আবার এলো রহমত, বরকত ও নাজাতের মাস রমজান। প্রতিটি মুসলমানের জীবনে এ এক শ্রেষ্ঠ মাস। সারা বছরের ভুলত্রুটি, পাপ-তাপ-বেদনা সবকিছু থেকে মুক্তির মাস। পরম দয়ালু আল্লাহ আমাদের সব গুনাহ থেকে মুক্ত করুন। যা কখনো চাইনি, যা কখনো মনে আসেনি তাই আজ লিখছি। এ উপমহাদেশে হুজুর মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এক মহিরুহ। তাঁকে অবলম্বন করে কত মানুষ আসমান ছুঁয়েছে, হাওয়ায় ভেসেছে। কিন্তু সেই হুজুর মওলানা ভাসানীর যথাযথ মূল্যায়ন না দেখে বুকের ভিতর বড় বেশি জ্বালা করে, হৃদয় ভেঙে খানখান হয়ে যায়। আমি হুজুর মওলানা ভাসানীর রাজনীতি করিনি কোনো দিন, কিন্তু তাঁকে সম্মান করেছি, ভালোবেসেছি বঙ্গবন্ধুর মতো। বঙ্গবন্ধু ছিলেন আমার প্রেম, আমার ভালোবাসা। তিনি ছিলেন আমার হৃদয়ে, আমার অন্তরাত্মায়। হয়তো হুজুর মওলানা ভাসানী তেমন ছিলেন না। কিন্তু একজন মানুষ তাঁর সব অস্তিত্ব দিয়ে যেভাবে কাউকে সম্মান করে, ভালোবাসে আমার ভালোবাসাও তেমনই ছিল। হুজুর আর বঙ্গবন্ধু কেউ কোনো দিন জিজ্ঞেস করেননি, কাদের তুই কার? স্বাধীনতার পর পুরো সময়টাই হুজুর আর বঙ্গবন্ধুর দূতের মতো কাজ করেছি। হুজুর মওলানা ভাসানী আমাকে নিয়ে কত রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা, কত কলাকৌশল করেছেন যার কোনো হিসাব নিকাশ নেই। কিন্তু আমাকে বড় বেশি ভালোবাসতেন, বিশ্বাস করতেন। আমিও কখনো তাঁর বিশ্বাসের অমর্যাদা করিনি। হুজুর জন্মেছিলেন সিরাজগঞ্জের ধানগড়ায়। অল্প বয়সে বাবা-মা হারিয়েছিলেন। তাঁর ডাকনাম ছিল চেগা মিয়া। কীভাবে যেন টাঙ্গাইল এসেছিলেন। একসময় তিনি মুসলিম জগতের এক শ্রেষ্ঠ মানব আধ্যাত্মিক নেতা শাহ নাসির উদ্দিন বোগদাদির শিষ্য হয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে ইল্লি-দিল্লি-ইরান-তুরান-মক্কা-মদিনা-বাগদাদ দুনিয়ার বহু স্থানে ঘুরেছেন। তিনি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশেরও শিষ্য ছিলেন। দেশের সাধারণ কৃষক প্রজার জন্য তিনি প্রাণপাত করেছেন আজীবন। টাঙ্গাইলের সন্তোষের জমিদাররা তাঁকে মেরে কেটে বস্তাবন্দী করে ফেলে দিয়েছিল। ব্রিটিশ সরকার তাঁকে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা থেকে বহিষ্কার করেছিল। কয়েক হাজার দরিদ্র কৃষক মুরিদ নিয়ে আসামের বরপেটায় ঘাঁটি গেড়েছিলেন। বাঘ-ভাল্লুক-হাতির সঙ্গে লড়াই করে বরপেটাকে আবাদ করেছিলেন। স্কুল-কলেজ-মাদরাসা-চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠায় কোনো কিছু বাদ পড়েনি। ধুবড়ির পাশে আসামের ভাসানচরে সে যুগে এক বিস্ময়কর ব্রিটিশবিরোধী সম্মেলনে তিনি ‘ভাসানী’ উপাধি পেয়েছিলেন। আমার আগে ধারণা ছিল ভাসানীর নামানুসারে ভাসানচর হয়েছে। বাস্তবে ভাসানচরের সম্মেলনের কারণে তিনি সারা উপমহাদেশে ‘ভাসানী’ খেতাবে ভূষিত হয়েছেন। মুসলিম লীগের জন্ম হয়েছিল ঢাকার নবাব পরিবারে। যে মুসলিম লীগ পাকিস্তান বানিয়েছিল হুজুর মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সে মুসলিম লীগের একসময় আসামের সভাপতি ছিলেন। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ফখরুদ্দিন আলী আহমেদ তাঁর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ’৪৭ সালে মানকারচরে তিনি এক ঐতিহাসিক কৃষক সম্মেলনের আহ্বান করেছিলেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের কয়েক মাস আগে পাকিস্তান-ভারত স্বাধীন হওয়ায় সে সম্মেলন আর হয়নি। তিনি আসাম থেকে টাঙ্গাইল ফিরে এলে টাঙ্গাইলের দরিদ্র মানুষ এক মহা আশ্রয় পেয়েছিল। হুজুর কোথাও চুপচাপ থাকতে পারতেন না। কৃষক প্রজাদের জন্য দিনরাত ছুটতেন। হুজুর মওলানা ভাসানী ওলি-এ-কামিল শাহ মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন বোগদাদির সঙ্গে চলার পথে বগুড়ার পাঁচবিবির জমিদার শামসুদ্দিন আহমদ চৌধুরীর মেয়ে আলেমা খাতুনকে প্রথমে আমপাড়া পড়াতেন এবং জমিদারি রক্ষায় একসময় লাঠিয়াল সরদারও ছিলেন। ভাসানীর প্রতি জমিদারের মুগ্ধতা ১৮-২০ বছর বয়সের ব্যবধানকেও হার মানিয়েছিল। তিনি তাঁর কন্যা আলেমা খাতুনের সঙ্গে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর বিয়ে দিয়ে কয়েক হাজার একর জমি তাঁদের দিয়ে দিয়েছিলেন। যা হুজুর মওলানা ভাসানী পাঁচবিবি কলেজকে অনেকটাই দিয়ে দিয়েছিলেন। যা নিয়ে আলেমা ভাসানী কোনো কথা বলেননি। হুজুর মওলানা ভাসানী পরপর তিনটি বিয়ে করেছিলেন- আলেমা ভাসানী, টাঙ্গাইলের সন্তোষে আকলিমা ভাসানী ও বগুড়ার চন্দনবাইসার কাঞ্চনপুরে তাঁর ঘনিষ্ঠ শিষ্য আবুল কাশেম সরকারের মেয়ে হামিদা খানমকে। বগুড়ার স্ত্রীর বাবার বয়স ছিল হুজুর মওলানা ভাসানীর চাইতে ১৪ বছর কম। আলেমা ভাসানী ছাড়া আরও দুটি বিয়ে তিনি শুধু রাজনৈতিক কারণে করেছিলেন। বগুড়ার চন্দনবাইসা কাঞ্চনপুর বিয়ে ছিল একটি মসজিদ রক্ষা করাকে কেন্দ্র করে। হুজুর মওলানা ভাসানী টাঙ্গাইল দক্ষিণের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। নির্বাচনী হিসাব ও অন্যান্য গরমিল দেখিয়ে মুসলিম লীগ সরকার তাঁর নির্বাচন বাতিল করে দেয়। হুজুর তখন আসামের ধুবড়ি কারাগারে। পরে যেখানে ১৫০ মোগলটুলী গ্রুপের মুসলিম লীগের প্রার্থী হন জননেতা শামসুল হক। পাকিস্তান হওয়ার পরপরই টাঙ্গাইল দক্ষিণ নির্বাচনে মুসলিম লীগের প্রতাপশালী প্রার্থী পন্নীর মারাত্মক পরাজয় হয়। অর্থবিত্তের দিক থেকে বিচার করলে দরিদ্র শামসুল হকের চাইতে খুররম খান পন্নী ছিলেন অনেক গুণ এগিয়ে।
যে খুররম খান পন্নীর পূর্বপুরুষ ওয়াজেদ আলী খান পন্নী শিক্ষা-দীক্ষা, ব্রিটিশবিরোধী রাজনীতিতে ছিলেন অগ্রণী পুরুষ তাঁর নাতি জনতার কাছে হাওয়ায় উড়ে গিয়েছিলেন। সে সময় দক্ষিণ টাঙ্গাইলে নির্বাচনের একটি ঘটনা বলার লোভ সামলাতে পারছি না। ঘটনাটি শুনেছিলাম ’৫৪ সালে নির্বাচনের বিজয়ী যুক্তফ্রন্টের পার্লামেন্টারি বোর্ডের সেক্রেটারি টাঙ্গাইলের স্বনামধন্য আইনজীবী খোদাবক্স মোক্তারের কাছে। তখন নির্বাচনী সভা হতো সব দলের সব প্রার্থীকে একসঙ্গে নিয়ে। সব দলের একই সমান বক্তারা বক্তৃতা করতেন। সে নির্বাচনের প্রার্থী ছিলেন দুজন। একজন জননেতা শামসুল হক, অন্যজন করটিয়া জমিদার খুররম খান