সোমবার, ২৯ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

সোনার বাংলার সুবর্ণজয়ন্তী

শাইখ সিরাজ

সোনার বাংলার সুবর্ণজয়ন্তী

বাঙালি হাজার বছরের। কিন্তু একাত্তর থেকে শুরু হয় নতুন জীবন। বাঙালির মনে ছিল স্বাধীন ভূমি, স্বাধীন পতাকা, স্বাধীন চেতনা। আর ছিল নিজস্ব জাতিসত্তা নিয়ে পথচলার অদম্য নেশা। পেছনে ছিল শোষণ-বঞ্চনার পাহাড়। বাঙালি জানত, সে যদি স্বাধীন হতে পারে তাহলে নিজের জীবনকে সে গড়তে পারবে নিজের মতো করে। আলাদা এক রঙে। আলাদা এক বৈশিষ্ট্য ও চেতনায়। আলাদা এক শক্তিতে। বাঙালি সামনে দেখেছে শুধু সংগ্রাম। ভেবেছে যুদ্ধই একটি উচ্চতা। এ উচ্চতা অতিক্রম করতে পারলে সে মুক্ত হতে পারবে। বাঙালির জীবনে মুক্তির এ চেতনাই এঁকেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

স্বাধীন মানুষ হিসেবে দাঁড়ানোর সময়টি বস্তুগত বিবেচনায় একেবারে কপর্দকশূন্য। কিন্তু শূন্য ছিল কি বাঙালি? স্বাধীনতার মহানায়কই দেখিয়ে দিয়েছিলেন বাঙালির সমৃদ্ধির সোপানগুলো। তার পরও সেই সময়ের অনেক বিশ্ব পন্ডিতের বিবেচনায় আমাদের দেশ ছিল তলাবিহীন ঝুড়ি। কিন্তু স্বাধীন দেশটিকে কোন পথে কোথায় নিয়ে যেতে হবে সে চিন্তা ছিল বঙ্গবন্ধুর মাথায়। সবদিকে বিধ্বস্ত ও হারানো দেশটিতে তিনি হতাশার বীজ বপন না করে বপন করেন চেতনার বীজ। সে সময়ের দৃষ্টিতে যে আগামীর স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন, যে স্বপ্নে বীজ ছড়িয়ে দিলেন সেই আগামীর নাম সোনার বাংলা। এ মমতামাখা বিশেষণ সামনে রেখেই প্রতিটি দেশপ্রেমিক ছুটেছে প্রিয় মাতৃভূমি বিনির্মাণে। পৃথিবীতে এ এক নজিরবিহীন উন্নয়ন বাস্তবতা।

১০ জানুয়ারি, ১৯৭২ বঙ্গবন্ধু স্বদেশের মাটিতে পা রাখলেন। তখন চারদিকে শূন্যতা আর হাহাকার। তখন বাংলার প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য, ষড়ঋতুর বৈচিত্র্য আর মানুষের বুকের দৃঢ়তা ছাড়া কিছুই ছিল না। ছিল শুধু আত্মবিশ্বাস জাগানিয়া একজন নেতা। ঠিক এ সময় থেকে মাত্র আড়াই মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধু দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্দেশ্যে গড়ে তোলেন জাতীয় পরিকল্পনা কমিশন। বঙ্গবন্ধু নিজেই হলেন চেয়ারম্যান। এর ঠিক আঠারো মাসের মধ্যেই তিনি প্রণয়ন করলেন এক ধ্রুপদি দলিল। বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। বাঙালির জীবনমান উন্নয়ন, নিজস্ব সম্পদের উৎপাদন বাড়ানো থেকে শুরু করে প্রতিটি বিষয়কে স্পর্শ করা হলো ওই উন্নয়ন দর্শনে। সেটিই ছিল আজকের উন্নয়ন ধারণার প্রথম বীজপত্র। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমানের সঙ্গে কথা হচ্ছিল সেদিন। তিনি বলছিলেন, ১৯৭১-এ দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ৯৩ ডলার। ১৯৭৫-এ তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭৩ ডলারে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৬ সালে তা কমে গিয়ে হয় ১৩৮ ডলার। ১৯৮৮ সালে মাথাপিছু আয় ছিল ২৭০ ডলার। অর্থাৎ এক যুগের বেশি সময় ধরে উন্নয়নের চাকা ছিল স্থবির কিংবা বলা চলে পশ্চাৎপদ। বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী ১৯৭১ সালে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ছিল ৮ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭৩ বিলিয়ন ডলার। স্বাধীনতার বছর দেশের ৮০ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করত। সর্বশেষ হিসাবে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। ১৯৭১ সালে গড় আয়ু ছিল ৪৭ বছরের একটু বেশি। বিবিএসের সর্বশেষ হিসাবে তা ৭২ বছরে উন্নীত হয়েছে।

