বুধবার, ২৩ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

দ্রব্যমূল্য বাড়ানো ও কম দেওয়া কবিরা গুনাহ

মুফতি মুহাম্মদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী

দ্রব্যমূল্য বাড়ানো ও কম দেওয়া কবিরা গুনাহ

মানুষকে ঠকানো ইসলাম ধর্মে অন্যায়। লেনদেন, কেনাকাটায় ওজনে পরিমাপে কিছু মানুষ ক্রেতাকে অহরহ ঠকায়। সঠিকভাবে ওজন দিতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তিনি আকাশকে করেছেন সমুন্নত এবং স্থাপন করেছেন দাঁড়িপাল্লা। যাতে তোমরা সীমা লঙ্ঘন না কর দাঁড়িপাল্লায়। তোমরা সঠিক ওজন কায়েম কর এবং ওজনে কম দিও না।’ (সুরা আর রহমান, আয়াত ৭-৯)। ব্যবসা-বাণিজ্য ও লেনদেনের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে পরিমাপ ওজনে কমবেশি করা বা ঠকানোর মাধ্যমে জীবিকা উপার্জন একটি জঘন্য অপরাধ। মানুষ মাত্রাতিরিক্ত লোভ ও অল্পে তুষ্ট না হওয়ার কারণেই অবৈধ পন্থায় উপার্জনের পেছনে ছোটে। আল কোরআন ও হাদিসে এ ধরনের কাজ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, নিন্দনীয় ও পরকালীন দুর্ভোগের কারণ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘যারা মাপে কম দেয় তাদের জন্য দুর্ভোগ। এরা লোকের কাছ থেকে পূর্ণমাত্রায় মেপে নেয় এবং মানুষকে দেওয়ার সময় কম দেয়। তারা কি চিন্তা করে না যে তারা পুনরুত্থিত হবে সেই মহাদিবসে যেদিন মানুষ দাঁড়াবে বিশ্বজাহানের প্রতিপালকের সামনে।’ (সুরা মুতাফফিফিন, আয়াত ১-৬)।

ব্যবসা একটি পবিত্রতম পেশা। পবিত্রতা ও সততার মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালিত হলে সেখানে অন্যায়-অনিয়ম ঠাঁই পেতে পারে না। ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই ঠকবে না সৎভাবে ব্যবসা করলে। কিন্তু ব্যবসার ক্ষেত্রে সেই সততা ও পবিত্রতার ঘাটতি বর্তমানে ব্যাপক হারে পরিলক্ষিত হচ্ছে। ওজনে বা মাপে কম দেওয়ার ব্যাপারে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘পাঁচটি বস্তু পাঁচটি বস্তুর কারণে হয়ে থাকে- ১. কোনো জাতি চুক্তিভঙ্গ করলে আল্লাহ তাদের ওপর তাদের শত্রুকে বিজয়ী করে দেন। ২. কেউ আল্লাহর নাজিলকৃত বিধানের বাইরে বিধান দিলে তাদের মধ্যে দারিদ্র্য ছড়িয়ে পড়ে। ৩. কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়লে তাদের মধ্যে মহামারি ছড়িয়ে পড়ে। ৪. কেউ মাপে বা ওজনে কম দিলে তাদের জন্য খাদ্যশস্যের উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং দুর্ভিক্ষ তাদের গ্রাস করে। ৫. কেউ জাকাত দেওয়া বন্ধ করলে তাদের থেকে বৃষ্টি বন্ধ করে দেওয়া হয়।’ (সুনানে দায়লামি ও তাফসিরে কুরতুবি)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) যখন বাজারে যেতেন তখন বিক্রেতাদের উদ্দেশে রসুল (সা.)-এর হাদিস শুনিয়ে বলতেন, ‘আল্লাহকে ভয় কর। কেননা মাপে কম দানকারীরা কিয়ামতের দিন দাঁড়িয়ে থাকবে এমন অবস্থায় যে ঘামে তাদের কানের অর্ধেক পর্যন্ত ডুবে যাবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)।

মজুদদারের নোংরা মানসিকতা ও কদর্যপূর্ণ স্বার্থপরতা বিষয়ে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘গুদামজাতকারী কতই না ঘৃণিত মানুষ। আল্লাহতায়ালা দ্রব্যমূল্য কমিয়ে দিলে সে চিন্তায় পড়ে যায়। আর বাড়িয়ে দিলে সে আনন্দিত হয়।’ (শুআবুল ইমান ও মিশকাত)। হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ৪০ দিন খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করে রাখবে, মানুষকে কষ্ট দেবে সে এ সম্পদ দান করে দিলেও তার গুনাহ মাফের জন্য যথেষ্ট হবে না।’ (মিশকাত)। খাদ্যদ্রব্য গুদামজাতকারী সম্পর্কে রসুল (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমদানি করবে সে রিজিকপ্রাপ্ত হবে। আর যে গুদামজাত করবে সে অভিশপ্ত হবে।’ (ইবনে মাজাহ ও সুনানে দারেমি)।

সুতরাং মজুদদারি, ওজনে কম দেওয়া থেকে বাঁচুন, অন্যকেও বাঁচান। মানুষ ঠকানোর গুনাহ থেকে আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।

লেখক : খতিব, মণিপুর বায়তুল আশরাফ (মাইকওয়ালা) জামে মসজিদ, মিরপুর-২, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর