শুক্রবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভারতীয় রাজনীতিতে হিন্দুত্ববাদ মুছে যাক

নূরে আলম সিদ্দিকী

ভারতীয় রাজনীতিতে হিন্দুত্ববাদ মুছে যাক

পৃথিবীর মধ্যে বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারত। মুক্তিযুদ্ধের সময় শুধু আমাদের ১ কোটি শরণার্থীর নির্ভয় আশ্রয় প্রদানই নয়, শরণার্থী ক্যাম্পগুলোর খাদ্য, চিকিৎসাসহ সামগ্রিক ব্যয়ভার ভারত অকপটে গ্রহণ করেছে। যুদ্ধের পুরোটা সময় এ ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে তারা তাদের নিজস্ব অর্থনীতির ওপর অম্লান বদনে একটা বিরাট চাপ সহ্য করেছে। এ ছাড়া প্রবাসী সরকারের সামগ্রিক ব্যয়ভার এবং কূটনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার সম্পূর্ণ দায়িত্বও তারা অকপটে চালিয়ে গেছে। যে কোনো বিবেকবান ব্যক্তি বর্ণ, গোত্র ও ধর্মবিশ্বাস নির্বিশেষে স্বীকার করতে বাধ্য, পৃথিবীর ইতিহাসে এটি একটি বিরল ঘটনা। বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস পর্যালোচনায় এরূপ ঘটনার উদাহরণ খুঁজে বের করা দুরূহ। আমরা যারা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের অংশীদার ছিলাম বা নেতৃত্ব প্রদানের সৌভাগ্য অর্জন করেছিলাম, তারা শতভাগ নিশ্চিত- ভারতের ত্রিপুরা, মেঘালয় তো বটেই, বিশেষ করে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ যেভাবে পাশে দাঁড়িয়েছিল, তাকে নিছক একটা উন্মাদনাই বলা চলে। ত্রিপুরা- বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে অসংখ্য শরণার্থী ক্যাম্প গড়ে ওঠে। বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত সহস্র সহস্র দুরন্ত দামাল ছেলে ভারতে আশ্রয় নিলে ভারতীয় সরকারের প্রশাসনের সহযোগিতায় আমরা সবল উদ্যমী ও দেশপ্রেমিক প্রায় প্রতিটি মানুষকে যুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ গ্রহণের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করি। এ উদ্যোগে শুধু ভারতীয় প্রণোদনা ছিল না, হিংস্র হায়েনার মতো যে পাকিস্তানি সৈন্যরা আমাদের ওপর আক্রমণ করেছিল, আমাদের বুকনিঃসৃত রক্তে বাংলার শ্যামল মাটিকে রঞ্জিত করেছিল, দেশের মুষ্টিমেয় পিশাচ রাজাকারের সাহায্যে মা-বোনদের ইজ্জতকে ভূলুণ্ঠিত করেছিল, যাদের বুক ফাটা আর্তনাদে বাংলার মাটি বার বার কেঁপে কেঁপে উঠেছিল, তাদের বিরুদ্ধে শুধু প্রতিশোধই নয়, বাংলার মাটি থেকে তাদের সম্পূর্ণ বিতাড়িত করার রক্তশপথে উজ্জীবিত দৃপ্ত তাজা প্রাণকে শুধু সামরিক প্রশিক্ষণই নয়, তাদের সংগঠিত করা, তাদের একটি শৃঙ্খলার আওতায় এনে শত্রুর মোকাবিলা করার জন্য ভারী, মাঝারি এবং হালকা প্রয়োজনীয় নানা অস্ত্রে সজ্জিত হতে সাহায্য করেছিল উদার ও অবারিত চিত্তে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যুদ্ধে অংশ নিয়ে পাকিস্তানি সৈন্যদের দখলদারিত্ব সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করে বাংলাদেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইলের পূতপবিত্র মাটিকে তারা সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন ও সার্বভৌম করতে চেয়েছিল।

