বুধবার, ২১ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

কদর খানের পরাজয়

কদর খানের সেনারা ফখরুদ্দিনের   দলে যোগ দেওয়ায় তার পতন অনিবার্য হয়ে ওঠে। ফখরুদ্দিন কদর খানের সেনাদের বলেন তারা বিদ্রোহী হয়ে তার সঙ্গে যোগ দিলে তিনি রাজধানীতে সঞ্চিত সমুদয় ধনসম্পদ তাদের মধ্যে বণ্টন করে দেবেন। ধনসম্পদের লোভে কদর খানের সেনারা বিদ্রোহ করে কদর খানকে হত্যা করে (১৩৪০) এবং ফখরুদ্দিনের সঙ্গে যোগদানের জন্য অগ্রসর হয়। ফখরুদ্দিন সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীতে প্রবেশ করেন এবং সঞ্চিত ধনসম্পদ আয়ত্তে এনে প্রতিশ্রুতিমতো সেনাদের মধ্যে বণ্টন করে দেন। সোনারগাঁয়ে অবস্থান সুদৃঢ করে ফখরুদ্দিন  লখনৌতি ও সাতগাঁর শাসনক্ষমতা করায়ত্ত করার উদ্যোগ নেন। লখনৌতির শাসনকর্তা কদর খানের মৃত্যু ও ফখরুদ্দিনের সঙ্গে যুদ্ধে সাতগাঁয়ের শাসনকর্তা আইজ্জুদিন ইয়াহিয়া নিহত হওয়ায় লখনৌতি ও সাতগাঁও উভয় প্রদেশই তখন ছিল শাসকশূন্য। ফখরুদ্দিন তখন মুখলিস খানকে লখনৌতিতে তাঁর নায়েব নিযুক্ত করে লখনৌতি ও এর অধীন অঞ্চল অধিকারের জন্য শক্তিশালী বাহিনীসহ পাঠান। কিন্তু কদর খানের বাহিনীর আরিজ-ই-লশকর মালিক আলী মুবারক সেনা সংগ্রহ করে মুখলিস খানের অভিযান প্রতিহত করেন। যুদ্ধে মুখলিস খান পরাজিত ও নিহত হন। তাঁর গোটা বাহিনী বিধ্বস্ত হয়। আলী মুবারক লখনৌতির শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। সাতগাঁ দখলের জন্য ফখরুদ্দিনের প্রচেষ্টা সম্ভবত সফল হয়নি। তাঁর বাহিনী সাতগাঁ আক্রমণ করে সেখানে বেপরোয়া লুণ্ঠন চালায়। কিন্তু সাতগাঁয় তাঁর পক্ষে অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়নি। ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ ১৩৪০ খ্রিস্টাব্দে ত্রিপুরা রাজ্য আক্রমণ করে যুদ্ধে ত্রিপুরারাজ রাজা প্রতাপমাণিক্যকে পরাজিত করেন। বৃহত্তর কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিলেট ও চট্টগ্রাম জেলায় ফখরুদ্দিনের আধিপত্যের ফলে ত্রিপুরার রাজা সম্পূর্ণ কোণঠাসা হয়ে পড়েন। ফখরুদ্দিনের দক্ষিণ-পূর্বমুখী অভিযানে আরাকানের রাজাও তাঁর রাজ্যের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন এবং সম্ভবত সোনারগাঁর সুলতানের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করেন। ফখরুদ্দিন মুবারক শাহের রাজত্বকালে মরক্কোর পর্যটক ইবনে বতুতা বাংলা সফর করেন (১৩৪৬)। তিনি বাংলায় তাঁর ভ্রমণের এক মূল্যবান বিবরণ লিপিবদ্ধ করে যান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর