মঙ্গলবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্প সুরক্ষায় উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি

প্রিন্সিপাল এম এইচ খান মঞ্জু

ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্প সুরক্ষায় উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি

করোনাকালে ৩ কোটির বেশি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। আগের দরিদ্রের সঙ্গে নতুন দরিদ্র যোগ করলে দরিদ্রের সংখ্যা কত দাঁড়াবে তা অনুমান করা কঠিন নয়। করোনার কারণে বহু মানুষ চাকরি হারিয়েছে, বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে, বহু মানুষের আয়-রোজগার হ্রাস পেয়েছে এবং বহু মানুষের ছোটখাটো কারবার বন্ধ হয়ে গেছে। তবে করোনার প্রকোপ কমায় কয়েক মাস ধরে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফেরার জোর প্রয়াস চলছে। শিল্পকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য, দোকানপাট, ছোট কারখানা সচল করার চেষ্টা চলছে পুরোদমে। এ ক্ষেত্রে নানারকম সমস্যা-সংকট ও প্রতিবন্ধতা কম নেই। সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে কবে নাগাদ অর্থনীতিতে প্রত্যাশিত গতি ও সুবাতাস ফিরে আসবে তা-ই প্রশ্ন। ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে তেল-গ্যাস ও পণ্যের দাম বাড়ায় আমাদের দেশেও তার বিরূপ প্রভাব দেখা দিয়েছে। দেশে তেল-গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে অনিবার্যভাবেই পরিবহন, উৎপাদনসহ নানা ক্ষেত্রে ব্যয়-বৃদ্ধি ঘটেছে। এ বৃদ্ধির প্রভাব শুধু মানুষের ওপরই নয়, অর্থনীতির ওপর পড়তে শুরু করেছে। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতায় এমনিতেই টান ছিল তা আরও বাড়ছে। পরিবাওে চাহিদামতো পণ্য কেনার সামর্থ্য না থাকায় অধিকাংশেরই কম করে পণ্য কিনতে হচ্ছে, থাকতে হচ্ছে কম খেয়ে বা না খেয়ে। এতে স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে; পুষ্টিহীনতা বাড়ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এদিকে অর্থনীতির সূচকগুলোও ক্রমাবনতিশীল। রপ্তানি ও প্রবাসী আয় কমছে, রাজস্ব আয়ও তাই। আমদানি বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও কমতে শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় উদ্বিগ্ন না হয়ে উপায় নেই। বিনিয়োগে অনেক দিন ধরেই খরা চলছে। দেশি-বিদেশি কোনো বিনিয়োগই বাড়ছে না। বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। যে কোনো মূল্যে চেষ্টা ফলপ্রসূ করে তুলতে হবে। বিনিয়োগ বাড়লে নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে, ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশ ঘটবে, কর্মসংস্থান বাড়বে। বলার অপেক্ষা রাখে না, শিল্পের অবস্থা ভালো নয়। গার্মেন্ট প্রধান শিল্প হলেও ইতিমধ্যে বহু গার্মেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। বস্ত্র, পাট, চামড়া ও অন্যান্য শিল্পের অবস্থাও সুবিধাজনক নয়। নানা সমস্যা-সংকটে এসব শিল্প জর্জরিত। গোটা শিল্প-খাতের লাখ লাখ শ্রমিক-কর্মী এখন বেকার। শিল্পের সমস্যা-সংকটের আশু অবসান কাম্য। আমাদের দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সংখ্যাই বেশি। পণ্য উৎপাদন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অর্থনীতিতে অবদান রাখার ক্ষেত্রে এ দুই শিল্পশ্রেণির ভূমিকা অনেক। জিডিপিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের অবদান ২৫ শতাংশ। দেশের মোট কর্মসংস্থানের ৯০ শতাংশই এ খাতে। কাজেই এ খাতের প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে, উদ্যোক্তারা অন্যত্র চলে গেলে এবং শ্রমিক-কর্মীরা বেকার হয়ে পড়লে জিডিপিতে এর অবদানই কমবে না, কর্মসংস্থানের সম্ভাবনাও হ্রাস পাবে।

করোনাভাইরাসে দেশের অর্থনীতি গভীর সংকটে। লাখ লাখ মানুষ বেকার মহামারীর বিষ নিঃশ্বাসে। কর্মসংস্থানের খাতগুলো সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আনতে সরকার ইতিমধ্যে ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দিয়েছে। তার সুফল অনুভূত হয়েছে অর্থনীতিতে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে করের বোঝা ও জটিলতা কমালে অর্থনীতির ক্ষত উপশমে অবদান রাখবে বলে ব্যাপকভাবে আশা করা হয়। আমার বিশ্বাস, বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থেই ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রস্তাবগুলো সুবিবেচনা করা হবে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সমাজের একটি বড় অংশ চরম হতাশার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানে সংকট থাকলেও সরকারি চাকরিতে এখনো প্রায় সাড়ে ৩ লাখ পদ ফাঁকা। অন্তত সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তিগুলো

করোনার মধ্যে চলমান থাকলেও প্রার্থীদের মনে আশার সঞ্চার হতো। আমরা জানি, বিনিয়োগ বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়বে। সারা বিশ্বেই সরকারি বিনিয়োগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়তে থাকে। আবার সরকারি বিনিয়োগের সঙ্গে কর্মসংস্থানের যোগ রয়েছে। কারখানা বাড়লে মানুষের কাজের সুযোগ বাড়ে। কাজ পেলে আয় বাড়ে, সেই সঙ্গে বাড়ে জীবনযাত্রার মান। বিনিয়োগ, বাজার, কর্মসংস্থান এসব একসূত্রে গাঁথা।

করোনাকালে দেশের মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ ছাড়া বাকি সবার আয় কমেছে। কিন্তু দেশে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে লাগামহীনভাবে। এ বছর বাজারের যে গতিবিধি, ধারণা করা যায় জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বাড়বে। সে ক্ষেত্রে স্বল্প ও সীমিত আয়ের মানুষ আরও সংকটে পড়বে। বহু দেশেই ন্যায্যমূল্যে বা কম দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। বাংলাদেশে সে রকম ব্যবস্থা নেই। সামর্থ্য না থাকায় সরকার কম মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস দিতে না পারুক, অন্তত বাজার তদারকি জোরদার করে ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফাখোরি মানসিকতার লাগাম টানতে পারে। এতে অন্তত স্বল্প আয়ের মানুষের ওপর পণ্যমূল্যের বোঝা কিছুটা হলেও লাঘব হবে।

 

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রিন্সিপাল এম এইচ খান ডিগ্রি কলেজ, গোপালগঞ্জ।

সর্বশেষ খবর