শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ফারাক্কার অভিশাপ

নদ-নদীর গতিরোধ কাম্য নয়

ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেওয়ায় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যা নতুনভাবে ছোবল হেনেছে। পদ্মায় পানির তোড়ে নৌযান চালানোও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে ফারাক্কায় পানি প্রত্যাহারের কারণে সংকটে পড়ে বাংলাদেশের মানুষ। বর্ষা মৌসুমে হঠাৎ ফারাক্কার সব গেট খুলে দেওয়ায় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নাটোর, রাজশাহী, মাদারীপুর ও রাজবাড়ীতে নদী ভাঙন তীব্র হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে রাজশাহীর দুটি বাঁধ। তীব্র স্রোতের কারণে পাটুরিয়ায় ফেরির সংখ্যা অর্ধেক কমানো হয়েছে। নাটোরের পদ্মায় পানি বৃদ্ধির কারণে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লালপুর, বিলমারিয়া ও ঈশ্বরদী ইউনিয়নের ১৮ চরের অন্তত ৩ হাজার মানুষ। পদ্মার পানি বৃদ্ধিতে হুমকির মুখে পড়েছে রাজশাহীর দুটি বাঁধ। এর একটি নগরীর বুলনপুরে, আরেকটি শ্রীরামপুরে। বাঁধ রক্ষায় বুধবার সকাল থেকে ফেলা হচ্ছে বালুভর্তি জিও ব্যাগ। তবে ধেয়ে আসা পানির প্রবল স্রোতে এখনো হুমকির মুখে রয়েছে বাঁধ দুটি। পদ্মায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় মাদারীপুরের শিবচরের চরাঞ্চলের তিন ইউনিয়নে তীব্র ভাঙন চলছে। বিলীন হয়েছে একটি মসজিদ ভবন, মাদ্রাসা, সড়ক ও অসংখ্য ঘরবাড়ি। এ ছাড়া ভাঙনে আক্রান্ত হয়েছে বহুতলবিশিষ্ট তিনটি স্কুল, ইউনিয়ন পরিষদ, বাজারসহ বহু স্থাপনা। ফারাক্কা বাঁধের কারণে ভারতের বিহারের বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যাকবলিত হওয়ায় ওই রাজ্যের পানিসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী ওই বাঁধ ভেঙে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। বলেছেন, নতুবা পানি নিষ্কাশনের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। বিহারে বন্যায় ৪০ জনেরও বেশি প্রাণ হারিয়েছেন। নদ-নদীতে বাঁধ নির্মাণ বা স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ রোধ আসলে কারও কল্যাণ আনে না। কলকাতা বন্দরের নাব্য রক্ষার নামে ফারাক্কা বাঁধ দেওয়া হলেও তা উদ্দেশ্য পূরণের বদলে ভারত ও বাংলাদেশ সবার জন্যই বিড়ম্বনা বয়ে আনছে। বিহারে বন্যা কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ৪০ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি তারই প্রমাণ। বাংলাদেশকে এখন ভুগতে হচ্ছে ফারাক্কাজনিত বন্যার অভিশাপে; যা কোনোভাবে কাম্য হওয়া উচিত নয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর