছু করার থাকে করুন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে আইজি, ডিআইজিসহ অনেকের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। এমনকি টাঙ্গাইলের এসপির সঙ্গেও। দুই দিন আগে টাঙ্গাইল থানার ওসিকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। ওসি আবার আমার এক প্রিয় মুক্তিযোদ্ধার ছেলে। বলেছিলেন, ‘স্যার, আমরা সব ক্লু পেয়ে গেছি। ইচ্ছা করেই বলছি না। দু-এক দিনের মধ্যে সবকিছু জানা যাবে।’ বলেছিলাম, লোকটিকে কি জীবিত পাওয়ার সম্ভাবনা আছে? ওসি বলেছিলেন, ‘সম্ভাবনা আছে।’ খুবই আশান্বিত হয়েছিলাম। কিন্তু গত পরশু পাঁচ দিনের দিন হাসান আলী রেজার লাশ আকুর টাকুর পাড়ার লৌহজং নদীতে ভেসে উঠলে এলাকার মানুষ খবর দিলে থানার লোকজন লাশ পানি থেকে ওঠালে হাসান আলী রেজার ছেলেরা, আমাদের লোকজন এবং বারের উকিলরা তাকে শনাক্ত করেন। টাঙ্গাইল কোর্ট মসজিদে গত পরশু রবিবার সকাল ১০টায় ছিল হাসান আলী রেজার নামাজে জানাজা। টাঙ্গাইল কোর্ট মসজিদ কাদেরিয়া বাহিনীর প্রাতঃস্মরণীয় মুক্তিযোদ্ধা ব্রিগেডিয়ার ফজলুর রহমান এবং আমার বাবা গোড়াপত্তন করেছিলেন। মসজিদ করার জন্য ব্রিগেডিয়ার ফজলুর রহমানকে মামলায়ও পড়তে হয়েছিল। বাবাও আসামি ছিলেন। এখন সেটা জেলা সদরের অন্যতম মসজিদ। খুব সম্ভবত সরকারি খরচে নতুন করে তৈরি করার কাজ শুরু হয়েছে। এর আগে এসপি, ডিসির দু-তিনটি ইফতার মাহফিলে অংশ নিয়ে কোর্ট মসজিদে মাগরিবের নামাজ আদায় করেছিলাম। জীবনে এই প্রথম সেখানে হাসান আলী রেজার নামাজে জানাজায় শরিক হয়েছি। জানাজায় মেয়র মিরন ছিলেন, ছিলেন টাঙ্গাইলের জেলা জজ। বহুদিন পরে কাদেরিয়া বাহিনীর প্রশাসক আবু মোহাম্মদ এনায়েত করিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ বীরবিক্রম, ফজলুল হক বীরপ্রতীক, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের যুগ্মসম্পাদক অধ্যক্ষ ইকবাল সিদ্দিকী, বারের সভাপতি আলো, সেক্রেটারি ও আরও অনেকে জানাজায় শরিক হয়েছিলেন। বলতে গেলে কয়েক শ অ্যাডভোকেটসহ হাজারের ওপর সাধারণ মানুষ হাসান আলী রেজার জানাজায় শামিল হয়েছিলেন। কীভাবে তিনি গুম হলেন বারের উকিলরা যেভাবে তৎপর তাতে আমার মনে হয় অবশ্যই প্রকৃত অপরাধী ধরা পড়বে এবং বিচার হবে। মনটা ছিল বড় ভারাক্রান্ত। নামাজে জানাজা শেষে গাড়িতে উঠতে যাব তখন কে একজন বলল, এরশাদ মারা গেছেন। জনাব এরশাদ সেনাবাহিনীর প্রধান হয়েছিলেন। উচিত ছিল না। কিন্তু হয়েছিলেন। তিনি সংবিধান লঙ্ঘন করে রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। সেটাও হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু হয়েছিলেন। ’৯০-এ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তিনি এ পর্যন্ত রাজনীতিতে টিকে ছিলেন- এমন ঘটনাও দ্বিতীয়টি নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তিন দলীয় জোট তাকে যেভাবে টেনে হিঁচড়ে ক্ষমতা থেকে নামিয়েছিল তার তুলনা হয় না। কোনো সেনাশাসক বা স্বৈরাচার ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর কখনো কোনো দিন রাজনীতিতে টেকেনি। সেটা ইস্কান্দার মির্জা, আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া কেউ না, একমাত্র এরশাদ ছাড়া। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ৯ বছর দাপটে দেশ শাসন করে ক্ষমতাচ্যুত হয়েও রাজনীতিতে টিকে ছিলেন। তিনি যদি মিজান চৌধুরী, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনকে আরও কিছুদিন দল চালাতে দিতেন এবং জেলভীতি ত্যাগ করতে পারতেন তিনিই হয়তো পৃথিবীতে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতেন। যা হয়নি তা নিয়ে চেঁচামেচি করে লাভ নেই। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ওভাবে রাজনৈতিক সুযোগ না দিলেও পারতেন। স্বৈরাচারকে তিনি জায়গা দিয়ে লাভবান হয়েছেন এটা অনেকে ভাবলেও দূর ভবিষ্যতে এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক জীবনে দেখার মতো একটি কালো দাগ হিসেবে বিবেচিত হবে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যু নিয়ে এত টানাটানি করা ভালো হয়নি। ফুসফুস কাজ করছে না, কিডনি বিকল, লিভার সাড়া দিচ্ছে না তার পরও তাকে জোর করে রাখার কোনো মানে হয় না। এটা অত্যন্ত শরিয়তবিরোধী। তবু শেষ পর্যন্ত তাকে যে মরতে দেওয়া হয়েছে সেজন্য আল্লাহর প্রতি হাজারো শুকরিয়া জানাই। কী যে হয়েছে, দেশে সমাজে এখন কারও জীবনের নিরাপত্তা নেই, স্বাভাবিক মৃত্যুর অধিকার পর্যন্ত আমরা হারিয়ে ফেলেছি; এরশাদও তাদের একজন।

