বুধবার, ৮ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু

এ দুর্ভাগ্যের পুনরাবৃত্তি কাম্য নয়

চিকিৎসা একটি মানবিক পেশা। সেবার মনোভাব যাদের নেই তারা চিকিৎসক হলে কি বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয় সুমন চাকমার মৃত্যু যেন তারই প্রমাণ। পাহাড়ি এ তরুণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী। পাহাড়ি জীবনের নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে। আড়াই বছর পর অর্থাৎ ২০১৮ সালের জুনে তার ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ে। সমাজের বিত্তবানদের সহায়তায় চিকিৎসাও নিতে থাকেন এ তরুণ। বেঁচে থাকার সাহস নিয়ে ভারতের বেশকিছু হাসপাতালেও চিকিৎসা নিতে যান। ক্যান্সারের কারণে ঘাড়ে ও পিঠে প্রচ- ব্যথা শুরু হলে ভারতে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায় তার। এরপর ওষুধের জন্য ভারতের চিকিৎসা সম্পর্কিত বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিতে দেখা যায় তাকে। এর মধ্যে বিশ্বজুড়ে থাবা বসায় করোনাভাইরাস। দেশেই চিকিৎসা পাওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়ে সুমনের। দেশের সাত-আটটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে প্রত্যাখ্যাত হন সুমন। এজন্য দুঃখ প্রকাশ করে তিনি ২৬ মার্চ সকালে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে লেখেন, ‘আমার করোনা হয়নি, অথচ পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে করোনার জন্যই আমাকে মারা যেতে হবে।’ সুমনের সে আশঙ্কাই সত্য প্রমাণিত হলো ১১ দিন পর। সোমবার সকালে তিনি চলে গেলেন না-ফেরার দেশে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে। সাধারণ সর্দিজ্বরের চিকিৎসা পাওয়াও দুরূহ হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী বিনা চিকিৎসায় সুমন চাকমার মৃত্যুতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাকে চিকিৎসা না দেওয়ার জন্য যারা দায়ী তাদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমাদের দেশে যারা চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত তাদের সিংহভাগ পড়াশোনা করেছেন দেশবাসীর ট্যাক্সের টাকায়। কিন্তু সাধারণ মানুষের সেবায় তাদের কার্পণ্য এ দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। আমরা আশা করব, প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় ভূমিকায় বিনা চিকিৎসায় আর কারও মৃত্যু যাতে না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর