সোমবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

সেনাবাহিনীর কাজে সহযোগিতা করুন নিজে বাঁচুন অন্যকে বাঁচান

মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.)

সেনাবাহিনীর কাজে সহযোগিতা করুন নিজে বাঁচুন অন্যকে বাঁচান

করোনা দানবের আক্রমণে সারা বিশ্বের জননিরাপত্তা নজিরবিহীন হুমকির মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। এই দানবের থাবায় আর কত মানুষের জীবন প্রদীপ নিভে যাবে এবং এর শেষ কোথায় তার কিছু কেউ বলতে পারছে না। মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশের পথে মানুষরূপী দানবের আবির্ভাব যুগে যুগে ঘটেছে। একইভাবে সময়ের পরিক্রমায় যুগে যুগে মহামারী আকারে অদৃশ্য, অমানবীয় দানবের আবির্ভাবও ঘটেছে। তাতে সব সময় সব রকম দানবই মানবের কাছে পরাজিত হয়েছে বলেই মানব সভ্যতা আজ বিস্ময়কর উন্নতি সাধনে সক্ষম হয়েছে। সুতরাং করোনা দানবের আক্রমণে বিশ্বব্যাপী যে বিপর্যয় নেমে এসেছে তাতে ভয় আছে, আবার ভয় নেই, দুটোই সত্য। ভয় নেই বলছি এ কারণে, বিগত সময়ে সব দানব যেভাবে মানবের কাছে পরাজিত হয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে এবারও এই করোনা দানব পরাজিত হবে। আবার মানুষের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। মানুষের শক্তির চেয়ে বড় শক্তি আর কোনো প্রাণী, অনুপ্রাণী, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া কারও নেই। এ কথা স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাই বলেছেন। তবে ভয় আছে এ কারণে বলছি, একটি মানুষের জীবনও মূল্যবান। জন্মালে মৃত্যু হবে। এ কথা যেমন চরম সত্য, তেমনি আরও বড় সত্য হলো- সৃষ্টিকর্তার মহান উদ্দেশ্য সাধন করার জন্যই মানুষকে বেঁচে থাকতে হবে। এই বোধহয় মরে গেলাম, অথবা আমার কিছুই হবে না, এই দুটো চিন্তাই সম্পূর্ণ ভুল। বিপদ থেকে বাঁচার কৌশল জানতে হবে এবং সেটি অনুসরণ করতে হবে। এখন একটা যুদ্ধ চলছে। শত্রু অদৃশ্য। তাই শত্রুর আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য সবাইকে ব্যক্তিগতভাবে এবং সমষ্টিগতভাবে চেষ্টা করতে হবে। এই সময়ে করোনা থেকে বাঁচার প্রধান ও একমাত্র কৌশল ঘরে থাকা এবং সামাজিক  দূরত্ব বজায় রাখা। যুগে যুগে যুদ্ধ-বিগ্রহ, ধ্বংসযজ্ঞ, মহামারীকে পিছনে ফেলে মানুষ এগিয়ে গেছে বলেই সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্য সাধন হয়েছে। পৃথিবী মানুষের জন্য সৌন্দর্যে ভরা একটি আনন্দময় জায়গা হয়েছে। এ সময়ে এসে এখন করোনার ভয়াবহতায় বিশ্বব্যাপী একটা যুদ্ধসম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং প্রতিটি রাষ্ট্রই সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে। বাংলাদেশ একটা স্বল্প সম্পদের দেশ হয়েও যেভাবে এই যুদ্ধে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। রাষ্ট্রীয় প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বেসামরিক প্রশাসনকে সাহায্য করার জন্য দেশব্যাপী সেনাবাহিনী মোতায়েন হয়েছে। মানুষকে নিয়েই দেশ। মানুষের জীবন না বাঁচলে দেশ বাঁচে না। সুতরাং দেশ ও দেশের মানুষকে রক্ষা করার জন্য আমাদের সেনাবাহিনী নিয়োজিত হবে সেটাই স্বাভাবিক। সেনাবাহিনীর সঙ্গে এদেশের মানুষের রক্তের সম্পর্ক রয়েছে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের মাঠে আমাদের সেনাবাহিনীর জন্ম। সে সময়ে হাজার হাজার তরুণ সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে, রক্ত দিয়েছে, শত্রুকে পরাজিত করে আমরা সবাই মিলে দেশকে স্বাধীন করেছি। তাই দেশের মানুষের এমন মহাদুর্যোগে সেনাবাহিনী মানুষের পাশে দাঁড়াবে সেটাই প্রত্যাশিত এবং যথার্থই সেটি আজ আমরা দেখছি। সেনাবাহিনীর একজন প্রাক্তন সদস্য হিসেবে গর্বে মন ভরে যায়। মুক্তিযুদ্ধের কথা মনে পড়ে। সেনা পেশার দীর্ঘ স্মৃতির কথা মনে আসে। সাইক্লোন, ঝড়, বন্যা ইত্যাদি দুর্যোগের সময় প্রত্যন্ত অঞ্চলের কত জায়গায় যে গিয়েছি, কত মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি, তার কোনো শেষ নেই। দেখেছি এবং হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছি অসহায় মানুষের কাছে গিয়ে একটু কাঁধে হাত রেখে সাহস জাগানিয়া দুয়েকটি কথা বলতেই আবালবৃদ্ধ সবাই আনন্দ অশ্রুতে বুকে জড়িয়ে ধরেছে। তাতে মনে হয়েছে আমি সত্যিকার অর্থেই হয়তো আমার দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়েছি। বিপদের সময়ে মনের সাহসই মানুষের সবচেয়ে বড় শক্তি।

আর সেনাবাহিনীর সদস্যরা যখন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়, সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে তখন এদেশের মানুষের সাহস শতগুণ বৃদ্ধি পায়। এ সময়ে বঙ্গবন্ধুর একটা কথা প্রচন্ডভাবে মনে পড়ছে। বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির প্রথম অফিসার ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে বঙ্গবন্ধু সালাম নেন এবং ক্যাডেটদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন। ভাষণের এক জায়গায় বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যেন পাকিস্তানি মেন্টালিটি না আসে, তোমরা হবে আমার জনগণের সেনাবাহিনী। মনে রেখ, মুখে হাসি, বুকে বল, তেজে ভরা মন, মানুষ হতে হবে মানুষ যখন।’ বঙ্গবন্ধুর এ কথাগুলো আজ আমাদের সেনাবাহিনীর জন্য দায়িত্ব পালনের অন্যতম পাথেয়। এই জাতীয় দুর্যোগে সবাইকে মানুষ হতে হবে। মানবিক আচরণ আজ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। গরিব, দুঃখী, শ্রমজীবী, দৈনন্দিন খেটে খাওয়া মানুষ অসহায়ত্বের মধ্যে পড়েছে। একদিকে পেটের টান, অন্যদিকে করোনার ভয়। এই মুহূর্তে কী করণীয় সেটা বুঝে ওঠা সত্যিই দুঃসাধ্য। তার জন্যই দেখা গেল সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও বাড়ি থাকার সব আহ্বানকে উপেক্ষা করে এপ্রিলের ৪ তারিখে দেশের সব অঞ্চল থেকে লাখ লাখ গার্মেন্ট শ্রমিক ফ্যাক্টরিতে কাজে যোগদানের জন্য একজনের গায়ের ওপর আরেকজন, পড়ে কি মরে, এই অবস্থায় ঢাকার দিকে আসছে। তারা বলছে, ‘না আসলে চাকরি থাকবে না, বেতন পাওয়া যাবে না। এই ঘটনা ঘটার পরে গার্মেন্টের মালিকরা বলছেন ১১ এপ্রিলের আগে ফ্যাক্টরি খুলবে না। তার মানে ফিরে যাওয়ার সময়ও ওই একই অবস্থা। দুই দিন আগে মালিক পক্ষ মিডিয়ার মাধ্যমে একটা ঘোষণা দিলেই এই ভয়াবহতা এড়ানো যেত। এর মাধ্যমে করোনা বিস্তারের যে প্রকট আশঙ্কার সৃষ্টি হলো তার দায় কে নেবে। এর পরিণত দেখার জন্য ৪ এপ্রিল থেকে অন্তত দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। গার্মেন্ট মালিক পক্ষ ও তাদের সংগঠন চরম দায়িত্বহীনতা ও উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে।

