শিরোনাম
সোমবার, ২ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

সংঘাত সাম্প্রদায়িকতা গণতন্ত্র ও মানবতার কাছে পরাভূত

নূরে আলম সিদ্দিকী

সংঘাত সাম্প্রদায়িকতা গণতন্ত্র ও মানবতার কাছে পরাভূত

আদর্শের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক মনন ও মানসিকতার বিকাশ ও ব্যাপ্তি ঘটে। এটাই স্বাভাবিক ও শাশ্বত। একটি সুনির্দিষ্ট আদর্শের আবীর মাখিয়ে যিনি চিন্তাকে প্রতিফলিত করতে পারেন, তিনিই হলেন সাত্ত্বিক রাজনৈতিক কর্মী। একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে নিষ্কলুষ হৃদয়ে একটি সত্য ও সাবলীল চিন্তাকে শুধু লালনই নয়, অতি সূক্ষ্ম ও অনাবিল সাধনায় তাকে সমাজজীবনে প্রতিষ্ঠিত করার নিরন্তর প্রচেষ্টায় ব্যাপৃত থাকতে হয় একজন রাজনৈতিক কর্মীকে। আর এ থাকাটার গুণগত মানের ওপরই নির্ভর করে সংগঠন ও জনগণের মাঝে কর্মীটির অবস্থানের মানদন্ড। স্বার্থচিন্তার কালো মেঘ যে রাজনৈতিক কর্মীর চেতনাকে খেয়ে ফেলতে পারে না বা অবলুপ্ত করে না, সেই কর্মী সংগঠনের যে থাকেন না কেন, তার চরিত্রের গুণাবলি এবং দেশাত্মবোধের প্রখর সূর্যরশ্মির বিকীর্ণ অগ্নিকণায় যিনি সমাজকে আদর্শ স্নাত ও উদ্ভাসিত করতে পারেন, তিনিই প্রকৃত রাজনৈতিক কর্মী। এবং শুরু তার যেখান থেকেই হোক না কেন, সময়ের স্রোতধারায় তার পরিণতি সাফল্যের স্বর্ণসৈকতে নোঙর করবে। এর দৃষ্টান্ত দেশে-দেশে কাল-কালান্তরে বিস্তর।

এ উপমহাদেশের রাজনৈতিক আকাশে প্রজ্ব¡লিত ও ভাস্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, যদিও উপমহাদেশে প্রচন্ড অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তার পারিবারিক ঐতিহ্য, শিক্ষাদীক্ষা, চালচলন প্রায় সবটুকুই ছিল পাশ্চাত্য ধরনের। শুধু পারিবারিক মর্যাদাই নয়, ব্যক্তিগত জীবনে এ উপমহাদেশে শিক্ষাদীক্ষায় ও দীপ্তি ছড়ানোর মতো গৌরবোজ্জ্বল ছিল তাঁর সমগ্র অবয়ব। এ সবকিছুর ঊর্ধ্বে ছিল তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শুরুটা। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের হাত ধরে তাঁর রাজনীতি শুরু ডক-শ্রমিক এবং ধাঙড়দের নিয়ে। তাঁরই যোগ্য শিষ্য এদেশের রাজনীতির প্রাণপুরুষ, একটি জাতির জীবনের উত্থানের মহান সত্তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করে অতি সাধারণ কর্মীর কর্মকা- দিয়ে শুরু হওয়া জীবনটা সাফল্যের স্বর্ণচূড়ায় জাতির জনকের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার গৌরব অর্জন করে। ইতিহাসে এমন সফলতার দৃষ্টান্ত ভূরি ভূরি না হলেও বিরল নয়। কিন্তু দিগন্তবিস্তৃত সফলতার মূল শর্তই হলো- সফল ব্যক্তিটির কর্মযজ্ঞের সত্যনিষ্ঠা, বিশ্বাস ও চেতনার অম্লান ধারাবাহিকতা এবং নিষ্কলুষ ও নির্লোভ চিত্তের দেশপ্রেম। ফাঁকিঝুঁকি দিয়ে শর্টকাটে মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রীও হওয়া যায় কিন্তু ইতিহাসের পক্ষে অক্ষয়, অম্লান ও চিরঞ্জীবভাবে নামটিকে জাজ্বল্যমান রাখা যায় না। তাই রাজনৈতিক পথপরিক্রমণে সফলতার স্বর্ণসৈকতে পৌঁছে যাওয়া ব্যক্তিত্বের তালিকায় এ উপমহাদেশে শেরেবাংলা, শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেখ মুজিবের নাম অনিবার্যভাবেই সম্মুখে এসে দাঁড়ায় হিমাচলের উচ্চতা নিয়ে।