১৯৭১ থেকে ২০২১, বাংলাদেশের ৫০ বছর। মাঝে কেটেছে বহু অশান্ত সময়। বহু অনিশ্চয়তা। এসেছে নানামুখী প্রয়াস। এসেছে ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক চিন্তার প্রয়োগ। ’৭৫-এর ভয়াবহ ও ইতিহাসের কলঙ্কজনক পট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাঙালির উন্নয়ন দর্শন আর পাখা বিস্তার করতে পারেনি। কিন্তু টানা গত ১২ বছর সে একই উন্নয়ন দর্শন সঠিক ও হালনাগাদ উপায়ে প্রয়োগ হওয়ায় আবার দ্রুতই বাংলাদেশ তার সঠিক গতিধারার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

১৯৭২-৭৩ সালে বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি, ২০১৮-১৯-এ ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি, ২০১৯-২০-এ ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি এবং ২০২০-২১ সালের বাজেট ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। ১৯৭২-৭৩ সালের তুলনায় বাজেটের আকার বেড়েছে প্রায় ৭২২ গুণ। ১৯৭২-৭৩ সালে উন্নয়ন বাজেটের আকার ছিল ৫০১ কোটি টাকা, যা বেড়ে ২০১৮-১৯ সালে হয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি, যা ৩৪৫ গুণ বেশি। এসব কিছুর প্রতিফলন দেখা যায় বিদ্যুতায়ন, গ্রামীণ সড়কের ঘনত্ব, শিল্পায়ন, গৃহায়ণ, নগরায়ণ, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, দারিদ্র্য বিমোচন প্রভৃতি ক্ষেত্রে। সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও আমাদের ৫০ বছরের অগ্রগতি স্বস্তিদায়ক। যেমন সার্বিক সাধারণ শিক্ষা, স্বাস্থ্য তথা শিশুমৃত্যু, মাতৃমৃত্যু, গড় আয়ু, ইপিআই, নারীর ক্ষমতায়ন, জন্ম ও মৃত্যু হার হ্রাস ইত্যাদিতে অগ্রগতির উল্লেখ করা যেতে পারে।

বাংলাদেশের এ অগ্রগতির পেছনে রয়েছে অনেক নিয়ামক। জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে রীতিমতো বিপ্লব ঘটে গেছে। সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি, বিদ্যালয়ে ভর্তির হার, ছাত্রছাত্রীর সমতা, নারী শিক্ষায় অগ্রগতি, শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার দ্রুত কমে যাওয়াসহ শিক্ষার অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যাপক এগিয়েছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম নিয়ামক নারীর ক্ষমতায়ন। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এগিয়ে নিয়েছে অর্থনীতির চাকা। গার্মেন্টশিল্পের অগ্রযাত্রা বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। গার্মেন্ট রপ্তানিতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে। পোশাকের পাশাপাশি বাংলাদেশের ওষুধ এখন ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার ৮০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। দেশি ওষুধশিল্প কারখানাগুলো দেশের মোট চাহিদার শতকরা ৯৭ ভাগ ওষুধ জোগান দিচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ (রেমিট্যান্স) প্রবাহের ক্ষেত্রে ২০২০ সালে বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম।

৫০ বছরে আমাদের কাক্সিক্ষত সাংস্কৃতিক বিকাশ ঘটেছে। ক্রীড়া ক্ষেত্রে এসেছে অসামান্য সাফল্য ও মর্যাদা। গণমাধ্যমের ঘটেছে বৈপ্লবিক বিকাশ। এর ভিতরে ভিতরে নানা অসংগতি, অসম প্রতিযোগিতা ইত্যাদি থাকলেও সাধারণ মানুষ তাদের অবস্থান থেকে এসব খাতের সুবিধাগুলো উপভোগ করতে পারছে। কৃষিতে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়। কৃষিজমি কমতে থাকা, জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ। ধান, গম ও ভুট্টা বিশ্বের গড় উৎপাদনে পেছনে ফেলে ক্রমেই এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। সবজি উৎপাদনে তৃতীয় আর চাল ও মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে। বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও দুর্যোগসহিষ্ণু শস্যের জাত উদ্ভাবনেও শীর্ষে বাংলাদেশের নাম।