ফিরে আসি সেনাবাহিনীর দায়িত্বের কথায়। এ পর্যন্ত যতটুকু জানা গেছে, তাতে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জন্য করোনা থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র পথ ঘরে থাকা। করোনা বিস্তার ঠেকাতে আগামী দুই তিন সপ্তাহ অত্যন্ত ক্রিটিক্যাল সময়। সরকারের পক্ষ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত। তারপরের কথাও ভাবতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত দোকান এবং সব ধরনের স্থাপনাসহ খাদ্যদ্রব্যের দোকান ব্যতিরেকে সবকিছু বন্ধ থাকার কথা। বলা হয়েছে, যে যেখানে আছে সেখানেই সবাইকে ঘরে থাকতে হবে। ঘর থেকে কেউ বের হবে না। কিন্তু একে তো ঘনবসতি। তারপর শহরের অলি-গলি একেবারে গিঞ্জি, গাড়ি ঢোকে না। বহুবিধ নিত্যপ্রয়োজনের তাগিদ। সবকিছু মিলে মানুষকে ঘরে রাখা অত্যন্ত কঠিন কাজ। এই অপ্রিয় কঠিন কাজটিই সেনাবাহিনীর ওপর বর্তিয়েছে। আমরা দেখছি সেনা অফিসাররা সৈনিকদের নিয়ে কীভাবে দিনরাত রাস্তায় রয়েছেন। মানুষের প্রতি নির্দয় ও হৃদয়হীন আচরণ কেউ চায় না। কিন্তু হতে পারে একটু নির্দয় আচরণই শুধু ওই ব্যক্তিকে নয়, তার পরিবার ও আপন প্রিয়জনকে বাঁচিয়েছে এবং বাঁচিয়েছে আশপাশের শত শত মানুষকে। মানুষের জীবনের চেয়ে কিছুই বড় হতে পারে না। তাই সমাজের সব বুঝমান মানুষকে বলছেন, অর্পিত দায়িত্ব পালনে সেনাবাহিনীসহ সবাইকে যত কঠিন হওয়ার প্রয়োজন হয় তা হতে হবে। সংগত কারণেই মানুষের মনে প্রতিনিয়ত প্রশ্ন আসছে আর কতদিন এভাবে চলতে হবে। এ সময়ে ধৈর্যধারণ করাই একমাত্র পথ। যেসব দেশ এ পর্যন্ত বেশি আক্রান্ত সেখানে ভাইরাস বিস্তারের গ্রাফ বা ট্রেল্ড বলছে, প্রথম আক্রান্তের কেস শনাক্ত হওয়ার পর প্রায় দুই-আড়াই মাসের মাথায় করোনা মহামারী আকার ধারণ করেছে। তবে এখন সব দেশই অত্যন্ত সতর্ক হওয়ায় নতুনভাবে আক্রান্ত দেশগুলো হয়তো তুলনামূলকভাবে কম সময়ের মধ্যে করোনার লাগাম টেনে ধরতে পারবে। বাংলাদেশের জন্য পুরো এপ্রিল এবং মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত অত্যন্ত সতর্ক থাকা উচিত বলে বিশেষজ্ঞরা মতামত দিচ্ছেন। মানুষের জীবন বাঁচাতে হবে এটাই এখন সবচেয়ে বড় কথা। সুতরাং সেনাবাহিনীসহ সব দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাকে ভাবতে হবে আগামী এক-দেড় মাস কীভাবে এই কঠিন সময়ে মানুষের জীবন বাঁচানোর দায়িত্ব পালন করা যায়। আনসার বাহিনী, বিএনসিসি, বিশেষ করে এলাকাভিত্তিক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত করে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় মাস্ক ও গ্লাভস দিয়ে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে শহরের অলিতে-গলিতে নিয়োজিত করলে মানুষকে ঘরে রাখার কাজে বেশি কার্যকর সুফল পাওয়া যেতে পারে। এতে বাড়তি সুবিধা হবে, এলাকার পরিচিত ছেলেমেয়ে হওয়ায় এরা প্রয়োজন হলে এলাকাবাসীর অতি প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র কিনে বাড়িতে পৌঁছে দিতে পারবে। তাতে বাড়ি থেকে বের হওয়ার প্রবণতা কমে যাবে। করোনা থেকে দেশের মানুষকে বাঁচানোর কাজে সেনাবাহিনীর সহায়ক ভূমিকায় রয়েছে। এই যুদ্ধে সামনের সারির যোদ্ধা হচ্ছেন স্বাস্থ্য সেবার সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট সবাই। এদের মধ্যে বড় একটা অংশ অত্যন্ত প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছেন। তাদের অকুণ্ঠচিত্তে সালাম জানাই। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্যি চিকিৎসা পেশার আরেকটি অংশ রয়েছে যারা প্রত্যাশিত ভূমিকা পালন করছে না। অনেকেই কর্মস্থল ও প্রাইভেট চেম্বার ছেড়ে অন্যান্য মানুষের মতো বাড়িতে বসে আছেন। শুধু করোনা নয়, অন্যান্য রোগে আক্রান্ত মানুষ হাসপাতাল ও চেম্বার থেকে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এগুলোকে মানবিক আচরণ বলা যায় না। কয়েকদিন আগে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে প্রতিবেদন দেখলাম, একজন মুক্তিযোদ্ধা একটি জেলা শহরের তিন তিনটি হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে প্রত্যাখ্যান হয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। অবশেষে ৯ এপ্রিল বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সংঘ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তারা এখন থেকে ২৪ ঘণ্টা করোনাসহ সব রোগীকে সেবা দিবেন। অভিনন্দন জানাই। তবে এর আগে কিছু ব্যতিক্রম বাদে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর অবস্থান ও আচরণ ছিল অত্যন্ত দুঃখজনক। সরকারকে শর্ত প্রদানসহ প্রণোদনার টাকা প্রাপ্তির জন্য হাসপাতালগুলোতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির কথাও শোনা যায়। ভাবতেও অবাক লাগে। মানুষ ও মানবতা আর কত লজ্জিত হবে। এদের কাছে টাকা আর অর্থই সবকিছু। কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন ডাক্তারদেরও তো জীবনের ঝুঁকি আছে। এ কথা সঠিক ও সত্য। কিন্তু এটা তো একটা যুদ্ধক্ষেত্র। ঝুঁকিকে অস্বীকার করার উপায় নেই। সেনাবাহিনী যখন আসল যুদ্ধে যায় তখন ধরেই নেওয়া হয় শতকরা ২৫ ভাগ ক্যাজুয়েল্টি হতে পারে। করোনার সর্বোচ্চ ক্যাজুয়েল্টির হার শতকরা পাঁচভাগ। যে পেশায় যেমন বাস্তবতা সেটি মেনে নিয়েই আমরা সবাই দায়িত্ব পালনের শপথ নিই। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর তুলনায় আমাদের অস্ত্র-গোলাবারুদ কিছুই ছিল না। সঙ্গে থাকা সামান্য গোলাবারুদ শেষ হওয়ার পর পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মল্লযুদ্ধে নিয়োজিত হয়েছে, পিছপা হয়নি। মৃত্যু অবধারিত জেনেও কেউ পিছনে চলে যায়নি। পাকিস্তানি আর্মি ঘরবাড়ি সব জ্বালিয়ে দেওয়াসহ বাড়ির সবাইকে হত্যা করবে জেনেও গ্রামের মানুষ রাতের বেলায় বৃষ্টি-বাদলের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছে। সুতরাং দোহাই লাগে জাতির এই মহাদুর্যোগে কেউ পিছপা হবেন না। চিকিৎসা সেবার সঙ্গে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ব্যাপকভিত্তিক ত্রাণ প্রদানের প্রয়োজন এখনই দেখা দিয়েছে। আগামীতে এই চাহিদা আরও বাড়বে। সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে, তার সঙ্গে দেশে এখন হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক কয়েকশত ধনকুবের আছেন, তারা তো এই দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে। এক-দুটি শিল্প গ্রুপের একটু-আধটু তৎপরতা দেখা গেলেও অন্যরা সব হাত গুটিয়ে বসে আছে। সামনে অর্থনৈতিক মন্দার পূর্বাভাসে প্রধানমন্ত্রী বড়, মাঝারি, ছোট এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। খেটে খাওয়া শ্রমিকরা যেন কর্মচ্যুত না হয় সেটাই প্রধানমন্ত্রী নিশ্চিত করলেন। ২০০৯ সালের পূর্বে সরকারের পুরো বছরের বাজেট ছিল এর থেকে অনেক কম। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির এই পর্যায়ে এসেছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।

