মিথ্যাচার করতে একটি মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করেন ইতিহাসের খলনায়ক হিটলার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলার তৈরি করেন গুজব মন্ত্রণালয়। অবশ্য ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই তিনি এ কাজে তৎপর ছিলেন। হিটলার খেয়াল করেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা প্রচারণায় এগিয়ে ছিল। জার্মানরা প্রচারণায় মার খেয়েছে বারবার। শুধু প্রচারণা দিয়েই ব্রিটিশরা আড়াল করেছিল অনেক কিছু। জার্মানরা মার খায় ব্রিটিশ প্রচারণার কাছে। ব্রিটিশ মিডিয়া গুজব ছড়িয়ে জার্মানদের বিভ্রান্ত করতে পেরেছিল। ব্রিটিশ গুজব ও প্রচারণার কাছে জার্মানরা নাস্তানাবুদ হয়। হিটলার ভাবনায় পরিবর্তন আনেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তৈরি করেন বিশেষ মন্ত্রণালয়। নাম দেন ‘মিনিস্ট্রি অব পাবলিক এনলাইটেনমেন্ট অ্যান্ড প্রোপাগান্ডা’। আর এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন প্রিয়ভাজন গোয়েবলসকে। এই গোয়েবলস পিএইচডি শেষ করে কিছুদিন ব্যাংকার ও পরে সাংবাদিকতা করেন। তারপর যোগ দেন রাজনীতিতে। ইচ্ছা ছিল সেনাবাহিনীতে যোগদানের। কিন্তু তার এক পা খাটো ছিল জন্মগত। এ কারণে সেনাবাহিনীতে যাওয়া হয়নি। দল হিসেবে বেছে নেন হিটলারের নাৎসি পার্টিকে। সামনে আসতে বেশি সময় লাগেনি। দিনকে রাত বানাতে পারতেন। বাস্তবের সঙ্গে মিল নেই এমন সব আজগুবি খবর সৃষ্টি করতেন। মানুষ যা কল্পনা করত না তা-ই বাস্তব বানিয়ে ছাড়তেন। এমন নিখুঁতভাবে করতেন সবকিছুই বিশ্বাসযোগ্য মনে হতো। প্রথম সাক্ষাতের পরই হিটলার তাকে লুফে নেন। তারপর বিশেষ গোপনীয়তা বজায় রেখে সব কাজ করতেন। তখন এত যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ ছিল না। আর সেই সুযোগকে ঠান্ডা মাথায় কাজে লাগাতেন গোয়েবলস।
আজকাল কেন জানি মনে হয় গোয়েবলসি মিথ্যাচারের যুগে ফিরে গেছি আমরা। অসুস্থ, ব্যর্থ ঈর্ষাকাতর নষ্টরা একটা হিংসুটে সমাজ তৈরি করছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে সর্বস্তরের যার তার বিরুদ্ধে বেপরোয়া মিথ্যাচার করছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ব্যবহার করে। কুৎসা নোংরামি গোয়েবলসকেও হার মানায়। সেদিন র্যাবের একটা ভিডিও দেখলাম টেলিভিশনে। লেকে মরা মাছ ভাসছে। মানুষ ভিড় করে দেখছে। পথচলা একজন জানতে চাইলেন, ভাই কী হয়েছে? জবাবে আরেকজন বললেন, লেকে মরা মাছ ভাসছে। সেই লোক শুনল লেকে লাশ ভাসছে। দূর থেকে মোবাইলে লেকের ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়ে দিল ‘লেকে লাশ ভাসছে’। মুহূর্তে গুজব ছড়িয়ে পড়ল গোটা শহরে, ‘লেকে মরা লাশ ভাসছে’। তেমনি গার্মেন্ট কারখানায় মশার ওষুধ ছিটানোর ধোঁয়া দেখে ছবি তুলে আরেকজন ফেসবুকে লিখে দিলে, ‘আগুন লেগেছে গার্মেন্টে’। ব্যস, আর যায় কোথায়? সবাই ব্যস্ত হয়ে গেল আগুন নিয়ে। হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে হতাহত গার্মেন্টের মেয়েরা। এমনও হাজারো গুজব ছড়ানো হচ্ছে এখন সমাজে। কিছু লোকের কাজই হলো বাজেভাবে সমাজে গুজব ছড়ানো। হিটলারি প্রচারণার সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায় আজকালের অনেক কিছুতে।
