রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

গাছ লাগালে সদকায়ে জারিয়ার সওয়াব পাওয়া যায়

মাওলানা মুহাম্মাদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী

গাছ লাগালে সদকায়ে জারিয়ার সওয়াব পাওয়া যায়

প্রাকৃতিক ও পরিবেশগত ভারসাম্য রার েেত্র গাছ অবিকল্প ভূমিকা পালন করছে। এমনিতেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ দিনে দিনে বেড়ে চলেছে, বাড়ছে জনসংখ্যার চাপ, পাশাপাশি চলছে নগরায়ণ, বাড়ছে বিষাক্ত ধোঁয়া, বাতাসে সিসার পরিমাণ। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পরিবেশগত বিরূপতায় আমরা মুখোমুখি হচ্ছি খরা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্পসহ নানা ধরনের ভয়াবহ প্রতিকূলতার। প্রাকৃতিক দুর্যোগ রোধে গাছ পালন করে উপকারী বন্ধুর ভূমিকা।

গাছ সৃষ্টি ও পরিবেশগত ভারসাম্য রার কথা উল্লেখ করে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি বিস্তৃত করেছি ভূমিকে, স্থাপন করেছি পর্বতমালা এবং তা থেকে উদ্গত করেছি নয়ন জুড়ানো সব ধরনের উদ্ভিদ। এটি আল্লাহর অনুরাগী প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য জ্ঞান ও উপদেশস্বরূপ। আকাশ থেকে আমি বর্ষণ করি উপকারী বৃষ্টি এবং তা দ্বারা আমি সৃষ্টি করি উদ্যান, শস্যরাজি ও সমুন্নত খেজুর বৃ, যাতে আছে গুচ্ছ গুচ্ছ খেজুর।’ সূরা কাফ, আয়াত ৭-১০। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই লতা ও বৃ উদ্যানগুলো সৃষ্টি করেছেন এবং খেজুর বৃ, বিভিন্ন স্বাদবিশিষ্ট খাদ্যশস্য, জলপাই বাগান সৃষ্টি করেছেন। তারা একে অন্যের মতো এবং আলাদা। যখন গাছ ফলবান হয় তখন তোমরা গাছের ফল খাবে। আর ফসল তোলার দিনে তার দেয় প্রদান করবে এবং অপচয় করবে না।’ সূরা আনয়াম, আয়াত ১৪১। ‘তারা কি জমিনের প্রতি ল্য করে না? আমি তাতে প্রত্যেক প্রকারের কত উৎকৃষ্ট উদ্ভিদ উদ্গত করেছি। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে। কিন্তু তাদের অধিকাংশই বিশ্বাসী নয়।’ সূরা শুয়ারা, আয়াত ৭-৮।

গাছ লাগানোকে হাদিসে উত্তম ইবাদত বলা হয়েছে। ইসলামী পরিভাষায় যাকে সদকায়ে জারিয়া বলা হয়। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যখন কোনো মুসলমান একটি ফলবান বৃরে চারা রোপণ করে, আর এতে ফল আসার পর সে নিজে অথবা অন্য কোনো মানুষ তা থেকে যা খায় তা তার জন্য সদকা, যা চুরি হয়, যা কিছু গৃহপালিত পশু এবং অন্যান্য পাখপাখালি খাবে, এ সবই তার জন্য সদকা।’ বুখারি, মুসলিম। গাছ লাগানোর গুরুত্ব সম্পর্কে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তুমি যদি নিশ্চিতভাবে জানতে পারো যে কিয়ামত এসে গেছে আর তোমার হাতে একটি গাছের চারা আছে তার পরও তা লাগিয়ে দাও।’ মিশকাতল মাসাবিহ। পৃথিবীর তাপমাত্রা অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। এভাবে বাড়তে থাকলে বরফ গলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাবে এবং বন্যায় বড় ধরনের তিগ্রস্ত হবে মানুষ। এমনকি পৃথিবীর কোনো কোনো দেশ-মহাদেশ সমুদ্রপৃষ্ঠে তলিয়ে পর্যন্ত যেতে পারে। আমাদের দেশেরও সেই ঝুঁকি রয়েছে। গাছ অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি রোধ করে। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা কমায় এবং শীতকালে বাড়ায়। গাছ ক্যান্সার ও অন্যান্য রোগ সৃষ্টিকারী আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির প্রতিরোধক হিসেবে মানুষের উপকার করে। প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ গাছ। এ সম্পদ রার দায়িত্ব আমাদেরই। অকারণে আমরা গাছ কাটব না এবং শস্য নষ্ট করব না। জরুরি পরিস্থিতি তথা যুদ্ধের সময়ও রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গাছ কাটতে নিষেধ করছেন। ইবনে সাইদ (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মদিনার প্রতি প্রান্তে সীমানা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যাতে গাছপালা মুন্ডানো এবং কাটা না হয়। তবে যেগুলো উট খেয়ে ফেলে সেগুলো ছাড়া।’ আবু দাউদ।

এ পৃথিবী আমাদের। এখানে আমরা বসবাস করছি। আমাদের প্রজন্ম এখানে বেড়ে উঠছে। আমাদের কি উচিত নয়, যে পৃথিবীকে আমরা পেয়েছি, আমাদের প্রজন্মকে এর চেয়ে সুন্দর চমৎকার পৃথিবী উপহার দেওয়া। তবেই আমরা যোগ্য পূর্বসূরি হতে পারব। পৃথিবীকে সুন্দর করতে হলে, পরবর্তী প্রজন্মের কাছে দায়মুক্ত হতে চাইলে অবশ্যই প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার প্রতি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের এই ছোট্ট মাতৃভূমিকে একসময় সবুজ-শ্যামল দেশ বলা হতো। বর্তমানে সবুজের সেই সমাহার দিন দিন কমে আসছে। বনভূমি উজাড় হচ্ছে। গাছপালা কাটতে কাটতে ন্যূনতম বনভূমিও এখন নেই আমাদের। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে রেকর্ড পরিমাণ গরম পড়ছে। আবার রেকর্ড পরিমাণ শীতও হচ্ছে। এমনও দেখা যায়, দিনে তীব্র গরম, রাতে তীব্র শীত। আবহাওয়ার এই যে পরিবর্তন এতে জনজীবন তো বিপর্যস্ত হচ্ছেই, নানান রোগবালাই আমাদের কাবু করছে। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ কত মারাত্মক রোগ যে দেশবাসীকে ভুগিয়ে যাচ্ছে এবং আরও ভোগাবে তার ধারণাও করতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা। প্রকৃতির আঘাত থেকে বাঁচতে চাইলে অবশ্যই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রকৃতিকে প্রকৃতির মতো বিকশিত হতে দিতে হবে। দেশে বনায়নের পরিমাণ বাড়াতে হবে। সবুজের সমারোহ আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য বর্ষা হচ্ছে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সময়। এ সময় বৃক্ষ রোপণ করলে খুব বেশি পরিচর্যা করা লাগে না। প্রকৃতিই সকাল-বিকাল বৃষ্টি ঝরিয়ে গাছের পরিচর্যা করে। আসুন! এই পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখতে আমরা সবাই একটি করে ফলাদার-ছায়াদার বৃক্ষ রোপণ করি। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন।

লেখক : এমফিল গবেষক।

সর্বশেষ খবর