প্রিন্স নরোদম সিহানুককে একরকম বলা যায় কম্বোডীয় জাতির পিতা। ফ্রান্সের উপনিবেশ থেকে স্বাধীন কম্বোডিয়া আসে তার হাত ধরেই। কম্বোডিয়া ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা পায় ১৯৫৩ সালে। তার পর থেকে চলতে থাকে প্রিন্স নরোদম সিহানুকের শাসনামল। ষাটের দশকের সূচনালগ্নে পল পট কম্বোডিয়ায় কমিউনিজমকে চাঙ্গা করে তুললেন, সব কমিউনিস্ট দল পল পটের নেতৃত্বে এক ছাতার তলায় এসে দাঁড়াল। সারা দেশে পল পট ও তার বাহিনীর ভালোই একটা জনপ্রিয়তা দেখা দিল। প্রিন্স সিহানুকের বিষয়টা পছন্দ হলো না। উনি এই কমিউনিস্ট গ্রুপের নাম দিলেন খেমার-রুজ। রুজ শব্দের অর্থ লাল। নামটা নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেওয়া হলেও ধীরে ধীরে এই নামটাই স্টাবলিশড হয়ে গেল। সিহানুক কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ করলেন। পল পট শাগরেদদের নিয়ে পালালেন ভিয়েতনাম। আগে তো তার হাতে ছিল শুধু থিওরি। এবার এলো অস্ত্র। সিহানুক ভেবেছিলেন পল পট ভালা নয়, উনি পল পটকে তাড়িয়ে ভালো নিয়ে থাকবেন। কিন্তু সুখ বেশিদিন টিকল না। ’৭০-এর মার্চে মার্কিন মদদে কম্বোডিয়ায় একটা ক্যু হয়ে গেল। মার্শাল লন নল প্রিন্স নরোদম সিহানুককে মতা থেকে উৎখাত করলেন। সিহানুক নিলেন চীনে রাজনৈতিক আশ্রয়। মতার লড়াইয়ে সবচেয়ে বড় বিপাকে পড়ল বেচারা সাধারণ মানুষ। সিহানুক যে খুব ভালো শাসক ছিলেন ইতিহাস তেমনটা বলছে না, কিন্তু ফ্রান্সের হাত থেকে স্বাধীনতা বুঝে নেওয়ার কান্ডারি হিসেবে কম্বোডীয় সাধারণ নাগরিকদের কাছে তার একটা গ্রহণযোগ্যতা ছিল বইকি। যা হোক, প্রিন্সকে উৎখাতকারী এই আমেরিকা সমর্থিত সরকারকে মানুষ কিছুতেই মেনে নিতে রাজি হলো না। এমনিতেই ভিয়েতনামের সীমান্তে আমেরিকার নিয়মিত বোমাবাজিতে কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী মানুষজন নিয়মিত আহত-নিহত হচ্ছে। যেমন ৭ থেকে ১৭ ‘এ’ গ্রুপ, ১৮ থেকে ২৮ ‘বি’ গ্রুপ। তারপর এই গ্রুপগুলোর ১০০ বা ২০০ জনকে একত্রিত করে গড়ে তোলা হয় কো-অপারেটিভ। কো-অপারেটিভ-গুলোর সদস্যরা আর কখনই নিজের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারে না। কখনো দেখা হয়ে গেলেও অপরিচিতদের মতো আচরণ করতে হতো। মায়া-মমতার আভাস পাওয়া গেলেই হত্যা করা হতো। কো-অপারেটিভ-গুলোকেই ঘোষণা করা হয় এক একটি পরিবার হিসেবে। এসব পরিবারে কোনো পিতা-মাতা থাকে না। কারণ সবার পিতা-মাতা একজনই- তা হলো পার্টি।