সঙ্গদোষ বা পারিবারিক বিচ্ছিন্নতার কারণে শিশু-কিশোররা অপরাধে যুক্ত হয়। উন্নত দেশগুলোয় অপরাধে যুক্ত কিশোরদের সংশোধনের জন্য পাঠানো হয় সংশোধন কেন্দ্রে। আমাদের দেশেও এ ধরনের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সেখানে সংশোধনের জন্য গেলেও তাদের জীবন নানা কারণে সুখকর হয় না। আমাদের সংশোধন কেন্দ্র বা উন্নয়ন কেন্দ্রগুলোয় ইতিপূর্বের নানা নেতিবাচক খবর আমাদের হতাশ করেছে। গেল বৃহস্পতিবার যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে বেধড়ক পিটুনিতে তিন কিশোর নিহতের ঘটনা সবাইকে হতবাক করার মতো। যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র বলছে, সেখানকার কিশোররা দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে মারামারি করায় হতাহতের এ ঘটনা ঘটে। তবে আহত কিশোররা বলছে, কেন্দ্রের কর্মকর্তারাই তাদের পিটিয়ে হতাহত করেন। চুল কাটার মতো তুচ্ছ বিষয় নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। হাতে ব্যথা থাকায় কেন্দ্রের হেড গার্ড আনসার সদস্য নূর ইসলামের চুল পরে কেটে দিতে চেয়েছিল কিশোর পাভেল। তাকে এজন্য পিটিয়ে হত্যা করা হয়। যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে এ ধরনের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। প্রায়ই এখানকার কিশোরদের লাশ উদ্ধার, মারপিট ও পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। থাকা-খাওয়াসহ নানা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার জন্য এখানকার কিশোরদের অসন্তুষ্টি অনেক আগে থেকেই। ২০১৪ সালের মে মাসে এক সপ্তাহের ব্যবধানে এখান থেকে পালিয়ে যায় আট কিশোর, যার ছয়জনই হত্যা মামলায় আটক হয়ে আদালতের মাধ্যমে এ কেন্দ্রে এসেছিল। উঁচু প্রাচীরের মাধ্যমে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীতে থাকা এ কেন্দ্রের নাম যা-ই হোক না কেন, কার্যত এটি কারাগার। এ কারাগারের নাম সংশোধনী কেন্দ্র হলেও শিশু-কিশোরদের ওপর প্রায়ই নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ আছে। যে কারণে সংশোধন হওয়ার পরিবর্তে এখানকার শিশু-কিশোররা আগের চেয়ে আরও বেশি অপরাধপ্রবণ ও হিংস্র হয়ে উঠছে। তিন কিশোর হত্যায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র্রের পরিবেশ আরও মানবিক হতে হবে।