হিটলারের সময় জনপ্রিয় ছিল রেডিও। বিনামূল্যে জার্মান নাগরিকদের একটি করে রেডিও দেওয়ার ব্যবস্থা করেন মন্ত্রী গোয়েবলস। হিটলার সব সময় বিশ্বস্ত এই সহযোগীর কথা শুনতেন। কারণও ছিল। গোয়েবলসের আলোচিত উক্তি ছিল, ‘আপনি যদি একটি মিথ্যা বলেন এবং সেটা বারবার সবার সামনে বলতে থাকেন তাহলে লোকজন একসময় সেটা বিশ্বাস করতে শুরু করবে।’ জার্মানিতে তা-ই হয়েছিল। ইহুদি নিধনের সময় গোয়েবলস প্রচার করতেন, জার্মানিতে হিটলারের মতো শক্তিশালী একজনকে দরকার। তিনিই পারবেন জার্মান জাতিকে তার হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে দিতে। বেতারে এ প্রচারণা শুনতে শুনতে মানুষ বিশ্বাসও করত। আলোচনায় ইহুদি নিধনের পরিবর্তে সব সময় সামনে থাকত হিটলারের সাফল্য নিয়ে। যুদ্ধের আগে প্রচারণা ছিল এক ধাঁচের। যুদ্ধের সময় আরেক। জার্মান রেডিও-টিভিতে শুধুই থাকত হিটলার ও তার বাহিনীর সাফল্যের কথা। বাস্তবে যখন রাশিয়ানদের হাতে জার্মান সেনারা নাস্তানাবুদ তখন গোয়েবলসের প্রচারণা ছিল সোভিয়েত রাশিয়া তাদের দখলে। জার্মান সেনারা রাশিয়ান ভদকা পান করছে। আর রাশিয়ান মেয়ে নিয়ে আনন্দফুর্তি করছে। এ ধরনের প্রচারণা প্রতিদিনই হতো। আমেরিকা আর ব্রিটিশ সেনাদের বিরুদ্ধে চলত কুৎসা রটনা। যার কোনো আগামাথা ছিল না। গোয়েবলসের শেষ পরিণতি ছিল করুণ। তাকে মরতে হয়েছিল পরিবার-পরিজন নিয়ে বিষপান করে। মৃত্যুতেও হিটলারের পথ অনুসরণ করেছিলেন। বিশ্ববাস্তবতায় আমরা কি গোয়েবলসীয় প্রচারণা থেকে মুক্ত হতে পেরেছি? এই যুগে এই সময়ে প্রচার হয় একজন মানুষকে চাঁদে দেখা গেছে। আর এ প্রচারণাতেই মধ্যরাতে সবাই ঘরবাড়ি থেকে বের হয়ে যায় দেশি অস্ত্র টেঁটা, বল্লম, লাঠি নিয়ে। আগুন ধরিয়ে দেয় সরকারি অফিস-আদালতে। নিজের জীবনও বিলিয়ে দেয়। বেশি দিন আগের কথা নয়। সময়টা ২০১৩ সালের ৩ মার্চ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানো হয়, জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে গোপন স্থানে নিয়ে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। ফাঁসির পর তিনি আকাশে উড়ে গেছেন। কিছুক্ষণ আগে দেখা গেছে চাঁদে। তিনি চাঁদে বসে তাকিয়ে আছেন। আজব! এই যুগে এই সময়ে এমন প্রচারণা শুনে মানুষ বেরিয়ে আসে ঘরবাড়ি থেকে। এ ধাঁচের প্রচারণা দেখেছি ছাত্রদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময়ও। একজন অভিনেত্রী ফেসবুক লাইভে আসেন। তিনি বলতে থাকেন, চার ছাত্রকে মেরে ফেলা হয়েছে। রাজধানীর ধানমন্ডিতে লাশ পড়ে আছে। তিনি নিজের চোখে সবকিছু দেখেছেন। মুহূর্তে এ গুজব ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুক, ইউটিউবসহ নানা ওয়েবসাইটে। ব্যস, আর যায় কোথায়? সবাই মিলে এ নিয়ে গবেষণায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বড় অদ্ভুত সবকিছু।মানুষ কেন এমন গুজব ছড়ায়? সেদিন এক মনোবিজ্ঞানীকে প্রশ্ন করেছিলাম। জবাবে তিনি বললেন, সবচেয়ে বড় কারণ হতাশা। আর হতাশা থেকে গুজব ছড়ানো একটা বড় ধরনের রোগ। কেউ গুজব ছড়ায় ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলে। কেউ গুজব ছড়ায় ঈর্ষা, হিংসা, ব্যক্তিগত হতাশা, ব্যর্থতা ঢাকতে। মগজে সারাক্ষণ হিংসা লুকিয়ে থাকায় কিছু লোক অশ্লীল আনন্দ পায় মিথ্যাচার করে। এক ধরনের অসুস্থতা থেকেই মানুষ সত্য লুকিয়ে, অন্যের বিরুদ্ধে মিথ্যা কুৎসা রটায়। বাংলাদেশে এই মানসিক অসুখটি অনেক বেশি বেড়েছে। গোয়েবলসীয়দের অত্যাচার থেকে নারী-শিশুদেরও রেহাই মিলছে না। তারা সবকিছুতেই নেতিবাচক অবস্থান দেখে। কোথাও ইতিবাচক কিছু খুঁজে পায় না। ওদের সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ সফল মানুষদের বিরুদ্ধে। আগে প্রকাশ ঘটানোর স্থানের অভাব ছিল। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে বাজেভাবে ব্যবহার করছে।
