রবিবার, ২৭ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

অপব্যাখ্যাকারীদের থামাতে হবে

আল্লামা মাহ্মূদুল হাসান

ওয়াজ মাহফিলের নামে অবাধে চলে যেমন ইচ্ছা তেমন কর্মকাণ্ড। সভায় লোক জোগানো ও মাইক টেস্ট করার জন্য কালামুল্লাহ পাঠ করা হয়, অথচ একে বেয়াদবি মনে করা হয় না। সব চেয়ে লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, রেডিও-টেলিভিশনের গানগুলোকে হামদ-নাত ও গজলের নামে সভার মঞ্চে পরিবেশন করা হয়। পার্থক্য কেবল এই যে এতে বাদ্যযন্ত্র বাজানো হয় না, গানের সুর ইত্যাদি সব ঠিক থাকে। বাংলা গানের মতো আরবি শব্দের উচ্চারণ বিকৃত করে আরবি গজল পরিবেশন করা হয়। শোনা যাচ্ছে, ঢাকার কোনো মসজিদে নাকি গানের সুরের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, যাতে আল কোরআনকে গানের সুরে তিলাওয়াত করা যায়। আর এসব কিছু হচ্ছে ওলামা-মাশায়েখদের সামনে। আমি এক মসজিদের ভিতর মঞ্চ বানিয়ে আলোকসজ্জা করেও ওয়াজ মাহফিল করতে দেখেছি। আমার আপত্তির কারণে তা বন্ধ করা হলেও আমি চলে আসার পর আবার তা করা হয়েছে। অথচ সেখানে দেশের বড় ধরনের ওলামা-মাশায়েখ উপবিষ্ট ছিলেন।

ইসলাম সঠিক রাজনীতির কেবল অনুমতিই দেয় না; বরং জরুরি মনে করে। কিন্তু গতানুগতিক রাজনৈতিক বক্তব্য, যে বক্তব্যে উসকানিমূলক কথাবার্তা বলা হয়, যাতে শালীনতার বালাই নেই, যাতে একে অন্যের দোষচর্চা করাকেই রাজনীতি মনে করা হয়, জ্বালাময়ী বক্তব্য দিয়ে শ্রোতাদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করা হয় এবং শ্রোতাদের হাতে লাঠি ও অস্ত্র তুলে দিয়ে জ্বালাও-পোড়াও তৎপরতা শুরু করা হয়; বদর, ওহুদ যুদ্ধে যে তলোয়ার কাফিরদের ওপর চালু করা হয়েছিল, তা মুসলমানদের বিরুদ্ধে পরিচালনা করা হয়- আজ ধর্মীয় সভার এই হচ্ছে বৈশিষ্ট্য। ফলে আজ ধর্মীয় সভা শুনে আমলের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয় না। ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের দোহাই দিয়ে নামাজ তরক ও বিজাতীয়দের অনুকরণসহ সবকিছুই বৈধ করে নেওয়া হয়েছে। এই যদি হয় মুসলমানদের অবস্থা তাহলে দীন থাকবে কোথায়? মুসলমানদের ইতর বলা হচ্ছে, উগ্র বলা হচ্ছে, তাতে ক্ষোভ সৃষ্টি হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু যে কারণে ইতর ও উগ্র বলা হয় সে কারণ অবসানের প্রতি লক্ষ্য নেই মোটেই। মুসলমানদের দুরবস্থা, কলঙ্ক, অপমান, লাঞ্ছনা-বঞ্চনার মূল কারণ এখান থেকেই প্রতীয়মান হয়। আজ মুসলমানরা বিধর্মীদের অনুকরণে তৃপ্তিবোধ করে। নগ্নচিত্র, ফটো ও মূর্তি মুসলিম তাহজিব-তামাদ্দুনে হারাম; কিন্তু আজ মুসলমানের শোকেস ও দেয়ালের শোভা হচ্ছে নগ্নচিত্র, ফটো আর মূর্তি। মুসলমানের ঘরবাড়ি থেকে আজান-ইকামত ও তিলাওয়াতের আওয়াজ ভেসে আসে না, ভেসে আসে গান ও বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ। রেডিও-টিভি ও ভিসিআরের আওয়াজে মসজিদে, বাড়িতে কোথাও টেকা যায় না, নামাজ পড়া যায় না, তিলাওয়াতও করা যায় না। যদি বলা হয় দাড়ি রাখুন তাহলে বলে দাড়ির কী প্রয়োজন! যদি বলা হয় সুন্নত মোতাবেক লেবাস গ্রহণ করুন, তাহলে বলে ইসলামে লেবাসের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যদি বলা হয় মাথায় টুপি দিয়ে নামাজ পড়ুন, তাহলে বলে টুপির ব্যাপারে কোনো কথা হাদিসে আছে কি? দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করার হাদিস মুখস্থ রয়েছে। মনের খায়েশ ও পছন্দ মোতাবেক বর্ণিত হাদিস সব কটিই জানা থাকে, আর বাকি হাদিসগুলোকে হাদিসই মনে হয় না। পত্রিকায় দেখলাম, বুখারির হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে নাকি গান-বাদ্য-নাচ-নাট্যানুষ্ঠান জায়েজ করা হয়েছে। বাংলা গান আর আরবি ‘গেনা’ শব্দের অপব্যাখ্যা করে মিলিয়ে দিয়েছে। বাংলায় মদকে শরাব বলে, আরবিতে শরাবকে শরবত বলে। যেহেতু শরবতকে শরাব বলে সেহেতু শরাবও হালাল (!)। এরূপ অপব্যাখ্যাকারীদের পেছনেও একশ্রেণির লোক দৌড়ে বেড়াচ্ছে! তারা তাদের পেছনে কেন দৌড়াচ্ছে তা তাদেরই জিজ্ঞেস করুন!

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর