পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ছয়টি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা সীমিত। চিকিৎসক ও ওষুধ সংকটের কারণে রোগীদের কাছে হাসপাতালগুলোর আকর্ষণ সত্যিকার অর্থেই কম। কিন্তু এহেন হাসপাতালগুলোতেও বছরে লাখ লাখ টাকার ওষুধ ব্যবহারের হিসাব দেখানো হয় খরচের খাতায়। বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ছয়টি হাসপাতালে ৩৪ জন চিকিৎসক থাকার কথা, আছেন মাত্র আটজন। সিনিয়র নার্স ৩০ জনের বদলে ২০ জন। ফার্মাসিস্ট ৩৩ জনের বিপরীতে ১৫ জন। ফলে এসব হাসপাতালে রোগীরা চিকিৎসাসেবা কতটা পান তা প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়। অথচ এ হাসপাতালগুলোর জন্য বছরে বরাদ্দ দেওয়া হয় কোটি টাকার ওষুধ। যেগুলো রোগীদের নামে বিতরণ করাও হয় কাগজে-কলমে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ছয়টি হাসপাতালের মধ্যে রাজশাহীতে ২০ শয্যা, সৈয়দপুরে ৯০ শয্যা, লালমনিরহাটে ৩০ শয্যা, পার্বতীপুরে ১৬ শয্যা, পাকশীতে ৮০ শয্যা ও সান্তাহারে ৮০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল আছে। রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের হাসপাতালগুলোর জন্য ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট ৮৩ লাখ ৬৫ হাজার ৫২৯ টাকার ওষুধ কেনা হয়। এর মধ্যে রাজশাহীকে দেওয়া হয় ১৬ লাখ ৭৩ হাজার ১০৫ টাকার ওষুধ। গত অর্থবছরে রাজশাহী রেলওয়ে হাসপাতালে রোগী ভর্তি হন ২১৭ জন। আউটডোর থেকে চিকিৎসা নেন ২১ হাজার ৫৪৭ জন। এ হিসাব কতটা যথার্থ তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। কারণ প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সারা বছরই প্রায় রোগীশূন্য থাকে হাসপাতালটি। বরাদ্দকৃত ওষুধের সিংহভাগ বাইরে চলে যায় এমন অভিযোগও প্রবল। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসাসেবার সীমাবদ্ধতা ও অনিয়মের অভিযোগ একটি ওপেন সিক্রেট। ছয় দশক আগে নির্মিত এ হাসপাতালগুলো একসময় প্রশংসিত ছিল সেবার জন্য। কালের বিবর্তনে ওষুধ ও অন্যান্য খাতে বরাদ্দ বাড়লেও কমেছে সেবার মনোভাব। রেলওয়ের সব ক্ষেত্রে এলোমেলো করে দে মা লুটেপুটে খাই তত্ত্বের যে চর্চা চলছে হাসপাতালগুলোও তা থেকে মুক্ত নয়। চিকিৎসা মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। শত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও স্বাধীনতার পর থেকে এ খাতকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বাজেটের এক বড় অংশ ব্যয় হয় চিকিৎসা খাতে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের কারও কারোর অসততা চিকিৎসাসেবার সুযোগকে সংকুচিত করছে; যা সত্যিকার অর্থেই দুর্ভাগ্যজনক।