সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ হিসেবে আমাদের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য হলো আল্লাহর ইবাদত করা, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক না করা ও প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসা ও আনুগত্য করা। এর পরপরই আমাদের করণীয় হলো বাবা-মায়ের প্রতি সুন্দর ব্যবহার করা, তাঁদের অনুগত থাকা, কোনোভাবেই তাঁদের মনে কষ্ট না দেওয়া। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁর সঙ্গে শরিক কোরো না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার কর।’ সূরা নিসা, আয়াত ৩৬। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আর আমি নির্দেশ দিয়েছি মানুষকে তার পিতা-মাতার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার জন্য।’ সূরা আহকাফ, আয়াত ১৫। আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি যে তুমি আমার এবং তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমার কাছেই তো ফিরে আসতে হবে।’ সূরা লুকমান, আয়াত ১৪। হাদিসেও পিতা-মাতার খেদমত ও তাঁদের প্রতি গভীর আনুগত্য প্রকাশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘পিতা-মাতা হলো তোমার জান্নাত ও জাহান্নাম। অর্থাৎ তুমি ইচ্ছা করলে তাঁদের খেদমত করে উত্তম আচরণের মাধ্যমে জান্নাত অর্জন করতে পার; আবার ইচ্ছা করলে তাঁদের অবাধ্য হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করতে পার।’ ইবনে মাজাহ। মাতা-পিতার খেদমত না করার কারণে যারা জান্নাত থেকে বঞ্চিত হলো, জাহান্নামের বেড়ি গলায় পরল, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের প্রতি লানত করেছেন। হাদিসে এসেছে, ‘একদা জুমার দিনে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বারের প্রথম ধাপে পা রাখলেন এবং বললেন, আমিন! অতঃপর দ্বিতীয় ধাপে পা রাখলেন এবং বললেন, আমিন! এরপর তৃতীয় ধাপে পা রাখলেন এবং বললেন, আমিন! এরপর খুতবা দিলেন ও নামাজ আদায় করলেন। নামাজ শেষে সাহাবায়ে কিরাম প্রশ্ন করলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! আজ যা দেখলাম তা এর আগে কখনো দেখিনি। আপনি একেক ধাপে পা রেখে, আমিন! আমিন!! আমিন!!! বললেন; এর রহস্য কী? তিনি বললেন, জিবরাইল (আ.) আমাকে বলেছেন, আমি তিনটি দোয়া করব আপনি আমিন বলুন। তাই আমি তাঁর দোয়ার উত্তরে আমিন বলেছি। এ তিনটি দোয়ার মধ্যে একটি হলো, যে ব্যক্তি পিতা-মাতার একজনকে বা উভয়কে পেল কিন্তু জাহান্নাম থেকে মুক্তি নিয়ে জান্নাত নিশ্চিত করতে পারল না তার জন্য ধ্বংস!’ মুসলিম। পিতা-মাতার অবাধ্যতার জন্য যেমন রয়েছে অভিসম্পাত, তেমন তাঁদের আনুগত্যের জন্য রয়েছে পুরস্কারের ঘোষণা। শুধু তাই নয়, তাঁদের প্রতি নেকনজরে তাকালেও হজের সওয়াব পাওয়া যায়। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যখন কোনো অনুগত সন্তান স্বীয় পিতা-মাতার প্রতি অনুগ্রহের নজরে দৃষ্টিপাত করে, আল্লাহ তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজের সওয়াব দান করেন।’ বায়হাকি। পিতা-মাতার জীবদ্দশায় যেমনিভাবে তাঁদের সেবা করা জরুরি, তেমনি তাঁদের মৃত্যুর পরও তাঁদের জন্য দোয়া করা দরকার। এ পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ-তায়ালা বলেন, ‘আর তুমি বল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি তাঁদের প্রতি দয়া করুন, যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাকে প্রতিপালন করেছেন।’ সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত ২৪।
লেখক : বেতার-টিভির ইসলামবিষয়ক উপস্থাপক, প্রিন্সিপাল মণিপুর বাইতুর রওশন মাদ্রাসা কমপ্লেক্স, মিরপুর, ঢাকা।