বজ্রপাত ইতিমধ্যে সরকারিভাবে দুর্যোগ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এ প্রাকৃতিক দুর্যোগে একের পর এক মানুষের প্রাণহানি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। চলতি বছরের এপ্রিল ও মে মাসে বজ্রপাতে সারা দেশে অন্তত ১২৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে এপ্রিলে মারা গেছেন ৭ ও মে মাসে ১১৯ জন। সর্বশেষ গত ৫ জুন তিন জেলায় বজ্রপাতে অন্তত ৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। গত বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে সারা দেশে বজ্রপাতে অন্তত ৩৮০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণত মে মাসে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি থাকে। এ বছরের মে মাসেও ব্যাপক প্রাণহানি ঘটেছে। চলতি বছরে নেত্রকোনায় বজ্রপাতে সর্বাধিক সংখ্যক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। ধান কাটার জন্য মে মাসে কৃষকরা মাঠে কাজ করেন। আর মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাতে কৃষকদের অনেকেই মৃত্যুবরণ করেন। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য যে মেঘের সৃষ্টি হচ্ছে তাতে মেঘের ওপর ও নিচের স্তরে যে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হওয়ার কথা অর্থাৎ পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসার যে প্রবণতা তা আগের চেয়ে বেশি। এর কারণ দেশের মানুষ এখন মেটালিক বডির পণ্য বেশি ব্যবহার করছে। আমাদের দেশে বজ্রপাতের সময় নিজেদের রক্ষা করার প্রস্তুতিও মানুষের নেই। আগের চেয়ে উন্মুক্ত স্থানে এখন মানুষ বেশি চলাচল করে। এ সময় তাদের সঙ্গে থাকা মেটালিক বস্তু যেমন মোবাইলের কারণে বজ্রপাতে ক্ষতির আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগ যেহেতু বন্ধ করা সম্ভব নয় তাই এ সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। বাসাবাড়িতে বজ্রপাত নিরোধক অ্যান্টেনা ব্যবহার করা যেতে পারে। বিশ্বে এখন ইউরোপসহ বহু দেশে বজ্রপাত হবে কি না তা আগাম জানার সেন্সর প্রযুক্তি চলে এসেছে। আমাদের দেশেও বজ্রপাতের আগাম সতর্কতা পাওয়া যায় এমন প্রযুক্তি আয়ত্তে আনতে হবে। এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করতে মোবাইল প্রযুক্তির মাধ্যমে সতর্ক বাণী পৌঁছে দেওয়া যেতে পারে। বজ্রপাতের হাত থেকে রক্ষায় দেশজুড়ে তাল জাতীয় গাছ ব্যাপকহারে লাগানোর কথা ভাবা যেতে পারে।