যান্ত্রিক সভ্যতা মানুষকে উৎকর্ষতার শীর্ষে পৌঁছার সুযোগ করে দিয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে একই সঙ্গে স্বীকার করতে হবে, যান্ত্রিকতার অবাধ বিস্তার মানুষের অস্তিত্বের জন্যও ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনছে। কলকারখানা ও যানবাহনের ধোঁয়া বায়ুদূষণের কারণ ঘটাচ্ছে এবং বৃদ্ধি করছে ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা; যার পরিণতিতে মেরুদেশের বরফ গলছে, বাড়ছে সাগরপৃষ্ঠের উচ্চতা। বাংলাদেশসহ সাগরপ্রান্তের নিচু দেশগুলোর উপকূলীয় এলাকায় দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও নদী ভাঙনের অভিশাপও ঘোরতর হয়ে উঠছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। এ সংখ্যা এরই মধ্যে কয়েক লাখ ছাড়িয়েছে। লড়াকু জাতি হিসেবে বাংলাদেশের মানুষ বরাবরই ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় অভ্যস্ত। জলবায়ুতে নেতিবাচক পরিবর্তনে ইতোমধ্যে যে দুর্যোগ-দুর্বিপাকের সৃষ্টি হয়েছে তা ঠেকাতে বাংলাদেশ আগেভাগে লড়াই শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার জলবায়ু উদ্বাস্তু প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পরিবারের জন্য কক্সবাজারের খুরুশকুলে বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন। এর ফলে বছরের পর বছর ধরে জলবায়ু পরিবর্তনের অশুভ প্রভাবে যারা ভিটামাটি ও ঠিকানা হারিয়ে উদ্বাস্তু-জীবন যাপন করছিলেন তারা আপন ঠিকানা পাবেন। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর বাস্তুহারা মানুষ বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে আশ্রয় নেন কক্সবাজার বিমানবন্দরের পাশের সরকারি খাসজমিতে। কক্সবাজার শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে খুরুশকুল এলাকায় বাঁকখালী নদীর তীরে ২৫৩ একর জমির ওপর তাদের পুনর্বাসনে গড়ে উঠছে এ ‘বিশেষ আশ্রয়ণ’ প্রকল্প। পুরো এলাকাকে চারটি জোনে ভাগ করে ১৩৯টি পাঁচ তলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প সম্পন্ন হওয়ার কথা। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য আশ্রয়ণের ব্যবস্থা নিঃসন্দেহে একটি বড়
উদ্যোগ। বঙ্গবন্ধু অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসার মতো মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ছিলেন অঙ্গীকারবদ্ধ। এ মহোত্তম উদ্যোগ তাঁর
প্রতি জাতির বিনম্র শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।