এ সামগ্রিক রাজনৈতিক পথপরিক্রমণের অভিযাত্রায় আমারও একটি নিবিড় ও নিরবচ্ছিন্ন সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ১৯৬২ সালে শিক্ষা আন্দোলনের পাশাপাশি (হামিদুর রহমান কমিশন বাতিল) সোহরাওয়ার্দী সাহেবের মুক্তির দাবিতে ছাত্ররা রাজপথে নামে। বিশ^বিদ্যালয় আন্দোলনের প্রশ্নে অগ্নিগর্ভ হতে থাকে। তখন আইয়ুব প্রশাসন সোহরাওয়ার্দী সাহেবের মুক্তি দিতেও বাধ্য হয় এবং বলাই বাহুল্য, হামিদুর রহমান কমিশনও বাতিল হয়ে যায়। ছাত্র আন্দোলনের এটি একটি বিরাট বিজয় হলেও চূড়ান্ত বিজয় ছিল না। কারণ, ছাত্র আন্দোলনের অন্তর্নিহিত আকাক্সক্ষা ছিল, সামরিক শাসন সম্পূর্ণ বাতিল এবং সর্বজনীন প্রত্যক্ষ নাগরিক ভোটের মাধ্যমে উভয় পাকিস্তানে একটি নির্ভেজাল নিরঙ্কুশ ও যে কোনো বন্ধনীবিবর্জিত সাধারণ ও সর্বজনীন নির্বাচন। ছাত্রসমাজ বদ্ধপরিকর ছিল, মৌলিক গণতন্ত্র ধরনের নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন পরিহার করে পাকিস্তানে সবার অংশীদারিত্বে সাধারণ নির্বাচন হলে ’৫৪-এর নির্বাচনে যে অভূতপূর্ব ও অবিস্মরণীয় বিজয় হয়েছিল, তারই পুনরাবৃত্তি ঘটত। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী যারা সমগ্র পাকিস্তানের প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামোকে সম্পূর্ণভাবে কুক্ষিগত করে ফেলেছিল, তারাই একটি অদৃশ্য চুক্তির মাধ্যমে ’৫৮ সালে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনটি হতে দেয়নি। সামরিক জান্তার ক্রীড়নক পাকিস্তানের তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি ইস্কান্দার মির্জার মাধ্যমে সামরিক শাসন জারি করে ১৯৫৮ সালের ২৭ অক্টোবর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অধ্যক্ষ আইয়ুব খানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। এখানে অকুণ্ঠচিত্তে স্বীকার করতে হয়, এ খেলার সবটুকুই পাকিস্তানি সামরিক জান্তা, যেটি পশ্চিম পাকিস্তানের ভূস্বামী ও শিল্পপতিদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে ছিল, তাদের মাধ্যমেই এ খেলার ছক তৈরি হয়। পশ্চিম পাকিস্তানের ভূস্বামী, শিল্পপতি ও রাজনীতিবিদরা আইয়ুব খানের সামরিক শাসন জারির সময় একটা ঘোরের মধ্যে কাটাচ্ছিলেন। হয়তো বা তাদের স্বকপোলকল্পিত ধারণা ছিল, এক-দুই বছরের মধ্যেই আইয়ুব খান ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াবেন এবং যেনতেন প্রকারের একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করবেন। তাহলেই পশ্চিম পাকিস্তানের ভূস্বামী ও শিল্পপতি এবং তাদের লেজুড় পূর্ব পাকিস্তানের কিছু জনবিচ্ছিন্ন নেতাকে জড়ো করে একটি লোকদেখানো নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়াশীল মুসলিম লীগকে আবার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করবেন। কিন্তু ওই স্বপ্নবিলাসী জনবিচ্ছিন্ন ও ক্ষমতাশ্রিত নেতৃত্ব আইয়ুব খানকে আদৌ অনুধাবন করতে পারেননি। স্যান্ডহার্স্টের রয়েল মিলিটারি একাডেমির গ্র্যাজুয়েট পাকিস্তানের সেনাধ্যক্ষ আইয়ুব খান তার সুন্দর গোঁফের আড়ালে একটা মুচকি হাসি দিয়ে সবাইকে পরোক্ষ বার্তা দিয়েছিলেন, তোমরা অপেক্ষা কর, আমি তোমাদের জন্য ক্ষমতার রসমালাই নিয়ে আসছি। আইয়ুব খান একদিকে তার বুদ্ধির দূরদর্শিতায়, অন্যদিকে পাকিস্তানের রাজনীতিতে বেপরোয়া দুর্নীতি ও মন্ত্রিসভার ভাঙাগড়ার নির্বোধ উন্মত্ততায় পাকিস্তানের জনগণের কাছে এমনকি বিশ্বের গণতান্ত্রিক মহলের কাছে চূড়ান্ত হেয় প্রতিপন্ন করে তোলে। চতুর ও কূটকৌশলী আইয়ুবের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও পুঁজিপতিদের প্রত্যক্ষ মদদ ছিল ক্ষমতা বদলের আত্মঘাতী এ খেলায়। ফলে ১৯৫৮ সালে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনটি ভেস্তে গেল। তার বদলে নাজিল হলো ইস্কান্দার মির্জার মদদে আইয়ুব খানের নেতৃত্বে সামরিক শাসন। ওই সময়ের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে যারা বিন্দুমাত্র অবহিত ছিলেন, তারা বিষয়টি মনে করে দুঃস্বপ্নের বিভীষিকার মতোই আজও আঁতকে ওঠেন। ইস্কান্দার মির্জার মদদে হলেও জেনারেল আইয়ুব এসেছিলেন সামরিক বাহিনীর পূর্ণ সমর্থন ও আস্থা নিয়ে।

মুসলিম লীগের নেতৃত্ব প্রথম দিকে আইয়ুব খানকে পুরোপুরি বিশ্বাস করলেও তার সুকৌশলী, সূক্ষ্ম ও সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক চাল দেরিতে হলেও অনুধাবন করতে পারেন এবং ক্ষমতা গ্রহণকালে আইয়ুব খানকে সমর্থন প্রদানকারীর একটি বিরাট অংশ অন্তর্দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়লে শেষ পর্যন্ত কাউন্সিলের মাধ্যমে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন। সমগ্র পাকিস্তানে কনভেনশন মুসলিম লীগের নেতা হন আইয়ুব খান এবং কাউন্সিল মুসলিম লীগের নেতা হন নুরুল আমিন।

এ দেশের বুদ্ধিদীপ্ত অকুতোভয় ছাত্রসমাজ আইয়ুব খানকে চিনতে ভুল করেনি। কিন্তু অকালকুষ্মা- ইস্কান্দার মির্জা পাকিস্তানের রাজনীতিতে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে কার্যকর করার জন্য হয়তো জন্মগ্রহণ করেছিলেন। প্রাদেশিক পরিষদ থেকে সদস্য কুড়িয়ে যে পড়হংঃরঃঁবহঃ ধংংবসনষু গঠিত হয়, তার মাধ্যমেই ১৯৪৭ থেকে ’৫৮ সাল পর্যন্ত ১১টি বছর সরকার ভাঙাগড়ার যে বিরামহীন রাজনৈতিক খেলা শুরু হয়, তাতে রাজনীতিকদের ওপর মানুষের শ্রদ্ধার মানসিকতাটা একদমই উবে যায়। দুর্নীতি সিন্দাবাদের দৈত্যের মতো পাকিস্তানের রাজনীতির ওপর চেপে বসে। সবকিছু মিলিয়ে পাকিস্তানের রাজনীতির অবস্থা হয়ে যায় হ-য-ব-র-ল। কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তানের বৈঠকের প্রশ্নে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জওহরলাল নেহেরু একবার একান্তই তাচ্ছিল্য করে বলেছিলেন, আমি কোন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করব? সকালের না বিকালের? এ উক্তিটি রাজনৈতিকভাবে একান্ত অসম্মানজনক হলেও খুবই প্রযোজ্য ছিল। ভূস্বামী, শিল্পপতি এবং প্রতিক্রিয়াশীল ডানপন্থি রাজনীতিবিদদের সহায়তায় ও ইস্কান্দার মির্জার প্রত্যক্ষ মদদে আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করে দন্ডমুন্ডের কর্তা বনে যান এবং পাকিস্তানের তৎকালীন ক্ষমতাশ্রয়ী রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে সহজেই একটি শক্তিশালী জনমত গড়ে তুলতে সক্ষম হন। সামরিক শাসনের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণকে জায়েজ করার জন্য আইয়ুব খান সূক্ষ্ম চাতুর্যের সঙ্গে মৌলিক গণতন্ত্রের ধারায় হ্যাঁ-নার যে ভোটটি করেন, তাতে শতকরা ৯০ ভাগের ওপর ভোট পেয়ে তিনি দেশের মানুষকে তো বটেই, সারা গণতান্ত্রিক বিশ^কেও আহাম্মক বানিয়ে ফেলেন। যে ঘোর ভাঙতে এবং মৌলিক গণতন্ত্রের প্রাচীর ভেঙে সাধারণ নির্বাচনের জোরালো ও সর্বজনীন দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করতে প্রায় ১০ বছর লেগে যায়। ফাঁকতালে আইয়ুব খান উন্নয়নের ১০ বছর নামে একটি ডিকেডও উদ্যাপন করে ফেলেন। আমাদের পাশের দেশ ভারতবর্ষে কস্মিনকালে সামরিক শাসন তো দূরে থাক, গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় কখনো বিন্দুমাত্র ব্যত্যয় আসেনি।