গোয়েবলসীয় কান্ড শুধু আমাদের দেশে হচ্ছে তা নয়। মিথ্যা প্রচারণার শিকার হয়েছিলেন ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন। বিশ্ব মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, ইরাকের কাছে জীবাণু অস্ত্র আছে। এ অস্ত্র দিয়ে দুনিয়ায় কিয়ামত আনা সম্ভব। আর গুজবটা ছড়িয়েছিলেন খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। সঙ্গে ছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। থেমে থাকল না পশ্চিমা মিডিয়াও। তারাও সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে আজব সব তথ্য প্রকাশ করল। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল কোনোটারই বাস্তব ভিত্তি নেই। কিন্তু গুজবের ভিত্তিতেই শেষ হয়ে গেল একটি দেশ। সাদ্দাম ছিলেন একনায়ক। তিনি চলতেন নিজের খেয়ালখুশিমতো। আর সেটাই সহ্য করতে পারেনি আমেরিকা ও তার মিত্ররা। বুশের সঙ্গে সুর মেলাতে গিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার বলেছিলেন, সাদ্দামের হাতে এমন অস্ত্র আছে এর সামান্য ব্যবহারে মুহূর্তে লন্ডন শহর ধ্বংস হতে পারে। বাস্তবে সাদ্দাম যুগ তথা ইরাক যুদ্ধ শেষে প্রমাণিত হয়েছিল গোয়েবলসীয় প্রচারণা কতটা অলীক, ভিত্তিহীন। এমন প্রচারণার শিকার প্রেসিডেন্ট আসাদ ও তার দেশ সিরিয়া। আসাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ আর বাস্তবতা নিয়ে বিশ্ব মিডিয়ায় বিভক্তি রয়েছে। মিথ্যা প্রচারণায় পৃথিবী আজ মানুষের বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। করোনাকালে এখন একটা ভয়াবহ চিত্র বিশ্ব দেখছে নতুনভাবে।
সেদিন এক বন্ধু বললেন, একদল নষ্ট ঈর্ষাপরায়ণ মানুষের কারণে দুনিয়াটা জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। ঈর্ষার অনলে জ্বলতে থাকা মানুষ সবকিছু ছাই করে দিতে চায়। পৃথিবীর কোনো সৌন্দর্যই তাদের ভালো লাগে না। সভ্যতার সব উন্নতি-সমৃদ্ধির বিরুদ্ধে তারা। এ মানুষগুলোর কারণে দুনিয়াটা বাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে। এখন বাঁচতে হলে লড়াই করে টিকতে হবে। অথবা দৌড়ে পালাতে হবে সবকিছু ছেড়ে। এ জগৎ-সংসার থেকে পালানো সহজ কাজ। সংগ্রাম করে টিকে থাকা অনেক কঠিন। কাঠিন্যকে ভেদ করে চলতে পারাটাই বিজয়ের। পরাজয়ে আনন্দ নেই। হুমায়ুন আজাদকে একটা সময়ে কঠোর সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছিল। চারপাশের মানুষগুলো তাকে স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে দেয়নি। এই নগর সভ্যতা তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। চারপাশে হাজারো মানুষ তামাশা দেখেছে। কেউ খুনিদের আটকাতে পারেনি অথবা আটকাতে আসেনি। কবি শামসুর রাহমানকে সারাটা জীবন বাঁচতে হয়েছিল সমালোচনা সহ্য করে। শুধু সমালোচনা নয়, তাকে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল বারবার। কবিকে হত্যা করতে তাঁর শ্যামলীর বাড়িতে হামলা হয়েছিল। ভাগ্যটা শামসুর রাহমানের ভালো, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগের হাতে পড়েননি। পড়লে এখন আরও কত কথা শুনতে হতো তার ঠিক নেই। একবার কবিকে প্রশ্ন করেছিলাম, আপনার আপনজন কারা? জবাবে