দেশে সামাজিক অপরাধ যেভাবে বাড়ছে তাতে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। করোনার দুই বছরে দুনিয়ার অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবিকায় গভীর সংকট আঘাত হেনেছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী বাদে দেশের সব অংশের মানুষই সংকটে। এ সংকট সামাজিক অপরাধে ইন্ধন জোগাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আয় ও ক্রয়ক্ষমতার সংকুচিত অবস্থা স্বল্প আয়ের মানুষের মানসিক সুস্থতা কেড়ে নিচ্ছে। আয় ও ব্যয়ের ভারসাম্য আনতে গিয়ে মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। দেশে একদিকে যেমন অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে, অন্যদিকে অর্থনৈতিক প্রান্তিকতাও বাড়ছে। মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ তুলনামূলক বেশি খারাপ অবস্থায়। করোনা মহামারিতে মানুষ নিজের যা সঞ্চয় ছিল তা-ও শেষ করে ফেলেছে। ফলে সোশ্যাল ডিজঅর্গানাইজেশন প্রতিটি মানুষের মধ্যেই কাজ করছে। একটু ভালোভাবে বাঁচতে চেষ্টা করলেই তাকে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হতে প্রলুব্ধ করছে। আত্মঘাতী প্রবণতাও জেঁকে বসছে একই কারণে। মানুষ বাঁচে একটি আশা, উদ্দেশ্য ও ভবিষ্যৎ নিয়ে। যখন মানুষ দেখে তার বাঁচার আর কোনো পথ নেই তখন নিজেকে শেষ করে দেওয়ার কথা ভাবে। সামাজিক অপরাধগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক চাপের সম্পর্ক রয়েছে। যে কারণে আত্মহত্যার বিষয়টিকে সামাজিক প্রপঞ্চ হিসেবে দেখা হয়। এর সঙ্গে সমাজে বিরাজমান সামাজিক-অর্থনৈতিক সংস্কৃতিও জড়িত। সামাজিক অপরাধের যে ঘটনাগুলো এখন ঘটছে তা বিদ্যমান সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থাকেই নির্দেশ করে। দেশের মানুষ যে সত্যিকার অর্থে খারাপ সময় অতিক্রম করছে তার প্রমাণ হলো সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধি। করোনাকালে লাখ লাখ মানুষ ঋণগ্রস্ত হয়েছে। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন ভোজ্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের বাজারে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। মানুষ মাত্রাতিরিক্ত বেশি দামে পণ্য কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। স্ত্রী-সন্তান হত্যা করে নিজেও বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যার পথ। সমস্যাটা শুধু আমাদের দেশে নয়, এ মুহূর্তে এটি বৈশ্বিক সংকট। তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশ ভালো থাকলেও আত্মপ্রসাদে না ভুগে সংকট মোচনে যত্নবান হতে হবে। অর্থনীতির চাকা আরও সচল করতে হবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে জরুরিভাবে।