সে যাই হোক, পাকিস্তানের এক দিন পর ভারত স্বাধীন হলেও তার চেহারাটাই ছিল ভিন্ন। গণতান্ত্রিক সূর্যের নিষ্কলুষ আলোকরশ্মির মতো প্রদীপ্ত, উদ্দীপ্ত ও উজ্জ্বল। এই ভারতের রাজনৈতিক অগ্রযাত্রায় নেহেরু পরিবারের সবচাইতে প্রত্যয়দৃঢ়, কুশলী ও সফল নেত্রী ইন্দিরা গান্ধী তার দেহরক্ষীর গুলিতে নিহত হওয়ার পরপরই সোনিয়ার স্বামী রাজীব গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অভিষিক্ত হন। রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্ক-বিযুক্ত ভারতীয় বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার একজন যোগ্য ও অভিজ্ঞ পাইলট সরাসরি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আসনে সসম্মানে অধিষ্ঠিত হন। ভারতীয় রাজনীতির সিংহভাগ সময় নেহেরু পরিবারের দখলে রাখার যে ভিত্তি, তা রচনায় নেহেরুর চাইতে ইন্দিরা গান্ধীর অবদান অধিকতর। ভারতীয় রাজনীতিতে মোরারজি দেশাই, গুলজারিলাল নন্দ, লাল বাহাদুর শাস্ত্রী, আই কে গুজরালসহ একগুচ্ছ অভিজ্ঞ নেতা ভারতীয় কংগ্রেসে সগৌরবে অবস্থান করা সত্ত্বেও যেহেতু নেহেরু পরিবার ভারতীয় ঐক্যের মানদন্ড ছিল, তাই দেহরক্ষীর গুলিতে ইন্দিরা গান্ধী নিহত হওয়ার পর রাজীব গান্ধীকে ধরে এনে প্রধানমন্ত্রী বানালে কংগ্রেস সাংসদরা তাকে সানন্দ চিত্তে গ্রহণ করেন। এটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে, নেহেরু পরিবার ভারতীয় রাজনীতির ঐক্যের কত শক্তিশালী প্রতীক। ইন্দিরা গান্ধীর মতো বিশ্বখ্যাত নেত্রীর অবর্তমানে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাজীব গান্ধী শুধু যেনতেন প্রকারে দায়িত্ব পালন করেননি, বরং একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্বের স্পষ্ট ছাপ রাখতে সক্ষম হন। রাজীবের নেতৃত্বে ১৯৮৪ সালের সর্বভারতীয় এমপি নির্বাচনে রাজীব বিস্ময়কর সংখ্যাগরিষ্ঠতাসহ বিজয় অর্জন করেন। অনেকে এটিকে ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর প্রতি সহানুভূতির ভোট মনে করলেও ৫৪২ আসনের মধ্যে ৪১১টি পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। কংগ্রেসের ওই জয় ভারতীয় সংসদে সর্বকালের রেকর্ড। ইন্দিরা গান্ধী ভারতকে শুধু একটি সুদূরপ্রসারী ভবিষ্যতের পথই বিনির্মাণ করেননি, বিশ^রাজনীতিতে ভারত যে একটি প্রভাবশালী নাম এবং তার অস্তিত্বকে অস্বীকার করা আদৌ সম্ভব নয়, এটি সুদৃঢ়ভাবে প্রতিস্থাপিত করেছেন। এ সত্যটি নরেন্দ্র মোদি কেন, বিজেপি কোনো দিনই ইতিহাস থেকে মুছতে পারবে না। পারমাণবিক শক্তিধর ভারতকে তারা সেই সম্মানের অগ্রভাগে নিতে পারবেন না। এতদ্সত্ত্বেও ভারতীয় রাজনীতিতে অনেক উত্থান-পতন হয়েছে, ব্যাপক কারচুপির মাধ্যমে হলেও বিজেপি এবার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। ভারতকে যখন নরেন্দ্র মোদি হিন্দুত্ববাদের দামামা বাজিয়ে নির্ভেজাল হিন্দুস্তানে রূপান্তরিত করার সুপরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করেন, তখনই ভারতের স্বাধীনতা অর্জনকারী জাতীয়তাবাদী অসাম্প্রদায়িক শক্তি এবং ভারতীয় ঐক্যের মূল প্রতীক কংগ্রেস অনুধাবন করেছে যে, মোদিকে রুখতে হলে সোনিয়া গান্ধীর মতো অবিসংবাদিত ব্যক্তিত্বের প্রয়োজন। আমরা জানি, তিনি কিছুটা অসুস্থ। ভারত ও বাংলাদেশের সম্প্রীতি এবং সম্মানের সম্পর্কটি অক্ষুণ্ন রাখার জন্য ভারতে মোদির বিপক্ষে সোনিয়ার মতো শক্তিশালী অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী নেতৃত্বের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। আমি সোনিয়া এবং তার নেতৃত্বের দীর্ঘায়ু কামনা করি।

লেখক : স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা।

সর্বশেষ খবর