র্যাগিংয়ের নামে জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের হাতে নবীনদের নিগৃহীত হওয়ার ঘটনাকে জংলি প্রথা বললেও কম বলা হবে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, উপমহাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ জংলি প্রথা বিরাজ করছে বছরের পর বছর ধরে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন কলেজে র্যাগিংকারীদের দৌরাত্ম্য নবীনদের মনে সিনিয়র শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে বিরূপ ধারণা গড়ে উঠছে। এ বর্বরতার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষীয় সচেতনতাও গড়ে উঠেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে র্যাগিং নামের পৈশাচিক অপরাধে জড়িত থাকার দায়ে। আশার কথা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘র্যাগিংয়ের’ নামে জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের হাতে নবীনদের নির্যাতন ঠেকাতে কমিটি ও স্কোয়াড গঠনের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। রবিবার এ বিষয়ে এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ রুলসহ উপরোক্ত আদেশ দেয়। আদালতে আবেদনকারী আইনজীবী ইশরাত হাসান নিজেই শুনানি করেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আদালত তিন মাসের মধ্যে র্যাগিংবিরোধী কমিটি ও স্কোয়াড গঠনের নির্দেশ দিয়েছে। কমিটি র্যাগিংয়ের অভিযোগ নেবে, র্যাগিং বন্ধে সুপারিশ করবে। আর স্কোয়াড র্যাগিং প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেবে বা প্রতিকার দেবে। র্যাগিংয়ের অভিযোগে সম্প্র্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারের উদাহরণ তুলে ধরে রিটকারী আইনজীবী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় প্রথম বা দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরাই সাধারণত সিনিয়রদের দ্বারা র্যাগিংয়ের শিকার হন। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়েই নয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র্যাগিং কালচারে পরিণত হয়েছে। এর ফলে অনেক শিক্ষার্থীই মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে। আমরা আশা করব, আদালতের নির্দেশনা পালনে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসবে। র্যাগিংয়ে জড়িত থাকার কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হলে র্যাগিংকারীদের কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করবে। এ অপসংস্কৃতির সঙ্গে জড়িতরা যে মানসিকভাবে অসুস্থ তা নবীনদের প্রতি তাদের আচরণেই প্রমাণিত হয়। তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুধু বহিষ্কার নয়, ভবিষ্যতে সরকারি চাকরি, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারির বিধান প্রণয়ন করা উচিত।