সে যাক, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে আমি খুব একটা চিনতাম না, জানতাম না। তাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে কোনো দিন দেখিনি। মানুষের দোয়া এবং ভালোবাসায় ’৯০-এ যখন দেশে ফিরি তখন তিনি ক্ষমতাচ্যুত। ৬ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেছিলেন। আমি সেদিন লন্ডনে। দু-তিন দিন পর দিল্লি হয়ে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় এসেছি। লাখ লাখ মানুষ ঢাকা বিমানবন্দরে আমাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৩২ ধানমন্ডির বাড়িতে পৌঁছতে ৭ ঘণ্টা লেগেছিল। ঢাকায় আমার থাকার জায়গা ছিল না। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা খুব চিন্তিত ছিলেন। ৩২-এর বাড়িতেই থাকতে বলেছিলেন। আমি স্মৃতিকাতর, আবেগী মানুষ। ৩২-এর বাড়ি ছিল আমার কাছে সবচাইতে পবিত্র। সেখানে থাকার কোনো চিন্তা কোনো দিন ছিল না। পরে মোহাম্মদপুরে দুলাল-শাহানার বাড়িতে উঠি। সেখান থেকে চার দিন পর বাবর রোডে যারা ছিল তারা পালিয়ে গেলে আবার সেই বাড়িতে উঠি। বৈধ-অবৈধ নানা কথার পরও এখনো সেখানেই আছি।