আসলে বাংলাদেশ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু, আর তার মেয়ে এখন এদেশের মানুষের একমাত্র ভরসার স্থল। প্রধানমন্ত্রী কঠোর ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, এই টাকা নিয়ে কেউ দুর্নীতি ও অপকর্ম করলে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। তবে একশ্রেণির মানুষ আছে তাদের কর্ণকুহরে ধর্মের বাণী ও আইনের কথা পৌঁছে না। মানুষরূপী পিশাচ, ক্ষুধার যন্ত্রণায় মৃত্যুবরণকারী মানুষের লাশের ওপর পাড়া দিয়ে এরা অর্থ লুট করে। জেলা, উপজেলা ত্রাণ বিতরণ কমিটিতে জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, এসব মানুষ সংযুক্ত হলে এটা ভারসাম্য থাকবে। এ ব্যাপারে এলাকাভিত্তিক জনগণকেও সতর্ক হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সমগ্র জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছে। তারাই ধারাবাহিকতায় মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল সেনাবাহিনী মাঠে নেমেছে। আমরা ঘরে তো করোনা দূরে। সুতরাং আসুন এই কাজে সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করি এবং নিজে বাঁচি, অন্যকে বাঁচাই।

লেখক : রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

[email protected]

সর্বশেষ খবর