বৃহস্পতিবার, ২০ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা

ঢালাওভাবে বিদেশি পরামর্শক আর নয়

বাংলাদেশে যে কোনো উন্নয়ন প্রকল্পে ঢালাওভাবে বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ পাকিস্তান আমল থেকে চলে আসছে। ১৯৭১ সালে রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জিত হলেও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অনেকাংশে অর্জিত হয়েছে গত এক যুগে। পাকিস্তান আমল থেকে চলতি শতাব্দীর প্রথম দশক পর্যন্ত দেশের বাজেট প্রণীত হতো বিদেশি ঋণ কিংবা অনুদানের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। দাতা দেশগুলো যে সহায়তা দিত তার এক বড় অংশ ব্যয় হতো উন্নয়ন প্রকল্পে যেসব বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ করা হতো তাদের বেতন-ভাতা ও আনুষঙ্গিক খরচে। এ শতাব্দীর প্রথম দশকের শেষ ভাগে বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে বাজেট প্রণয়নের সক্ষমতা অর্জন করে। এমনকি করোনাকালে যখন অর্থনীতির হালহকিকত স্বস্তিকর নয় তখনো বাংলাদেশ চলছে নিজের অর্থে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বৈদেশিক ঋণ সহায়তা নেওয়া হলেও বাংলাদেশ যেহেতু এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয় সেহেতু সে সহায়তার জন্য ঋণদাতা দেশ বা সংস্থার পরামর্শক নিয়োগের শর্ত মানার এখন বাধ্যবাধকতা নেই। তার পরও লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন প্রবচনে প্রলুব্ধ হয়ে আমাদের কর্তাব্যক্তিরা উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশি পরামর্শক নিয়োগের অভ্যাস থেকে সরে আসতে পারেননি। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ঢালাওভাবে বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ না করার নির্দেশনা দিয়েছেন। তাঁর এ নির্দেশনা খুবই তাৎপর্যের দাবিদার। উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশি পরামর্শকের প্রয়োজন রয়েছে যেসব ক্ষেত্রে নিজেদের সক্ষমতার অভাব রয়েছে। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেলের মতো প্রকল্পে বিদেশি পরামর্শক পরিহারের সুযোগ এখনো সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু যেসব প্রকল্পে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরাই পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন সে ক্ষেত্রে বিদেশিদের নিয়োগ জনগণের ট্যাক্সের টাকারই অপচয়। প্রধানমন্ত্রী তাঁর নির্দেশনায় নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে গবেষণা খাতে যথাযথ নজর দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। আমাদের বিশ্বাস, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা যথাযথভাবে পালিত হলে উন্নয়নের ক্ষেত্রে অপচয়ের একটি খাত বন্ধ হবে। টেকসই উন্নয়নের পথও মসৃণ হবে।

সর্বশেষ খবর