নতুন প্রজন্মের কাছে এ নিবন্ধটির আবেদন- রাজনীতি করতে হলে নিজের চরিত্রকে নিঃস্বার্থ ও অমলিন তো রাখতেই হবে, উপরন্তু মাটি ও মানুষের ভালোবাসার আবীর মাখা হবে তার নিত্যদিনের জীবন। স্বার্থচিন্তা, অর্থ উপার্জন এমনকি সুবিধাবাদের কোনো কলঙ্কই রাজনীতিকের প্রজ্বলিত ও উদ্ভাসিত জীবনে বিন্দুমাত্র আঁচড় কাটতে পারবে না। বিনম্র চিত্তে আমি অবশ্যই স্বীকার করি, রাজনীতিতে সুবিধাবাদ দিয়ে অনেকদূর আগানো যায়, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রীও হওয়া যায়; একটা ডিকেট ধরে রাষ্ট্রপ্রধানও থাকা যায় কিন্তু ইতিহাসে সমাদ্রিত হওয়া যায় না। ইতিহাসের নির্মম, নির্ভীক ও নির্র্ভুল বিচারে আপাত প্রতিষ্ঠিত ক্ষমতাসীনকে কলঙ্কিতই হতে হয়।

বিশাল ক্ষমতাধর ব্যক্তিত্ব হিটলার ও মুসোলিনি চার্চিল ও রুজভেল্টের মতো সুনাম ও সম্মানের স্থায়ী আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারেননি। অথচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ওদের প্রত্যেকের ব্যক্তিত্ব ছিল মধ্যাহ্নের সূর্যরশ্মির মতো প্রখর ও তীব্র। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলার শুধু একজন করপোরাল থেকে জার্মানির মতো রাষ্ট্রের চ্যান্সেলরই হননি, তার দোর্দ- প্রতাপে পুরো পৃথিবী থরথর করে কাঁপত। অপ্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রতিশব্দ ছিল তার নাম। তিনি তখন যা করেছেন, আপৎকালীন সময়ে সেখানেই প্রচন্ড সফলতা পেয়েছেন কিন্তু কালের স্রোতধারায় তিনি শুধু পরাশক্তি জার্মানির জন্য পরাজয় ও বিপর্যয় ডেকে আনেননি, আত্মগ্লানি এবং অজানা আশঙ্কায় আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। ভাবলে শিউরে উঠতে হয়, মিত্রপক্ষ তার মৃত্যুর পর তার শরীরের একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশও যেন খুঁজে না পায়, সেভাবে তার মরদেহটি ভস্মীভূত করার জন্য শুধু নির্দেশই দেননি, নিজ তত্ত্বাবধানে সামগ্রিক ব্যবস্থা করে গেছেন। তার আত্মজীবনীর লেখক উল্লেখ করেছেন যে, তারই নেতৃত্বে যে জার্মান জাতি সারা বিশ্বকে পদানত করে অনন্তকাল ধরে শাসন করার স্বপ্ন দেখেছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে সেই জাতির একটা বিরাট অংশ ডাস্টবিন থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে ক্ষুধা নিবৃত্তির চেষ্টা করেছে। অনেকে সামান্য খাদ্য সংগ্রহে ব্যর্থ হয়ে ক্ষুধার যন্ত্রণায় ছটফট করে মৃত্যুবরণ করেছে। তার প্রতিষ্ঠিত নাৎসি পার্টি এখন জার্মানিতে নিষিদ্ধ।

অন্যদিকে প্রতিপক্ষ ব্রিটেনের স্যার উইনস্টন চার্চিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ের প্রারম্ভে নিতান্তই নিষ্প্রভ ও নিষ্ক্রিয় ছিলেন। এমনকি ক্ষমতাসীন দলের সদস্যও ছিলেন না। ক্ষমতাসীন লেবার পার্টি তাঁকে খুঁজে এনে প্রধানমন্ত্রীর আসনে অধিষ্ঠিত করে। তিনি তাঁর তীক্ষè বুদ্ধির তেজস্বতায় হিটলার ও মুসোলিনিকে শুধু পরাজিতই করেননি, আত্মগ্লানিতে হিটলারকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছেন। চার্চিলের বুদ্ধিমত্তার তীক্ষèতাই আমেরিকাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছে। এ সুতীক্ষè বুদ্ধিমত্তায় রাজনীতির যে গৌরব, তার অনেকটাই চার্চিলের প্রাপ্য। প্রতিপক্ষের দ্বারা আকাশ আক্রমণের আশঙ্কা সৃষ্টি হলে সাইরেন বাজিয়ে মিত্রশক্তির সর্বত্রই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিসহ সবাইকে ট্রেঞ্চে আশ্রয় নিতে হতো। ব্রিটেনে এরকম সাইরেন বাজা অবস্থায় চার্চিল ট্রেঞ্চের দিকে ছুটছিলেন। তাঁর মুখে জ্বলন্ত চুরুট ছিল। কর্মরত একজন সাধারণ পুলিশ তাঁকে চুরুটটি ফেলে দেওয়ার অনুরোধ করেন। চুরুটটি ফেলে দিয়ে চার্চিল তড়িঘড়ি করে ট্রেঞ্চের অভ্যন্তরে যেতে চাইলে পুলিশ সদস্যটি তাঁকে আবারও বাধা দেয় এবং চার্চিলের সব পকেট তল্লাশি করে তাঁর শেষ চুরুটটিও জব্দ করে নেয়। এ ঘটনার উল্লেখ করে চার্চিল লিখেছেন, এই চুরুট জব্দ করার ঘটনা হতেই আমার স্বতঃসিদ্ধ বিশ্বাস সৃষ্টি হয়, যে জাতির একটি সাধারণ পুলিশ কনস্টেবল প্রধানমন্ত্রীর পকেট তল্লাশি করে সবকটি চুরুট জব্দ করে নেয়, সে জাতি পরাজিত হতে পারে না। চার্চিলের এই বিশ্বাস সমগ্র বিশ্বযুদ্ধ পরিচালনায় তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন। আমি কৌতূহলী চিত্তে ভাবী, ইদানীং বাংলাদেশে ঘটনাটি ঘটলে তার কী বেহালই না হতো। বাধা প্রদানকারী কনস্টেবলটি নাৎসি আইনে চর হিসেবে চিহ্নিত হয়ে জীবনটাই হারাতে হতো।