ছেলেবেলায় স্কুল পালানো, বাড়ি পালানো একেবারে অবাধ্য নাদান ছিলাম। কলেজে যাওয়ার আগে বই আমাকে একেবারেই টানত না। কলেজে গিয়ে লেখাপড়ায় যখন আকৃষ্ট হলাম দু-তিন বছর ঘুরতে না ঘুরতেই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। মাত্র কয়েকদিনের যুদ্ধে পাকিস্তান বদলে বাংলাদেশ হলো। বাঁধনছাড়া আমি মানুষের ভালোবাসায় দায়িত্ব ও কর্তব্যে কেমন যেন আটকে গেলাম। বঙ্গবন্ধু আমাকে সন্তানের মতো স্নেহ করতেন। আমিও তাকে উন্মাদের মতো ভালোবাসতাম, বিশ্বাস করতাম, কথা শুনতাম। কী করে কী হয়ে গেল। একদিন মুয়াজ্জিনের ‘আস্সালাতু খাইরুম মিনান্নাউম’-এর সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু হারিয়ে গেলেন। আমার এবং আমার পরিবারের জীবন ছারখার হয়ে গেল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে প্রতিরোধ গড়ে তুললাম। চলল বেশ কয়েক বছর। হঠাৎ ’৭৭-এ ইন্দিরা গান্ধীর পতন হলে মোরারজি দেশাই ক্ষমতায় এলেন। আবার সব ভেঙে খানখান হয়ে গেল। কারও কোনো ঠিক-ঠিকানা, কোনো নিশ্চয়তা নেই। ছুটলাম পাটনায়। বিশাল হৃদয় সমর গুহ নেতাজি সুভাষ বোসের একসময়ের সহকারী, আমায় নিয়ে গেলেন সর্বোদয় নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণের কাছে। তারই চেষ্টায় মোরারজি দেশাইর হাত থেকে বেঁচে গেলাম। শুধু আমি নই, ’৭৭-৮১ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্য যারা ভারতে ছিলেন তারাও সে যাত্রায় বেঁচে গেলেন। ’৯০-এ দেশে ফিরলাম। তখন এরশাদ ক্ষমতাচ্যুত। কয়েক বছর তিনি জেল খাটেন। কিন্তু জেল থেকে বার বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। সেই মানুষটা চলে গেলেন। আরও অনেক ভালোভাবে তিনি যেতে পারতেন। কিন্তু তা হলো না। এরশাদের সঙ্গে আমার কোনো পরিচয় ছিল না। চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ হয়েছিল ’৮৫ সালে। প্রায় ১৫-২০ জন মিলে চার বছর পরিশ্রম করে মুক্তিযুদ্ধের ওপর হাজার পৃষ্ঠার ‘স্বাধীনতা ’৭১’ লিখেছিলাম। কলকাতার দে’জ পাবলিকেশন থেকে ‘স্বাধীনতা ’৭১’ ছাপা হলে বইটি নিয়ে বেশ সাড়া পড়ে। বাংলাদেশে কয়েকটি কপি পাঠানো হলে ঢাকা বিমানবন্দর ও বেনাপোলে বইসহ বাহকদের আটক করা হয়। পরে যদিও বাহকদের ছেড়ে দেওয়া হয়, কিন্তু ‘স্বাধীনতা ’৭১’ এরশাদ সরকারের হাতে বন্দী থাকে। একসময় বেশ ক্ষুব্ধ হয়ে রাষ্ট্রপতি এরশাদকে চিঠি দিয়েছিলাম। একদিন হঠাৎই সে চিঠির উত্তর আসে। চিঠি পড়ে অভিভূত হই। তাই তার বিদায়ের দিনে তার সেই অসাধারণ চিঠি এখানে তুলে দিলাম-

‘প্রিয় সিদ্দিকী সাহেব,

আপনার পত্র এবং সহজ সরল ও আন্তরিক মন্তব্যের জন্য অশেষ ধন্যবাদ। আমার সুযোগ হয়েছে আপনার বইটি পড়ার। বিমানবন্দরের গতানুগতিক নিয়মবিধির কারণেই বইটি হয়তো আটক করা হয়েছিল। অবিলম্বে তা ছেড়ে দেওয়ার জন্য আমি ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছি।