পন্নী। বাসাইল থানার হাবলা ইউনিয়নের নাটিয়াপাড়া সভায় লোক হয়েছিল প্রচুর। একবার মুসলিম লীগের পক্ষে একজন বলছেন, আবার ১৫০ মুসলিম লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে আর একজন। এক পর্যায়ে খুররম খান পন্নীর পক্ষে বক্তৃতা করতে আহ্বান জানানো হয় প্রবীণ রাজনীতিবিদ জাঙ্গালিয়ার আবু খাঁকে। খুররম খান পন্নীর পক্ষে আবু খাঁকে দাঁড়াতে দেখেই লোকজন উশখুশ করতে থাকে। কারণ আবু খাঁ প্রার্থী হয়েছিলেন। টাকা খেয়ে খুররম খান পন্নীর পক্ষে তাঁর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। ভীষণ জ্ঞানী মানুষ আবু খাঁ। জনতার উশখুশ ও একথা -ওকথা শুনে গর্জে ওঠেন, ‘থামেন মিয়া সাহেবরা। ব্রিটিশের কাছ থেকে সংগ্রাম করে পাকিস্তান এনেছি। আমি এমনি এমনি প্রার্থিতা পদ খুররম খান পন্নীর পক্ষে প্রত্যাহার করি নাই। খুররম খান পন্নী আমাকে ৬ হাজার টাকা দিয়েছেন। সে টাকার ভারে বইসা পড়ছি। যা আমি তিনটি স্কুলে দিয়ে দিয়েছি। খুররম খান পন্নীর হারামের টাকা আমি ছুঁয়েও দেখি নাই। আমি ৬ হাজার টাকা পেয়ে বসে পড়েছি। আপনাগোরে প্রত্যেককে যদি পন্নী ৬ হাজার করে টাকা দেন তাইলে আপনারা পন্নীকে ভোট দিয়েন। আর না দিলে আপনাদের ভোটটা গরিব শামসুল হককেই দিবেন।’ সারা মাঠ করতালিতে ফেটে পড়েছিল। সে নির্বাচনে খুররম খান পন্নীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। সে নির্বাচনে জমিদারের পক্ষে ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন, মন্ত্রী, আমলা, শিল্পপতিরা আর শামসুল হকের পক্ষে ছিলেন বদিউজ্জামান খান, মির্জা তোফাজ্জল হোসেন মুকুল, কামরুদ্দীন আহমদ, শওকত আলী, আজিজ আহমদ, নাসিম ওসমানের বাবা শামসুদ্দোহা, মুহম্মদ আলমাস, মুহাম্মদ আউয়াল, হজরত আলী, নুরুল আমীন সরকার। নির্বাচনের সময় মওলানা ভাসানী ধুবড়ি জেলে বন্দি থাকলেও মুক্তি পেয়ে পরে টাঙ্গাইল চলে আসেন। শুরু হয় সংগ্রাম আর সংগ্রাম। ’৪৯ সালে টাঙ্গাইল দক্ষিণের উপনির্বাচনের পর ঢাকার রোজ গার্ডেনে শামসুল হককে কেন্দ্র করে আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম হয়। তারই পথ ধরে আজকের বাংলাদেশ। সেই আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি ছিলেন হুজুর মওলানা ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক জননেতা শামসুল হক, যুগ্মসম্পাদক ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। এই হলো ইতিহাস। ইতিহাসের আরও ডালপালা আছে। বঙ্গবন্ধুর প্রধান নেতা নিঃসন্দেহে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বঙ্গবন্ধুকে সন্তানের মতো ভালোবাসতেন। ১২ হাজার টাকা দিয়ে ধানমন্ডির ৩২-এর জায়গাটি কিনে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ’৪৯ থেকে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু পর্যন্ত অনেকাংশে বঙ্গবন্ধুর প্রধান নেতা ছিলেন হুজুর মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। বিশেষ করে ’৬২-এর পর প্রতিটি কাজে বঙ্গবন্ধুকে হুজুর মওলানা ভাসানী অন্তর দিয়ে সাহায্য