আমার সৌভাগ্য যে বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নের পথটি আমি খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। বলা যায় ওই পথ ধরে আমিও হেঁটে এসেছি সমান্তরালে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে আশির দশকে আমি যখন বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘মাটি ও মানুষ’ অনুষ্ঠানটির জন্য গ্রামে গ্রামে কৃষকের কাছে গিয়েছি দেখেছি কৃষকের দুর্দিন, দৈন্যদশা। দেখেছি গ্রামের সম্ভ্রান্ত কৃষকের বাড়ির কাচারিঘরের সামনে ভাতের ফেনের জন্য লাইন ধরে লোক দাঁড়িয়ে থাকত। ছিল খাদ্যাভাব। সে সময়টাতে আমার মনে হয়েছে কৃষককে তথ্য দিয়ে হয়তো আমি সহায়তা করতে পারব। আমার মনে আছে আমি যখন গিয়ে বলেছি আপনারা ইরির উচ্চফলনশীল ধান চাষ করুন তারা বলেছেন, ওই ধানের ভাত রবারের মতো, ওই ধান চাষ করব না। তারা গম চাষ করবেন না, কারণ রুটি তো পাকিস্তানের খাবার। কিংবা ভুট্টা চাষের কথা বললে বলতেন, ‘ওই জুলফিকার আলীর ভুট্টোর বেইল নাই!’ কিন্তু আমি ক্রমাগত বলে গেছি, নতুন নতুন তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমি বিশ্বাস করি টেলিভিশনের একটা শক্তি আছে যা সহজেই মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে। মানুষ দ্রুত তা গ্রহণ করে। চিন্তা করেছি টেলিভিশন ব্যবহার করে কীভাবে বাংলাদেশের কৃষিকে পাল্টে দেওয়া যায়। কৃষি মানেই ধান-পাট বা ফসল নয়। পৃথিবীর সব দেশেই কৃষিকে আলাদাভাবে চিন্তা করা হয় না, বলা হয় কৃষি, কৃষিবাণিজ্য ও পুষ্টি। এর ফলে কৃষির বিভিন্ন উপখাতের সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য ও পুষ্টি সংক্রান্ত বিষয়াদি একসূত্রে গাঁথা পড়ে। ৫০ বছরের কৃষি উন্নয়ন যাত্রায় বাংলাদেশের কৃষক এ দেশের মানুষের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন করতে সমর্থ হয়েছে। কৃষকের পাশাপাশি এ উন্নয়ন যাত্রায় বিজ্ঞানী, গবেষক, মাঠ পর্যায়ের কর্মীবৃন্দ, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। কৃষিতে ফলন বেড়েছে, মানুষের ভাতের অভাব কমেছে। নব্বইয়ের দশকেও দেখেছি কৃষকের খাবার থালাটিতে ভাত ভরা থাকত, কোনায় থাকত এক টুকরো পিঁয়াজ আর একটা কাঁচা মরিচ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই প্লেটের অবস্থাও পাল্টেছে। ভাত কমে সেখানে যুক্ত হয়েছে সবজি, মাছ, মাংস, ডাল। ফসল বৈচিত্র্যের পাশাপাশি নানারকম ফল চাষও বেড়েছে। আগে ফলের দোকানে লাল ও কমলা রং চোখে পড়ত। অর্থাৎ আপেল আর কমলায় ভরে থাকত ফলের দোকানগুলো। এখন ফলের দোকানে যে রঙের বৈচিত্র্য দেখা যায় তা বাংলাদেশের কৃষকই এনেছে। বর্তমান সময় বাংলাদেশের কৃষির সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ একটি সময়, সমৃদ্ধ একটি সময়। ফলে ফসলে অভাবনীয় প্রাচুর্য দেখছি আমরা। ধানসহ সব খাদ্যশস্য, সবজি, ফল থেকে শুরু করে মাছ, মাংস, ডিম ও দুধ উৎপাদনে আমাদের সাফল্য দৃষ্টান্তমূলক। বহু প্রতিকূলতা পেরিয়ে কৃষক আজকের উৎপাদন সাফল্য অর্জন করেছে। এর পেছনে মুক্তবাজার অর্থনীতি ও বিশ্বায়নের যেমন প্রভাব রয়েছে, একইভাবে রয়েছে কৃষকের ব্যক্তি উদ্যোগ। উচ্চমূল্যের ফল-ফসল আবাদ করে কৃষক নিজস্ব প্রচেষ্টায় কিছুটা বাণিজ্যিক সাফল্য অর্জন করতে সমর্থ হয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএওর বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি পরিস্থিতি প্রতিবেদন অনুযায়ী স্বাধীনতা-পরবর্তী ৫০ বছরে দেশে প্রধান খাদ্যশস্যের উৎপাদন বেড়েছে ৩ থেকে ৫ গুণ। ১২টি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ পৃথিবীর শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে রয়েছে। সম্প্রতি ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ তাদের ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবল-২০২১’ নামের রিপোর্টে এ পূর্বাভাস দিয়েছে যে বাংলাদেশ এখন যে ধরনের অর্থনৈতিক বিকাশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ দেশটি হবে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতি। যেসব দেশকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ ২৫তম অর্থনীতি হবে তার মধ্যে আছে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ডেনমার্ক, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, নরওয়ে, আর্জেন্টিনা, ইসরায়েল, আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, নাইজেরিয়া, বেলজিয়াম, সুইডেন, ইরান ও তাইওয়ান।

