ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়া সরাসরি আগ্রাসন চালাতে পারে এমন আশঙ্কা জোরদার হয়ে উঠেছে। অনানুষ্ঠানিকভাবে ইতোমধ্যে যে আগ্রাসন শুরু হয়ে গেছে তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। ইউক্রেনের ক্রিমিয়া রাশিয়া নিজের কবজায় এনেছে বেশ আগে। দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা যখন তুঙ্গে তখন ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুটি এলাকা ডোনেক্স ও লুহানস্কের বিদ্রোহীরা নিজেদের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। ক্রিমিয়ার মতো এ দুটি এলাকায়ও রুশভাষীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। ইউক্রেন একসময় ছিল রাশিয়ার জার সাম্রাজ্যের অংশ। ১৯১৭ সালের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পর ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয়। গত শতাব্দীর শেষ দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে অন্যান্য সোভিয়েত অঙ্গরাষ্ট্রের মতো ইউক্রেনও স্বাধীনতা ঘোষণা করে। রাশিয়া তা মেনেও নেয়। কিন্তু ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটে যোগদানের উদ্যোগ নেওয়ায় রাশিয়া তাদের উচিত শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের আশঙ্কা ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাবার ফন্দি এঁটেছে রাশিয়া। এ নিয়ে তৃতীয় মহাযুদ্ধের আশঙ্কাও করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সংঘাত এড়ানোর চেষ্টাও ক্রিয়াশীল। ফরাসি প্রেসিডেন্টের মধ্যস্থতায় ইউক্রেন ঘিরে সৃষ্ট উত্তেজনা নিরসনে শীর্ষ সম্মেলনে বসতে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে ইউরোপের নিরাপত্তা এবং কৌশলগত স্থিতিশীলতা নিয়ে ফোনালাপ করলে মার্কিন ও রুশ প্রেসিডেন্ট একটি শীর্ষ সম্মেলনে বসতে রাজি হন। তবে রাশিয়া যদি ইউক্রেনে আক্রমণ করে সে ক্ষেত্রে এমন বৈঠকে বসা অসম্ভব হয়ে উঠবে বলে মনে করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বৈঠকের দিনক্ষণ ঠিক না হলেও এ বিষয়ে কাজ করবেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেন এবং রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। রাশিয়া ইউক্রেন দখল করলে ইউরোপের নিরাপত্তা যে হুমকির মুখে পড়বে সন্দেহ নেই। অন্যদিকে ইউক্রেনের ন্যাটো জোটভুক্তি যে রুশদের কাছে অগ্রহণযোগ্য এটি এক সত্যি। শান্তি চাইলে একদিকে রাশিয়া ও অন্যদিকে ইউক্রেনের মুরব্বি যুক্তরাষ্ট্রকে গোঁফ নামাতে হবে। সংঘাত এড়াবার সেটিই উত্তম পথ।