করেছেন। হুজুর মওলানা ভাসানী না থাকলে আগরতলা মামলা থেকে আমরা বঙ্গবন্ধুকে বাঁচাতে পারতাম না। জননেতা তোফায়েল আহমেদ ’৬৯-এর গণআন্দোলনের মুকুটহীন মহানায়ক হতেন না। আমি মুক্তিযোদ্ধা বাঘা সিদ্দিকী হতাম না, বঙ্গবীর হতাম না, সরকারপ্রদত্ত বীরউত্তম পেতাম না। এসব কিছুর পেছনে হুজুর মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ব্যাপক অবদান ছিল। হুজুরকে অস্বীকার করা, তাঁর পরিবার-পরিজন-আত্মীয়স্বজনকে অস্বীকার করা বাংলাদেশকেই অস্বীকার করার শামিল। জনতার অন্তরাত্মাকে অপমানিত করা আর হুজুরের পরিবার-পরিজনকে অস্বীকার করা একই কথা। কারণ তিনি ছিলেন সাধারণ বাঙালির একেবারেই আপনজন।
শরীরটা বেশি ভালো ছিল না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের কেবিনে ভর্তি ছিলাম। হঠাৎই ফোন আসে। হাসপাতালে খুব একটা ফোন ধরি না, সহকর্মীরা ধরেন। ফোনটা আমার কাছেই ছিল। ফরিদকে দিয়ে বলেছিলাম, যে-ই ফোন করুক ভালোভাবে কথা বলার চেষ্টা করবে। ফরিদের সঙ্গে মনোয়ারার অনেকক্ষণ কথা হয়। ফোন ছেড়েই ফরিদ বলে, ‘হুজুর মওলানা ভাসানী সাহেবের মেয়ে’। আমি চমকে উঠি। জিজ্ঞেস করি, কী বললেন? ‘বললেন তার ছেলে চৌধুরী মাহমুদুল বারী মাশরুম রংপুর মেডিকেলে ভর্তি। দেখাশোনার লোক নেই। হাতে টাকাপয়সা নেই।’ খবরটা শুনে বুকটা কেমন যেন নাড়া দিয়ে উঠল। হায় হায়! হুজুর মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর পরিবার-পরিজনেরই যদি এই দশা হয় তাহলে আমাদের কী হবে! আমি মারা গেলে, বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী মারা গেলে, ছোট ভাই-বোনেরা মারা গেলে আমাদের সন্তানরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। শরীর-মন দুই-ই এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। ফরিদ বলেছিল, ‘১০ হাজার টাকা চেয়েছেন’। তখনই ফোন করতে বলি। আমি ফোন ধরতেই মনোয়ারা বলল, ‘ভাই, আমরা বড় বিপদে আছি। আমাদের কেউ দেখার নেই।’ আমি বলেছিলাম, তুমি নাকি ১০ হাজার টাকা চেয়েছ? বলল, ‘১০ হাজার না ভাই, আমি ৫০ হাজারের কথা বলেছিলাম।’ আমার মনে হলো ফরিদ ৫০ হাজারকে ১০ হাজার শুনেছে। আমার শরীর থরথর করে কাঁপছিল, মনের ভিতর উথালপাথাল ঢেউ উঠেছিল। আমাদের বাসাইলের বারকাঠি বিলে একসময় বিশাল বিশাল ঢেউ উঠত। ঢেউয়ের জন্য নৌকা চালানো যেত না। আমার ভিতরে তার চাইতেও প্রবল ঢেউ উথালপাথাল করছিল। হায় হায়, আমরা কোথায়? ভারতে কি মহাত্মা গান্ধীর পরিবার না খেয়ে থাকে, চিকিৎসা পায় না? তা তো নয়। তাহলে আমাদের দেশে এমন কেন হবে। সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমার নিজের থাকুক আর না থাকুক মনোয়ারার জন্য ৫০ হাজারই পাঠাব। এক বাচাল, তার কাজের জন্য বারবার আসত। আমার লোকজনের জন্য হাজার হাজার লাখ টাকা খরচ করত। তাকে ফোন করেছিলাম। ফোনে পাওয়া যায়নি। ফোন করেছিলাম আমার ছেলে মো. ফেরদৌস ইসলামকে। সে সময় আমি অধ্যাপক মিসকাতের হাতে হৃদযন্ত্রের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ছিলাম। তখন ফেরদৌসের ফোন,- বড় আব্বু, কী হয়েছে?
- কিছু না। টাকা আছে?
- আছে।
- ১০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দে।
তারপর ফোন করেছিলাম নারায়ণগঞ্জে আমার প্রিয় আবুল হোসেনের ছোট ভাই বিরাট জলযান ব্যবসায়ী মোস্তফাকে।
- এই মোস্তফা, তোমার কাছে টাকা আছে?
- কেন থাকবে না দাদা। কোটি টাকার ব্যবসা করি।
- এক্ষুনি ১০ হাজার টাকা পাঠাও আমি কোনো রোগীকে দেব।
সে একটু পরই টাকা পাঠিয়ে দেয়। ভাবছিলাম আরও কয়েকজনকে বলব। ভূঞাপুরের আবদুল আলীম তালুকদার, জিয়াউল হক ও ক্যাপ্টেন মোতাহার আসে। আলীম, জিয়া ও ক্যাপ্টেন মোতাহার সেই ছাত্রলীগের সময় থেকে আমার ছায়াসঙ্গী। আলীম ছিল ভূঞাপুর ছাত্রলীগের সভাপতি। বলেছিলাম, হুজুর মওলানা ভাসানীর নাতি রংপুর মেডিকেলে ভর্তি। তার চিকিৎসার জন্য টাকা পাঠাব। আলীম ১০ হাজার, মোতাহার ১ হাজার ও জিয়াউল হক ২ হাজারের জায়গায় ৫ হাজার পাঠিয়েছে। এ পর্যন্ত ২০-২৫ হাজার টাকা পাঠিয়েছি। মনোয়ারাকে ৫০ হাজারই পাঠাব। দরকার হলে আরও বেশি পাঠাব। আমার হাতে টাকাপয়সা নেই। কিন্তু জমিজমা, ঘরবাড়ি আছে। প্রয়োজন হলে সেগুলো বিক্রি করে পাঠাব। বড় আঘাত পেয়েছি হুজুরের ছেলেমেয়ে-নাতিপুতিদের এ করুণ অসহায় অবস্থা দেখে। রংপুর মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপালকে ব্যাপারটা বলেছিলাম, যত্ন নিতে বলেছিলাম। গত পরশু রবিবার হাসপাতাল থেকে ফোন করে তাঁকে পাইনি। ক্যাবিনেট সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামকে বলেছিলাম। তিনি বলেছেন, ‘আমি কথা বলেছি, ডিজি হেলথকে বলেছি।’ আমিও ডিজি হেলথের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তাঁর স্বতঃস্ফূর্ততা দেখে খুবই ভালো লেগেছে। তবে হুজুর মওলানা ভাসানীর অসহায় মেয়ের ঘরের নাতির কতটা কী উপকার হয়েছে জানি না। শেষে হয়তো প্রিয় বোনকে বলতে হবে, তার কাছেই যেতে হবে। এমন অন্যায় অবহেলা পরম করুণাময় আল্লাহও সহ্য করবেন না।
অনেকেই হাসপাতালে দেখতে এসেছেন। তাদের নিয়ে পরে লিখব। নঈম নিজাম এসেছিল। তাকে বড় ভালো লেগেছে। আমাকে নিয়ে তার কলামে দুই কলম লিখেছে। অসাধারণ সে লেখা। গত পরশু ডাক্তার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। নড়াচড়া আর ঘোরাফেরা একেবারে বন্ধ। সেলাই কাটতে যেতে হবে আগামী সপ্তাহ। পাঠক দোয়া করবেন, যতক্ষণ প্রাণ আছে ততক্ষণ যেন কোনো মিথ্যার সঙ্গে আপস করতে না হয়, জীবনের ঝুঁকি নিয়েও সত্যকে বয়ে বেড়াতে পারি।
লেখক : রাজনীতিক।
www.ksjleague.com