জনবহুল বাংলাদেশ আজ এক অন্য চেহারা নিয়েছে। সবখানে সঞ্চারিত হয়েছে অর্থনৈতিক গতি। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের চোখে মুখে জেগেছে স্বপ্ন। যোগাযোগব্যবস্থার বৈপ্লবিক বিকাশে পাল্টে গেছে গ্রামীণ জীবন। নগর জীবনে বহুবিধ সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারিত হচ্ছে। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে সংগতি রেখে সংযোজিত হচ্ছে আমাদের জীবনযাত্রার নতুন নতুন ব্যবস্থা। এসব সফলতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পূরণ করছে মানব উন্নয়নের সব সূচক। তাই স্বল্পোন্নত দেশ থেকে পৌঁছে গেছে উন্নয়নশীল দেশে। এসব উন্নয়নের পেছনে আমাদের গ্রামীণ জীবনের অগ্রযাত্রার রয়েছে বহুমুখী অবদান।

মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সরকারের বহুমুখী উদ্যোগের পাশাপাশি রয়েছে বেসরকারি সংস্থা ও সংগঠনের বহুমুখী উদ্যোগ। এরই মধ্যে আমাদের উন্নয়নধারায় যেসব বড় বড় সাফল্য যুক্ত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের বহুমুখী অগ্রযাত্রা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের বিস্ময়কর অগ্রগতি, জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশের সাফল্যজনক অংশগ্রহণ ও বহু সাফল্যের দৃষ্টান্ত সৃষ্টি, শিল্প ও বাণিজ্য খাতে নতুন নতুন সাফল্য। বিশেষ করে পোশাকশিল্পের পাশাপাশি জাহাজ নির্মাণ, আবাসন, ওষুধ ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উৎপাদন ও রপ্তানি বাণিজ্যে বিশ্ববাজারে সুনাম এসেছে।

১০টি মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। যেগুলো বাংলাদেশকে পৌঁছে দেবে উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্নসিঁড়ির কাছাকাছি। পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প, ঢাকায় মেট্রোরেল প্রকল্প, পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ প্রকল্প, দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, কয়লাভিত্তিক রামপাল থারমাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, পায়রা বন্দর নির্মাণ প্রকল্প এবং সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প।

এসব কিছুর মধ্যেও যে বিষয়টি সবচেয়ে গলা বাড়িয়ে বলার মতো তা হলো, আমাদের দেশের মানুষের নিজস্ব উদ্যোগের শক্তি ও সামর্থ্য অনেক বেড়েছে। একেক খাতের তৃণমূল উদ্যোক্তারাই এগিয়ে নিচ্ছেন আমাদের অর্থনীতি। এ করোনা পরিস্থিতিতে গোটা পৃথিবী যখন উদ্বিগ্ন ও অনিশ্চয়তায় পতিত, সরকারি নানামুখী প্রয়াসসহ নানা কারণেই দেশের মানুষ বুকে বেঁধেছে দারুণ আত্মবিশ্বাস। স্বাধীনতার ৫০ বছরে যে বাংলাদেশ রচিত হয়েছে তার পেছনে রয়েছে অগণিত মানুষের উদ্যোগ ও প্রয়াস। সরকারের গণমুখী ও সঠিক নীতিসহায়তাই তাদের যেমন এগিয়ে নিতে পারে, একইভাবে অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিতে পারে সোনার বাংলাদেশকে।

সোনার বাংলার সুবর্ণজয়ন্তীতে সবার প্রতি শ্রদ্ধা।

লেখক : মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।  

[email protected]

সর্বশেষ খবর