রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা
ইতিহাস

মীর জুমলা

মীর জুমলা বাংলার সুবাদার। জন্মসূত্রে তিনি ছিলেন ইরানি এবং প্রথমে তার নাম ছিল মুহাম্মদ সাইদ। মুগল সম্রাটের কাছ থেকে তিনি মুয়াজ্জম খান, খান-ই-খানান, সিপাহসালার ও ইয়ার-ই ওয়াফাদারের মতো বিভিন্ন উপাধি লাভ করেছিলেন। তবে মীর জুমলা নামেই তিনি ইতিহাসে সমধিক পরিচিত। ইস্পাহানের আর্দিস্তানে ১৫৯১ খ্রিস্টাব্দের দিকে তার জন্ম। তিনি ছিলেন এক দরিদ্র তেল ব্যবসায়ীর পুত্র। বাল্যকালে মীর জুমলা কিছুটা পড়তে-লিখতে এবং অঙ্ক কষতে শিখেছিলেন, যার ফলে তিনি হীরক খনির জন্য বিখ্যাত গোলকুন্ডার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক হীরক ব্যবসায়ীর অধীনে কেরানির চাকরি লাভ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। পরে তিনি অন্য এক ব্যবসায়ীর অধীনে চাকরি নিয়ে ভারতে এসেছিলেন। তিনি অবশ্য নিজেই হীরার ব্যবসা শুরু করেন, কয়েকটি হীরক খনি ইজারা নেন এবং ঝুঁকিপূর্ণ সামুদ্রিক বাণিজ্যে লিপ্ত হন। ক্রমে বহু জাহাজের মালিক হয়ে তিনি এক খ্যাতিমান ব্যবসায়ীরূপে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন।

মীর জুমলা গোলকু-ার সুলতানের অধীনে চাকরি গ্রহণ করেন এবং রাজ্যের উজির বা প্রধানমন্ত্রীর পদে উন্নীত হন। তিনি কর্ণাটক রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে তা দখল করে প্রচুর ধনসম্পদ লাভ করেন। বিষয়টি তার প্রতি গোলকুন্ডার সুলতানের সন্দেহের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দাক্ষিণাত্যের মুঘল সুবাদার শাহজাদা আওরঙ্গজেব তার উন্নতির সহায়ক হন এবং সম্রাট শাহজাহান তার নিরাপত্তাবিধান করেন। সম্রাট তাকে মুয়াজ্জম খান উপাধি প্রদান করে সম্মানিত করেন এবং তার পদমর্যাদা ৬ হাজার জাঠ ও ৬ হাজার সওয়ারে উন্নীত এবং তাকে দেওয়ান-ই-কুল বা প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। সম্রাট আওরঙ্গজেবের অধীনে মীর জুমলা শাহ সুজার মোকাবিলা করার দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। খাজোয়ার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে শাহ সুজা তান্ডায় পালিয়ে যান এবং ৯ মে, ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় পৌঁছান। মীর জুমলা খাজোয়া থেকে তান্ডা হয়ে ঢাকা পর্যন্ত শাহ সুজার পশ্চাদ্ধাবন করেন। কিন্তু সুজা ঢাকা থেকে পূর্ব সীমান্ত অতিক্রম করে শেষ পর্যন্ত আরাকান রাজার কাছে আশ্রয় লাভ করেন। মীর জুমলা ঢাকায় পৌঁছার অল্প দিন পর ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দে বাংলার সুবাদার হিসেবে তার নিয়োগের রাজকীয় ফরমান লাভ করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর