সর্বকালের সেরা বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০১তম জন্মবার্ষিকী আজ। একজন ব্যক্তি কীভাবে আপন মহিমায় ইতিহাসের বরপুত্র হয়ে উঠতে পারেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তারই উদাহরণ। বীরের জাতি হিসেবে বাঙালির পরিচিতি ছিল সেই বৈদিক যুগেও। গ্রিক বীর আলেকজান্ডারের সময়ও সমীহ করা হতো এ জাতির সাহস ও বীরত্বকে। মধ্যযুগেও তা অব্যাহত থাকে। তারপর ঘনিয়ে আসে অন্ধকারে ভরা দিন। বাঙালি পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ হয়। বাঙালি জাতি সে অভিশপ্ত অধ্যায়ের অবসান ঘটাতে সক্ষম হয় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে। দুনিয়ার ইতিহাসে তাঁর মতো জনপ্রিয় কোনো নেতার অভ্যুদয় হয়নি। ১৯৭০-এর নির্বাচনে বাংলাদেশের দুটি আসন বাদে সব কটিতে জয়ী হয় বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ। কিন্তু পাকিস্তানি কায়েমি স্বার্থবাদ বঙ্গবন্ধুর হাতে পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা ছাড়তে রাজি হয়নি। এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে। ১৯৭১ সালের ৩ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর অঙ্গুলি হেলনে পরিচালিত হয় পুরো বাংলাদেশ। সেনানিবাস ছাড়া কোথাও পাকিস্তানি শাসনের অস্তিত্ব ছিল না। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গভীর রাতে পাকিস্তানি হানাদাররা বাঙালি হত্যায় মেতে উঠলে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চের সূচনালগ্নে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। পাকিস্তানি হানাদাররা অতিদ্রুত বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হলেও আগেভাগে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী বাঙালি জাতি ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে। পাকিস্তানি দখলদাররা মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় ’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর। বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হওয়ার ২৪ দিন পর পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধু। দেশ পুনর্গঠনে নেমে পড়েন শূন্য অবস্থা থেকে। কিন্তু ’৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পাকিস্তানি চরদের হাতে নিহত হন ইতিহাসের মহানায়ক। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ারই চেষ্টা হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর অজেয় আদর্শকে পরাভূত করতে পারেনি ’৭৫-এর খুনিরা। বঙ্গবন্ধু আরও উজ্জ্বলভাবে প্রতিস্থাপিত হয়েছেন বাঙালির হৃদয়ে। বাঙালির হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু আছেন বলেই ফিনিক্স পাখির মতো ভস্ম থেকে উড়াল দেওয়ার সাহস দেখিয়েছে ১৬ কোটি মানুষের এ জাতি। জন্মদিনে জাতির পিতার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।