মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা
ইতিহাস

চাঁদ সুলতানা

ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ইতিহাসে যে কজন মহীয়সী নারী কর্মদক্ষতা, যোগ্যতা, মেধা, পরিশ্রম ও চারিত্রিক গুণাবলির দ্বারা ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় হয়ে আছেন তার মধ্যে দাক্ষিণাত্যের আহমদনগর রাজ্যের চাঁদ সুলতানা অন্যতম। ষোড়শ শতাব্দীর দাক্ষিণাত্যের (দক্ষিণ ভারত) আহমদনগর রাজ্যের স্বাধীন সুলতান হুসাইন নিজাম শাহের (১৫৫৩-৬৫ খ্রি.) কন্যা তিনি। ইতিহাসবিদদের অনেকে তাঁকে ‘চাঁদরানী’, ‘চাঁদবিবি’ ও ‘মহীয়সী চাঁদ’ বলে অভিহিত করেছেন। বৈবাহিকসূত্রে তিনি বিজাপুরের স্বাধীন শাসক প্রথম আলী আদিল শাহের (১৫৫৮-১৫৮০) পতœী। চাঁদবিবির জন্ম ১৫৫০ সালে। ১৪ বছর বয়সে ১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দে আদিল শাহের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। শাসনকার্য পরিচালনায় সাহায্য ছাড়াও তিনি কয়েকটি যুদ্ধে স্বামীর সঙ্গে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। অশ্বারোহণ, যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার ও সেনাবাহিনী পরিচালনায় অসাধারণ দক্ষতা ছিল। আদিল শাহ ১৫৮০ সালে মৃত্যুবরণ করলে তাঁর কোনো পুত্র না থাকায় নয় বছর বয়স্ক ভ্রাতুষ্পুত্র ইবরাহিম আদিল শাহকে সিংহাসনে বসানো হয় এবং চাঁদবিবি অভিভাবকরূপে শাসনকার্য পরিচালনা করতে থাকেন। ১৫৯৫ সালে তিনি আহমদনগর রাজ্যের নাবালক সুলতান ভ্রাতুষ্পুত্র বুরহান নিজাম শাহের অভিভাবিকা হন। এ সময় মুঘল সম্রাট আকবর আহমদনগর রাজ্য আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। চাঁদবিবি আহমদনগর রাজ্যের শাসনভার নিজহাতে তুলে নেন এবং মুঘলদের আক্রমণের মোকাবিলায় প্রস্তুত হন। ১৫৯৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মুঘল বাহিনী শাহজাদা মুরাদের নেতৃত্বে আহমদনগর আক্রমণ করে। এ অবস্থায় চাঁদবিবি বর্ম পরিধান করে তরবারি হাতে সেনা পরিচালনা করেন, শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে দ্রুত গমন করেন, দুর্গপ্রাচীরে দাঁড়িয়ে সেনাদের উৎসাহিত করেন এবং সেনাবাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন। মাথার ওড়না উড়িয়ে তিনি সেনাদের কামান বসানোর নির্দেশ দেন। রাতেও তিনি সেনাদের মধ্যে ঘুরে ঘুরে প্রতিরোধব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করেন।

দীর্ঘ তিন মাস অবরোধের পরও মুঘল বাহিনী আহমদনগর দখলে ব্যর্থ হয় এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। মুঘল সেনাপতি শাহজাদা মুরাদ সন্ধির প্রস্তাব পাঠালে প্রথমে চাঁদবিবি তা প্রত্যাখ্যান করলেও পরে সন্ধি করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর