করোনাভাইরাস সমগ্র মানব জাতির জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। দুনিয়াজুড়ে মহামারীর আকার ধারণকারী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় সোয়া ১৩ কোটি মানুষ। মৃতের সংখ্যা ১৪ লাখ ৬৯ হাজারে ঠেকেছে। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে চিকিৎসা সুবিধার সীমাবদ্ধতায় করোনায় আক্রান্তদের শনাক্তের অভাবে বেশির ভাগই থাকে হিসাবের বাইরে। ফলে আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা যে অনেক বেশি তা সহজে অনুমেয়। ভয়াল এ ভাইরাস ইতিমধ্যে বাংলাদেশের জন্য দ্বিমুখী চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। এর একটি স্বাস্থ্য সুরক্ষার অন্যটি অর্থনীতির। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হলেও নাগরিক সচেতনতার অভাবে তা যথাযথভাবে প্রতিপালিত না হওয়ায় করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ থাবা বিস্তার করেছে। ইতিমধ্যে ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্তের হার ৭ হাজার ছাড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা গত রবিবার ছিল ৫৩। করোনার থাবা এক মাসের ব্যবধানে কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার বাধ্য হয়ে গতকাল থেকে সপ্তাহব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করেছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিরিখে এ সিদ্ধান্ত শতভাগ সঠিক হলেও তা খেটে খাওয়া মানুষের জন্য অশনিসংকেত বিবেচিত হচ্ছে। অর্থনীতিবিদদের মতে সাত দিন পরে সংক্রমণ বিবেচনা করে যদি লকডাউন খুলে দেওয়া হয় তাহলে তা খেটে খাওয়া মানুষের জন্য খুব একটা ক্ষতিকর হবে না, নয় তো তাদের জীবন-জীবিকা অচল হয়ে পড়বে। গত বছর সাধারণ ছুটির কারণে অনেকে পেশা পরিবর্তন করেছেন। অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাই করেছে, বেতন কমিয়েছে। বন্ধ হয়েছে ইনক্রিমেন্ট, প্রমোশন। অসংখ্য মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তাই অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে স্বাস্থ্য সুরক্ষার সরকারি নির্দেশনা যাতে শতভাগ পালিত হয় সেদিকে জোর দিয়ে দৈনন্দিন জীবন স্বাভাবিক করে দিলে তা হবে উত্তম। নাগরিকদের কেউ বাইরে বেরোলে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় কঠোর হতে হবে। বন্ধ রাখতে হবে সব ধরনের সমাবেশ। বাজারগুলোয় ভিড় এড়ানো নিশ্চিত করা জরুরি। এটি সম্ভব হলে সংক্রমণ যেমন নিয়ন্ত্রণে আসবে, তেমন সচল থাকবে অর্থনীতি।