বাংলাদেশের মানুষের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা, তাঁদের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং সর্বোপরি স্বাধীনতার রক্তলাল সূর্যখচিত পতাকাকে ছিনিয়ে আনার জন্য আপনি জীবনপণ সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। আমার সকল প্রচেষ্টা, সকল উদ্যম সেই কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তোলার লক্ষ্যেই নিয়োজিত। এতকাল ধরে যাঁরা ছিলেন বঞ্চিত, অবহেলিত তাঁদের ভাগ্যের উন্নয়ন, বিশেষ করে গ্রাম বাংলার কোটি কোটি মূঢ়, ম্লান, মূক মুখে আমি হাসি ফোটানোর চেষ্টা করে চলেছি। মুক্তিযুদ্ধের মহান চেতনার স্থায়ী রূপ প্রদান ও মুক্তিযোদ্ধাদের সত্যিকার ও বাস্তব কল্যাণ সাধনের প্রয়াস পেয়েছি আমি আমার ক্ষুদ্র শক্তিতে। এসব প্রয়াসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের জানা-অজানা বীর শহীদদের জন্য জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণ, মূল নকশা অনুযায়ী রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের অমর শহীদানের উদ্দেশে নিবেদিত ঐতিহাসিক কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সম্প্রসারণ ও সংস্কার সাধন, পাঠ্যপুস্তকে বীরশ্রেষ্ঠদের জীবনী অন্তর্ভুক্ত করা, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় স্থাপন, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন ইত্যাদি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ সমুন্নত রাখার যে প্রচেষ্টা আমি চালিয়ে যাচ্ছি তা অবশ্যই অব্যাহত থাকবে।

একটি স্বাধীন দেশে একে অপরের মতের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ প্রদর্শন এবং সহনশীলতা অপরিহার্য বলে আমি বিশ্বাস করি। আমি সর্বান্তঃকরণে বিশ্বাস করি যে, দল-মত-নির্বিশেষে সবাই দেশপ্রেমিক। মতের অমিল হওয়া মানেই দেশদ্রোহিতা নয়। কতিপয় মৌলিক প্রশ্নে সমঝোতায় উপনীত হয়ে আমার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গণতন্ত্রে উত্তরণের মধ্য দিয়ে দেশে একটি সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য আমি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

দুঃখের বিষয়, জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে আপনার মতো একজন নিবেদিতপ্রাণ অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধার মূল্যবান সেবা থেকে দেশ আজ বঞ্চিত।

আমি আপনার ও আপনার স্ত্রীর শুভ কামনা করি।

এরশাদ।’

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জেল থেকে বেরোবার পর ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা হয়। রংপুরে তার বাড়ি। তার মা আর আমার মায়ের চেহারা প্রায় এক। পরে ভালো করে খেয়াল করেছি বয়সী মায়েদের চেহারা প্রায় সবার একই রকম। তাই তিনি ঢাকা থেকে রংপুর যাওয়ার পথে, অনেক সময় রংপুর থেকে ঢাকা ফেরার পথে আমার মাকে দেখতে টাঙ্গাইলের বাসায় আসতেন। আজ তিনি নেই, অনেক কথা মনে পড়ে। হঠাৎই কাল রাতে আমার বহুদিনের মুক্তিযুদ্ধের সাথী চেয়ারম্যান আতোয়ার রহমান পরপারে চলে যাওয়ায় মনটা আরও ভারী হয়ে গেছে। একটু পরই জানাজায় যাচ্ছি। তাই দীর্ঘ তিন-চার দশক ভালোমন্দের ব্যাপক আলোচিত এরশাদকে নিয়ে পরের সংখ্যায় কিছু লেখার ইচ্ছা রাখি। পরম দয়াময় আল্লাহ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মিঞা মো. হাসান আলী রেজা ও আতোয়ার রহমানকে ক্ষমা করে বেহেশতবাসী করুন।

লেখক : রাজনীতিক।

www.ksjleague.com

সর্বশেষ খবর