বাংলাদেশের মানুষ ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে। দুনিয়ার আরও অনেক জাতি মাতৃভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করলেও পথ দেখিয়েছে এ দেশের মানুষ। ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসেছে। স্বভাবতই মাতৃভাষা বাংলার প্রতি বাংলাদেশের মানুষের বাড়তি মমত্বের বিষয়টি সুবিদিত। মমত্ববোধে ঘাটতি রয়েছে এমন লোকের সংখ্যাও কম নয়; যারা বাংলাদেশের মাটিতে জন্মগ্রহণ করে এ দেশের আলো-বাতাসে বড় হয়েও মনমানসিকতায় এ দেশের হতে পারেননি। এ দেশে ইংরেজির সঙ্গে বাংলা মিশিয়ে কথা বলে নিজেদের ভিন্ন প্রজাতির বলে দেখানোর চেষ্টা করেন এমন লোকের সংখ্যা নগণ্য হলেও বিরল নয়। প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের বিকৃত মনোভাবের তির্যক সমালোচনা করে এ হীনমন্যতা কাটিয়ে উঠে শুদ্ধভাবে বাংলা ভাষার চর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। বলেছেন, বিশ্বায়নের এ যুগে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আন্তর্জাতিক যোগাযোগের জন্য অন্য ভাষা শেখাও প্রয়োজন। তবে সেটা মাতৃভাষা বাদ দিয়ে নয়। শুদ্ধভাবে বাংলা বলতে পারার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষার গুরুত্ব ও সৌন্দর্য নিয়েও কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, এখনকার অনেক ছেলেমেয়েকে দেখা যায় ইংরেজি উচ্চারণে বাংলা বলার চেষ্টা করে। বাংলা বলতে তাদের কেমন যেন কষ্ট হয়। অথচ তারা এ দেশের আলো-বাতাসে, এ দেশের মাটিতেই বড় হয়েছে। যারা বাংলাদেশের মাটিতে বড় হয়ে বাংলা বলতে পারে না, ইংরেজি উচ্চারণে কথা বলে, তাদের জন্য করুণা করা ছাড়া কিছুই বলার নেই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে সপরিবারে নিহত হওয়ার পর দীর্ঘদিন প্রবাসে নির্বাসিত-জীবন যাপনের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের পরিবারের অনেককে ছোটবেলায় বিদেশে থাকতে হয়েছে। তবু আমরা তাদের বাংলা গুরুত্ব দিয়ে শিখিয়েছি। যেন তারা মাতৃভাষায় কথা বলতে পারে।’ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শুদ্ধভাবে বাংলা চর্চার যে তাগিদ দিয়েছেন তা খুবই তাৎপর্যের দাবিদার। দুনিয়ার সব ভাষার মতো বাংলা ভাষায় কথা বলা বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের মধ্যে আঞ্চলিকতার ছাপ থাকতে পারে, কিন্তু লেখা বা বৃহৎ পরিসরে বক্তব্য দেওয়ার সময় প্রমিত বাংলায় কথা বলাই যুক্তিযুক্ত। যারা এ ক্ষেত্রে অক্ষম তারাই ইংরেজির সঙ্গে মিলিয়ে বিকৃত ভাষায় কথা বলেন, তাদের এ অক্ষমতাকে করুণা করা উচিতই বৈকি!