সোমবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়

মুফতি মুহাম্মদ শরিফুল ইসলাম

মৃত্যু একটি সুনিশ্চিত বিষয়। প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থাপনা গ্রহণের মাধ্যমে করোনাভাইরাস থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব হলেও মৃত্যু থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। তাই করোনাভাইরাস থেকে বাঁচার চেষ্টার চেয়েও শতগুণ বেশি সচেষ্ট হওয়া উচিত আখেরাতের শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য।

আল্লাহ বলেন : ১. স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের কারণে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদের কিছু কর্মের স্বাদ আস্বাদন করাতে চান- যেন তারা ফিরে আসে (আর-রুম-৪১)। ২. গুরু শাস্তির আগে আমি অবশ্যই তাদের লঘু শাস্তি আস্বাদন করাব, যেন তারা ফিরে আসে (আস-সাজদাহ-২১)। ৩. তোমাদের ওপর যেসব মুসিবত আসে, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি অনেক অপরাধ ক্ষমা করেন। (আস-সূরা-৩০)। উপরোক্ত আয়াতত্রয়ের আলোকে স্পষ্ট হয় যে, মহান আল্লাহ পাপিষ্ঠ বান্দাদের তওবার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। তওবা করলেই তাকে রহমতের কোলে তুলে নেন। কিন্তু যখন সে ফিরে না বরং অপরাধ করতে করতে সীমা লঙ্ঘন করে, তখন আল্লাহ অসন্তুষ্ট হয়ে তাকে কিছু শাস্তি দিয়ে কাবু করে নিজের দিকে ফেরাতে চান। সুতরাং মহান আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণে যদি এ করোনাভাইরাস এসে থাকে তবে জ্ঞানীজনের পথ হলো তওবা করে মাওলাকে সন্তুষ্ট করা। কেননা তার সন্তুষ্টি বা ফয়সালা ব্যতীত মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়।

[দেখুন সূরা ইউনুস, আয়াত-১০৭ মহান আল্লাহ যদি তোমাকে কোনো মুসিবতে আক্রান্ত করতে চান, তবে তিনি ব্যতীত তা মোচনকারী আর কেউ নেই।]

বাস্তবতা হলো আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীদের ওপর তার শাস্তির কিছুটা নমুনা দেখান, অতঃপর কিছু মানুষ আক্রান্ত হওয়া বা মারা যাওয়ার পর তিনি আজাবকে উঠিয়ে নেন। এতে বিবেকবানরা ফিরে আসেন আর গাফেলরা মনে করে যে, আমরা আমাদের বস্তুবাদী ব্যবস্থাপনায় মহামারী প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছি। ফলে তারা পূর্ব অভ্যাসানুযায়ী নাফরমানিতে লিপ্ত থাকে। এ ধরনের মানুষকে হয়তো আল্লাহ দুনিয়াতে আরও বড় আজাবে গ্রেফতার করবেন নতুবা আখেরাতে শাস্তি দেবেন। উল্লেখ্য, আজাব হিসেবে মহামারী এলে শুধু দুনিয়ার কোনো মেডিসিন বা ব্যবস্থাপনা তাকে ঠেকাতে পারবে না। উন্নত ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন দেশগুলোর বর্তমান পরিস্থিতি এ কথার সাক্ষ্য বহন করছে। আবার এমনটিও নয় যে, স্বাস্থ্যসম্মত কোনো ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করব না। বরং এ ভয়াবহ মহামারী থেকে পরিত্রাণের উপায় হলো অন্তরের অন্তরস্থল থেকে যাবতীয় পাপাচার থেকে তওবা-ইস্তেগফার করে অক্ষমতা ও কাতরতার সঙ্গে বিপদ মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকা। তৎসঙ্গে স্বাস্থ্যসম্মত সব ব্যবস্থাপনা গুরুত্ব সহকারে মেনে চলা। বস্তুত, স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থাপনাসমূহ তথা পবিত্রতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং অসুস্থতায় ওষুধ সেবন ইত্যাদিও শরিয়তে নির্দেশ। এরপরও যদি মহান আল্লাহর ফয়সালায় কোনো মুমিন বান্দা করোনায় মৃত্যুবরণ করেন, তবুও  তার জন্য নিঃসন্দেহে কল্যাণকর হবে। কেননা হাদিসের ভাষ্যানুযায়ী সে শহীদের মর্যাদা লাভ করবে।

আল্লাহ এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববাসীর বিবেককে উন্মোচিত করে মহামারী প্রেরণের মূল কারণ বোঝার তৌফিক দান করেন এবং মহান রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টিকল্পে সব পাপাচার থেকে ফিরে তার দাসত্বের সৌভাগ্য নসিব করেন। আমিন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর