পৃথিবীতে অবস্থানকারী সব ধরনের প্রজাতি যেমন উদ্ভিদ, প্রাণী, জীবাণু এবং যারা বাস্তুতন্ত্রের সঙ্গে ওতপ্রোত যুক্ত তাদের সবার সমাহারকেই ‘জৈববৈচিত্র্য’ আখ্যা দেওয়া হয়। প্রকৃতপক্ষে জীবনের বৈচিত্র্যই জীববৈচিত্র্যের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। পৃথিবীর জন্মের পর জৈব বিবর্তনের পথ ধরে অসংখ্য উদ্ভিদ ও প্রাণীর উৎপত্তি হয়েছে, বেড়ে উঠেছে। অনেকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় কাটিয়ে নিজেদের টিকিয়ে রেখেছে। অনেকে অস্তিত্ব রক্ষা করতে না পেরে পৃথিবী থেকে অবলুপ্ত হয়েছে। এ টিকে থাকা জীববৈচিত্র্যই মানুষের অস্তিত্ব ও সভ্যতার ভিত্তি। পৃথিবীজুড়ে জীববৈচিত্র্যের অবক্ষয়ের পেছনে রয়েছে নানা কারণ। যেমন ক. জীবের স্বাভাবিক বাসস্থান হ্রাস ও বিভাজন খ. বিদেশি প্রজাতির অনুপ্রবেশ গ. বিরোধী প্রজাতির অনুপ্রবেশ ঘ. সমুদ্রের অতিরিক্ত ব্যবহার ঙ. বায়ু, পানি ও মাটিদূষণ চ. নিবিড় কৃষিকাজ ছ. এক ফসলি চাষ। বহু প্রজাতি মানুষের অবিবেচক কাজের ফলে ইতিমধ্যে চিরতরে বিলুপ্ত হয়েছে নানা প্রজাতির জীবজন্তু ও বৃক্ষরাজি এবং আরও অসংখ্য প্রজাতি বিলুপ্তির প্রহর গুনছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, জীববৈচিত্র্যকে কেন এত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে? আসলে মানুষের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে প্রকৃতির বৈচিত্র্যের ওপর। গাড়ি, বাড়ি, কলকারখানা সবই কৃত্রিম পরিবেশ। সবই মনুষ্যসৃষ্ট। কিন্তু বাঁচার জন্য প্রকৃতির ওপর নির্ভর করতে হবেই। বাঁচার অক্সিজেন, পানের পানি, খাবার সবই জোগান দেয় প্রকৃতি। বিদ্যুৎ, লোহা, ইস্পাত, কাগজ কিংবা বস্ত্র যে কোনো শিল্পের কাঁচামাল আসে প্রকৃতি থেকে।
ইকোট্যুরিজম, যে ব্যবস্থার ওপর আজও পৃথিবীর বহু দেশের অর্থনীতি নির্ভরশীল, তাও প্রকৃতির বৈচিত্র্যের ওপর নির্ভরশীল। উদ্যান পালন, পোষ্যজীব পালন, পাখি আলয়, চিড়িয়াখানা, অভয়ারণ্য - জীববৈচিত্র্য না থাকলে সম্ভব নয়। জীবের ক্রমবিবর্তনের ধারা কিংবা উন্নত জাতের উদ্ভিদ বা প্রাণীর সৃষ্টি - বিজ্ঞানের যাবতীয় গবেষণা, সেও জীববৈচিত্র্যনির্ভর। প্রকৃতির প্রতিকূলতা মোকাবিলা করতে জীববৈচিত্র্যের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
দূষণ কমাতে পারে কাক-শকুনসহ অসংখ্য ব্যাকটেরিয়া ও কীটপতঙ্গ। ভূমিক্ষয় রোধ করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করে উদ্ভিদ। কত পাখি ফসলের কীটপতঙ্গকে খেয়ে রাসায়নিক কীটনাশকের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করে। এক তথ্যে জানা যায়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জীববৈচিত্র্য থেকে প্রাপ্ত অর্থমূল্য প্রায় ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিন্তু দুর্ভাগ্য, জীববৈচিত্র্যের সংকটের দরুন এ বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। এ অর্থ যদি ব্যয় করা না হতো তাহলে এ অর্থে ৮ কোটি ২০ লাখ মানুষকে ছয় বছর বিনা পয়সায় খাওয়ানো যেত। এশিয়ার গ্রামীণ এলাকার ৮০ শতাংশ মানুষের রুটি-রুজি আসে ওই জৈববৈচিত্র্য থেকেই।