হাসলেন। তারপর বললেন, আপনজন কারা মাঝে মাঝে বুঝি না। তবে বেলাল চৌধুরী, রফিক আজাদ, কায়সুল হক, মনজুরুল ইসলামের কাছে প্রশ্ন করলে কিছু ভালো কথা শুনবে। বাকিদের কথা জানি না। কথা বাড়ালাম না। কবিকে নিয়ে কিছু মানুষ মাঝেমধ্যে ভীষণ নোংরা প্রচারণা চালাত। এক সন্ধ্যায় কবির তল্লাবাগের বাড়িতে গেলাম। দেখলাম তিনি মন খারাপ করে বসে আছেন। সামনে বসা তরুণ কবি মারুফ রায়হান। জোহরা ভাবি চা পাঠালেন। কবির মন খারাপ কেন জানতে চাইলাম। জবাবে মারুফ রায়হান বললেন, এক অসভ্য কবি দাবিদার নোংরা যুবক বাজে কথা লিখেছেন এক পত্রিকায়। এ কারণে কবির মন খারাপ। সারাটা জীবন কুৎসা আর মিথ্যার জবাব দিতে দিতে চলে গেছেন হুমায়ূন আহমেদ।
খ্যাতিমান সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকেও সমসাময়িকরা সহ্য করতে পারতেন না। ভাগ্যটা ভালো তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছিল না। পত্রিকায় একটু রাখঢাক করে লিখতেন পরস্পরকে ইঙ্গিত করে। একবার তিনি একজনের টিপ্পনীর জবাব দিতে গিয়ে লিখেছিলেন, মুুকুল তুই আর ফুটলি না। এই জগতে কেউ কারও ভালোটা সহ্য করতে পারে না। একটা ভালো শার্ট পরে বের হোন দেখবেন চারদিকের চোখগুলোর মাঝে ঈর্ষার অনল। এখানে একদল মানুষ কাজ করে। আরেক দল ঈর্ষার অনলে পুড়ে পুড়ে সারা দিন অন্যের সমালোচনা করে কাটায়। তাদের আর কোনো কাজ নেই। অনেকে কথায় কথায় জ্ঞান দেন, বাণী দেন। নিজের ব্যক্তিজীবনের দীন-দুনিয়ার ঠিক নেই। আর কথায় কথায় পাড়াপড়শি নিয়ে ঘুম হারামের কথা জানান দেন। সুযোগ পেলেই কুৎসা রটান।
সেদিন আরেকজন বললেন, কারও সঙ্গে আত্মীয়তা করতে এখন আর সামাজিকভাবে খোঁজখবরের দরকার নেই। গোয়েন্দা লাগিয়েও খবর নেওয়ার দরকার নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই লোকটির প্রোফাইলে ঢুকলেই হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কতটা হিংসুটে, অসুস্থ, মিথ্যা রটনাকারী, নোংরা মানসিকতা রাখেন তা জানা যাবে ফেসবুকে লেখনী পড়েই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন গুজব আর কুৎসা রটনার বাহন। অন্যের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনায় সবাই ব্যস্ত। এখানে সবাই বিচারক, সবাই আদালত, সবাই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকায়। সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের দরকার নেই। মিডিয়া ট্রায়াল হয়ে যায় মুহূর্তে। একজন একটা মিথ্যা প্রচারণা শুরু করতে পারলেই হলো। বাকিরা যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন মনে করেন না। ‘চিলে কান নিয়েছে’ প্রচারণার মতো ছুটতে থাকেন। কিছুদিন আগে একদল ফেসবুকে প্রচার চালাল নায়ক আলমগীরের মৃত্যু হয়েছে। একজন থেকে আরেকজন কপি করতে থাকলেন। ফেসবুক জমে গেল। পরে নায়ক আলমগীর নিজে, রুনা লায়লা, আঁখি আলমগীর বাধ্য হলেন লিখতে তিনি জীবিত। কোনো সমস্যা নেই। নায়ক ফারুককে নিয়েও এমন হয় মাঝেমধ্যে। এ টি এম শামসুজ্জামানের মারা যাওয়ার গুজব ছড়িয়ে ফেসবুকে বারবার তাঁর জন্য দোয়া প্রার্থনা করা হয়। শোক প্রকাশেরও শেষ ছিল না। বড় অদ্ভুত সবকিছু! সমাজের ভদ্রবেশীরাই ছড়িয়ে দেন নোংরামি। কবি বলেছেন, ‘আমরা সবাই পাপী; আপন পাপের বাটখারা দিয়ে; অন্যের পাপ মাপি!!’ কবির কবিতার আরেকটি লাইন মনে পড়ছে, ‘অন্যের পাপ গনিবার আগে নিজেদের পাপ গোনো!’
লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।