এখন এ উপমহাদেশ এবং বাংলাদেশের রাজনীতির দিকে ফিরে তাকানো যাক। ভারতবর্ষে ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ভারতীয় কংগ্রেস প্রায় অবলুপ্ত। বাংলাদেশের মুসলিম লীগের মতো নিঃশেষিত না হলেও কয়েক যুগ ধরে প্রদীপ্ত সূর্যরশ্মির মতো ইন্দিরা গান্ধীর পর আর আলো ছড়াতে পারছে না। রাজীব গান্ধী অবশ্য দলটির জনপ্রিয়তাকে শক্তভাবেই আগলে রাখতে পেরেছিলেন। সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বে মনমোহন সিং দু-দুবার জওহরলাল নেহরুর মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এটি প্রচন্ড গৌরব ও সম্মানের ইতিহাস। এ সম্মানের ইতিহাস রচিত হয়েছিল সোনিয়া গান্ধীর দেশপ্রেম ও দূরদর্শিতার কারণে। রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন গুঞ্জরণ উঠল, বিশাল ভারতের প্রচন্ড ঐতিহ্যমন্ডিত রাজনীতিতে একটি বিদেশিনী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন না। গুঞ্জরণটিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে সোনিয়া গান্ধী বিনা দ্বিধায় সুনিশ্চিতভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন। তাঁর স্থলে অন্য কেউ হলে হতেনও। এটি শুধু ইতিহাসের একটি জাজ্বল্যমান দৃষ্টান্তই নয়, ইতিহাসের মধ্যে ইতিহাস সৃষ্টির প্রচন্ড গৌরব। তিনি রাষ্ট্রপতির ভবন থেকে বেরিয়ে আসা পর্যন্ত দেশের জনগণ তো বটেই সংবাদমাধ্যমের সব কর্মীও প্রায় শতভাগ সুনিশ্চিত ছিলেন, তিনিই ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে মন্ত্রিপরিষদের তালিকা পেশ করে সগৌরবে দৃপ্ত পদক্ষেপে তিনি যখন বেরিয়ে আসছিলেন, তখনো সাংবাদিকরা তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সম্বোধন করে অন্য মন্ত্রীদের তালিকা জানতে চাইলে তাঁর দুই চোখের তারায় বিদ্যুতের ঝিলিক খেলে যায়। তিনি সূর্যকিরণের দীপ্তি ছড়িয়ে সাংবাদিকদের মনমোহন সিংকে দেখিয়ে বলেন, আমি নই, উনি মহান ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সাংবাদিকরা বিস্ময়াভিভূত হয়েছিলেন, আশ্চর্যান্বিত হয়েছিলেন। কেউ কেউ এতটাই হতবাক হয়েছিলেন যে, বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। একজন ইতালিয়ান ভদ্রমহিলা ভারতের মতো পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বিশাল গণতান্ত্রিক দেশের নিশ্চিত প্রধানমন্ত্রিত্ব এমন অবলীলাক্রমে পরিত্যাগ করতে পারেন, তা শুধু ভারতবর্ষ কেন, পৃথিবীর ইতিহাসেই বিরল ও ব্যতিক্রম। আজ তিনি রোগাক্রান্ত, পরিশ্রান্ত। শারীরিকভাবে পরিশ্রমের সেই উদ্যম অনেকটাই ম্রিয়মাণ। স্বীয় সন্তান রাহুলকে দলের সর্বোচ্চ দায়িত্ব দিয়ে মাঠে নামালে পারদর্শিতার অভাবে তিনি বাবা-মা বা দাদু- কারও মতোই চমক দেখাতে পারেননি। শুধু তাই নয়, নেতৃত্বের সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে যুগ যুগ ধরে প্রবহমান পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ অসাম্প্রদায়িক ভারতে আজকে ভিন্ন হাওয়া বইছে। এ হাওয়া চিত্তকে  বিমুগ্ধ ও বিমোহিত করার মতো বসন্তের স্নিগ্ধ সমীরণ নয়। বরং গণতান্ত্রিক সত্তার চিত্তকে দগ্ধীভূত করার দীপ্তিহীন নির্দয় অগ্নিঝলক। সেই ১৮৮৫ সালেরও পূর্বকাল থেকে ভারতবর্ষের প্রবহমান রাজনীতির মৃত্যুর প্রলয়।

