শুক্রবার, ১১ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

মহিলাদের বিশেষ মুহূর্তের কিছু কথা

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

মহিলাদের বিশেষ মুহূর্তের কিছু কথা

প্রতি মাসে মহিলাদের একটা বিশেষ মুহূর্ত পার হয়। এ সময়টা মহিলাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। যা তাদের মাসিক, পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব হিসেবে পরিচিত। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে তাদের সুস্থতা-অসুস্থতা। আছে পবিত্রতা-অপবিত্রতা ও নামাজ-রোজার জটিল বিষয়। ইসলামের শুরুকাল থেকে অ্যানালগ, ডিজিটাল যুগ পর্যন্ত এ বিষয়ে জিজ্ঞাসার অন্ত নেই। প্রিয় নবীর (সা.) প্রিয় সাহাবিরা এ বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। মহান প্রভু এর সমাধান আল কোরআনে উল্লেখ করেছেন। তিনি ঘোষণা করেন, ‘আর আপনার কাছে ঋতুস্রাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুন, এটা কষ্ট। সুতরাং ঋতুস্রাবকালে স্ত্রীসংগম বর্জন করবে এবং পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রীসংগম করবে না। এরপর তারা যখন উত্তমরূপে পবিত্র হবে তখন তাদের কাছে ঠিক সেভাবে গমন করবে যেভাবে আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকে তাদেরও ভালোবাসেন।’ (সুরা আল বাকারা, আয়াত ২২২)

মহিলাদের পিরিয়ডের ন্যূনতমকাল তিন দিন এবং সর্বোচ্চ ১০ দিন। আর দুই পিরিয়ডের মধ্যবর্তী পবিত্রতার ন্যূনতম সময় ১৫ দিন। এর ব্যতিক্রম হলে ইসলামী শরিয়তের বিধান অনুযায়ী তা সাধারণত অসুস্থতা হিসেবে গণ্য হবে। পিরিয়ডকালে তাদের নামাজ সম্পূর্ণ মাফ। তা পরে আদায় করতে হয় না। এ সময় কোরআন স্পর্শ, তিলাওয়াত ও কাবাঘর তাওয়াফ করা তাদের জন্য নিষিদ্ধ। এ সময় তাদের জন্য রোজা স্থগিত হয়ে যায়। যা পরে পবিত্র অবস্থায় আদায় করে নিতে হয়। পিরিয়ড পরিপূর্ণ সমাপ্ত হলে মহিলার ওপর গোসল করা আবশ্যক। গোসল করে নিয়মিত নামাজ শুরু করতে হবে। মহিলাদের পিরিয়ডে কখনো কখনো বিভিন্ন অনিয়ম হয়। এ পরিসরে তিনটি পর্যায় জানা আবশ্যক। ক. কারও ক্ষেত্রে যদি পিরিয়ডের নির্ধারিত সময়সীমা জানা থাকে আর কোনো কারণে ওই সময়সীমা ১০ দিন অপেক্ষা বৃদ্ধি পায় তাহলে পূর্ব অভ্যস্ত সময়সীমার অতিরিক্ত দিনসমূহের নামাজ-রোজা আদায় করতে হবে। তবে তা ১০ দিন অতিক্রম না হলে পূর্ণ সময় পিরিয়ড হিসেবেই গণ্য হবে। খ. এমন অসুস্থ কোনো মহিলা যদি তার পিরিয়ডের সময়সীমা সঠিকভাবে নির্ণয় করতে না পারে তাহলে সে তার প্রবল ধারণা অনুযায়ী পিরিয়ড ও অসুস্থতার সময় সাব্যস্ত করে নেবে। যদি সে তার ধারণামতে পিরিয়ড বা অসুস্থতা সাব্যস্ত করতে ব্যর্থ হয় এবং বিব্রতবোধ করে এ অবস্থায় বিব্রত সময় অসুস্থতা হিসেবে গণ্য করে প্রতি ওয়াক্তে অজু করে নামাজ এবং ওই সময়ে রোজা আদায় করে যাবে। (আল বাহরুর রায়েক-১/৫২৬)। গ. কোনো মহিলা যদি তার পিরিয়ড জীবনের সূচনাতেই অসুস্থতা লক্ষ্য করে তাহলে সে সূচনা দিন হতে প্রথম ১০ দিন পিরিয়ড এবং পরবর্তী ২০ দিন অসুস্থতা হিসেবে গণ্য করবে। সুস্থতা লাভের আগ পর্যন্ত এভাবেই হিসাব করে নামাজ-রোজা পালন করবে। (ফাতাওয়া শামি-১/৩৬২)। মহিলাদের পিরিয়ডে অনিয়ম থেকে আরও বিভিন্ন অসুস্থতা সৃষ্টি হয়। এমন একটি অসুস্থতা সাদা স্রাব বা লিকোরিয়া হিসেবে পরিচিত। পিরিয়ড-সংশ্লিষ্ট অসুস্থতা ও সাদা স্রাবের কারণে অজু ভেঙে যায়। মাঝেমধ্যে বিরতি হলে বিরতির সময় অজু করে নামাজ আদায় করতে হবে। যদি কারও ক্ষেত্রে তা ধারাবাহিক হয় যে সে এ পরিমাণ সময় পায় না যে সময়ে ফরজ নামাজ আদায় করা সম্ভব হয়, তাহলে শরিয়তের পরিভাষায় সে অসুস্থ বা অক্ষম। ওইসব অসুস্থ ও অক্ষম ব্যক্তি প্রতি ওয়াক্ত নামাজের জন্য অজু করবে। অজুর আগে ময়লা ধুয়ে পরিষ্কার করে নেবে।

ওই অজুর মাধ্যমে পরবর্তী নামাজের ওয়াক্ত আসা পর্যন্ত ফরজ, সুন্নত ও নফল নামাজ আদায় ও কোরআন তিলাওয়াত করতে পারবে। প্রতি ওয়াক্ত নামাজের জন্য এভাবে নতুন করে অজু করতে হবে। সব ধরনের স্রাব অপবিত্র। কাপড়ে লাগলে ওই কাপড়ও নাপাক হবে। উল্লেখ্য, নারীদের পিরিয়ডকাল ও অসুস্থতা সময়ের বিধিবিধানে বহু রকমের ভিন্নতা রয়েছে। অসুস্থতাকালে স্বামী-স্ত্রী মিলন বৈধ আছে। এ সময় রোজা রাখতে হয় এবং উল্লিখিত নিয়মে পবিত্রতা অবলম্বন করে নামাজ আদায় করতে হয়। অসুস্থতার বিভিন্ন রূপ ধারণ করার ফলে নামাজ, রোজা ইত্যাদি বিধিবিধান পালনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়। এতে বিচলিত বা বিব্রত হওয়ার কিছু নেই। নেই চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ। আছে সচেতনতা ও সতর্কতার প্রয়োজন। সঙ্গে যথাযথ চিকিৎসা ও বিজ্ঞজনের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। প্রয়োজন অন্তরে সঠিক সমাধানের আগ্রহ সৃষ্টি করা।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর