করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খাদ্যাভাবের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। করোনাকালে দুটি কারণে খাদ্য উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যাপকভাবে। প্রথমত লকডাউনের কারণে, দ্বিতীয়ত যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় বহু দেশে খাদ্যপণ্যের দামে এমনই ধস নামে যে পরবর্তীতে কৃষিপণ্য উৎপাদনে কৃষক উৎসাহ হারায়। বাংলাদেশে করোনার কারণে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত না হলেও ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ বছর ধান উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ও ভারি বৃষ্টিতে রবিশস্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষক ব্যাপকভাবে শীতকালীন সবজি উৎপাদন করে লাভের বদলে লোকসানের মুখে পড়েছে। রাজধানীতেই বড় মাপের ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হয়েছে ১০ টাকা দামে। সে কপির কৃষক দাম পেয়েছে বড়জোর ২ টাকা। মুলা কোনো কোনো স্থানে ১০ কিংবা ২০ টাকা মণ দরেও বিক্রি হয়েছে। ফলে গ্রীষ্মকালীন সবজি উৎপাদনে কৃষক কতটা উৎসাহী হবে সে সংশয় কম নয়। এ অবস্থায় সরকারের উচিত হবে সব ক্ষেত্রে কৃষকের পাশে দাঁড়ানো। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এমন একটি টেকসই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে যাতে কোনো ক্ষেত্রে কৃষককে ঠকতে না হয়। প্রধানমন্ত্রী একনেকের বৈঠকে খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহে গুরুত্বদানের তাগিদ দিয়েছেন। বলেছেন মানুষের যেন খাদ্য সমস্যা না হয়। প্রধানমন্ত্রীর এ তাগিদ খুবই প্রাসঙ্গিক এবং প্রশংসার দাবিদার। কারণ বাংলাদেশ নামের ভূখ- খাদ্যাভাবে ভুগেছে অন্তত হাজার বছরের ইতিহাসে। ব্রিটিশ আমলের দুর্ভিক্ষে দেশের এক তৃতীয়াংশ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল। ১৯৯৫ সালের আগে মিনি দুর্ভিক্ষ বা মঙ্গা দেশের অনেক অঞ্চলে নিয়তির লিখন বলে বিবেচিত হতো। খাদ্য উৎপাদনে গত দুই যুগে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হলেও করোনাকালের অস্বাভাবিকতায় তা যাতে ভেঙে না পড়ে সেদিকে নজর দিতে হবে। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।