অহিংস, অসাম্প্রদায়িক ও নিরস্ত্র রাজনীতির জনক মহাত্মা গান্ধীর ভারতবর্ষে আজ মহিষাসুরের প্রচ- উল্লাস। শতাব্দীর ইতিহাসের অসাম্প্রদায়িক ভারত সাম্প্রদায়িক মোদির নিষ্ঠুর ও নির্মম প্রচন্ড পদাঘাতে ক্রমেই দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে। এ সাম্প্রদায়িক বিভীষিকার জয়যাত্রা রুখতে না পারলেও উদ্বিগ্ন চিত্তে অপেক্ষমান আরেকজন গান্ধী ও নেহরুর আবির্ভাবের। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি সত্তা হিসেবে আমারও কাম্য, ভারতবাসীর অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক চেতনার জয় হোক। বিশাল ভারতের বিস্তীর্ণ রাজনৈতিক পটভূমিতে করমচাঁদ গান্ধী ও জওহরলাল নেহরুর মতো ব্যক্তিত্ব আবারও হিমাচলের মতো মাথা উঁচু করে প্রতীয়মান হোক। এটি আমার কথা নয়, ইতিহাস-প্রসিদ্ধ বিজ্ঞজনের মতো, বিশাল ভারতের ভিত্তিই হলো অসাম্প্রদায়িকতা ও গণতন্ত্র। এর ব্যত্যয় ও বিচ্যুতি বিশ্বে ভারতের ভাবমূর্তিকেই শুধু বিনষ্ট করবে না, বিশাল ভারতের ঐতিহ্যকেই ম্লান করবে না, অখ- অস্তিত্বকেই ছিন্ন ছিন্ন করে দিতে পারে।

নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে ঐতিহ্যমন্ডিত ভারত সাম্প্রদায়িকতার দীপ্তিহীন আগুনে দগ্ধীভূত হোক, এটি আমরা কখনই চাই না। মুক্তিযুদ্ধের সর্ববৃহৎ সহায়ক শক্তি ভারতবর্ষে অসাম্প্রদায়িকতা ও গণতন্ত্র প্রদীপ্ত সূর্যরশ্মির বিকীর্ণ অগ্নিকণায় চির উদ্ভাসিত থাকুক; অম্লান ও অক্ষুণ থাকুক তার ঐতিহ্যের স্রোতধারা- এটিই আমাদের কাম্য। মোদি, অমিত শাহ, যোগী আদিত্যনাথদের এ দানবীয় উল্লাসে গান্ধী, নেহরু, সুবাস বোস, মোহাম্মদ আলী, শওকত আলী, সোহরাওয়ার্দী ও রবীন্দ্রনাথের ভারতবর্ষ অনাদিকালের জন্য পরাভূত হতে পারে না। এটাই ইতিহাসের শিক্ষা। ইতিহাসে হিটলার-মুসোলিনিরা আসে দোর্দ- প্রতাপ নিয়ে কালবোশেখীর ধূর্জটি ঝড়ের মতো। অনেক কিছু ধ্বংস হয়ে যায়, মানবতা বিধ্বস্ত হয়, তবে চিরকালের জন্য পরাস্ত হয় না। হিটলার ও মুসোলিনিদের আবির্ভাব যত প্রচ- ও বিভীষিকাময় হোক না কেন, চার্চিল ও রুজভেল্টদের প্রশান্ত ও স্নিগ্ধ গণতান্ত্রিক শক্তির কাছে পরাভূত হবেই; হয়েছেও। ভারতবর্ষেও গান্ধী-নেহরুর রাজনীতির বিকল্প হিসেবে নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ, যোগী আদিত্যনাথের আবির্ভাব মেদিনীকে অশান্ত, প্রকম্পিত ও শঙ্কিত করলেও এটি নিতান্তই ক্ষণস্থায়ী।  সংঘাত, সংশয় ও সাম্প্রদায়িকতা গণতন্ত্র ও মানবতার কাছে পরাভূত হতে বাধ্য।

লেখক : স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা।

সর্বশেষ খবর